কালীগঙ্গা ডেকেছিল ।। সন্তোষ কুমার শীল

কালীগঙ্গা

দেখতে দেখতে কালীগঙ্গার বুকের মধু উথলে ওঠে। ক’দিন যাবত থেকে থেকে দমকা বাতাস বইছিল। সকাল থেকে বৃষ্টির সাথে মিলে তা ঝোড়ো হাওয়া হয়ে বইতে শুরু করে। আর আশ্বিনের জড়সড় কালিগঙ্গা হঠাৎ ফুলে ফেঁপে ওঠে। সাগর থেকে বয়ে আনা বিপুল জলরাশি দু’কুল ছাপিয়ে নাচতে নাচতে জনপদের দিকে ছুটতে থাকে। হারাধন সারাদিন তার ঝুপড়িতে বসে ক্ষণে ক্ষণে কালীগঙ্গার রূপ পরিবর্তন দেখেছে আর নানা স্মৃতির জাবর কেটেছে। দিনটা তার ভাগ্যবিড়ম্বিত জীবনের মত একটা দুর্দিন। তখনো সাঁঝের আঁধার নামেনি। শেষ বেলায় এক পশ্লা বৃষ্টি হয়ে আকাশ কিছুক্ষণের জন্য পরিস্কার হয়ে উঠেছিল। একখানা ইঞ্জিনচালিত ছোট্ট…

মরা নদীর গল্প ।। অনিন্দ্য আাসিফ

আাসিফ

সাপে তার ভয় ছিল না কখনও। এখনও নাই। লেজ ধরে মাথার উপর চড়কির মতো ঘুরিয়ে প্রথমে হঠাৎ শূন্যে ছুঁড়ে মারা, তারপর অদৃশ্য করে দেওয়া ছিল তার বাম হাতের খেলা। সামুদ্রিক জেলেদের মতো। জালে-পড়া বিষাক্ত সাপ খেলাচ্ছলে ছুঁড়ে ফেলে তারা। কখনও কখনও জানেই না, কী ভয়ানক খেলা অনায়াসে খেলে ফেলল। কিন্তু এটা সাপ না। শুকনো কচুরিপানায় যে শব্দ, সেটা ইঁদুর হতে পারে। উৎকট একটা গন্ধে এবার মনে হয়, এটা আসলে একটা চিকা। বয়স তার দৃষ্টি আর শ্রবণশক্তির কিছুটা হরণ করেছে, কিন্তু অনুপাতে কমই। তার সামনে – অদূরে কাঁচা কচুরিপানা আর নদীর…

গল্প : পদ্মার সাথে বিনিদ্র বাসর

গল্প

উচ্চ মাধ্যমিক পেরিয়ে স্নাতকের করিডোরে পা রাখলো অমিত। স্কুল-কলেজের সেরা ছাত্র সে। এরইমধ্যে প্রাচ্যের একটি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার জুনিয়র অফিসার হিসেবে চাকরির দরখাস্ত করেছিল। কলমের জোরে নিয়োগপত্র ও দ্রুত চলে আসে। যৌথ পরিবারের সবাই খুশি। এতো ভাল চাকুরী সহজে মিলে না। অমিত নিয়োগপ্রাপ্ত হয় ধান নদী খাল এই তিনে বরিশাল জেলায়। ২০০৩ সালে তখন বরিশাল জেলা ছিলো। ছামান গোছগাছ করে নিয়োগপত্র সংঙ্গে করে নরসুন্দাপাড়ের অমিত পাড়ি দিলো ধানসিঁড়ির উদ্দেশ্যে। ঢাকার সদরঘাট থেকে বুড়িগঙ্গা হয়ে পদ্মার উপর দিয়ে সারারাত লঞ্চে বরিশাল। নভেম্বরের মাঝামাঝি শীতল পদ্মার বুকে পারাবত-১ নামক লঞ্চটির ছুটে চলা…

রাজেশ ধর এর গল্প- “চুপিকথা”

রাজেশ ধর ।। এখানে একটা নদী আছে, নাম চুপি।  চুপিতে এখনো জোয়ারভাটা খেলে। জোয়ারভাটা তো নদীতে খেলবেই। কিন্তু মল্লিকদাদু…আমাকে দেখলেই ডাকে। তারপর বলে, “ কীরে মধুর নাতি, দাদু কেমন আছে? নদীতে যেতে পারে এখনো মাছটাছ ধরতে?  ছোটবেলায় নদীতে, বিলে  ডোঙা নিয়ে একসঙ্গে কত মাছ ধরেছি…” মল্লিকদাদু নদীর দিকে তাকিয়ে থাকে, আমিও তাকাই চুপির দিকে। হয়তো সকালের মেঘলা আকাশের রঙে চুপিকে তখন সবজে দেখাচ্ছে, ভাটির টানে  কচুরিপানাগুলো ফিরে যাচ্ছে তাদের পুরোনো জায়গায় যেখান থেকে আবার জোয়ারের টানে তারা ফিরে আসবে। নয়তো বিকেলের লাল আলো নিভে যাওয়া ছাই ছাই আকাশ আর একটু হলেই  নেমে আসবে চুপির বুকে। মল্লিকদাদু সকাল-বিকেল নদীর ঘাটে আসে। কলকাতার কোন বড় কলেজে নাকি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূগোল পড়াত মল্লিকদাদু। আমাকে প্রায়ই…