স্মৃতির লোহালিয়ায় আজও ভাসে মন ।। মো.ইউসুফ আলী

স্মৃতির

নদী বিধৌত জেলা পটুয়াখালীতে আমার জন্ম হলেও আমাদের বাড়ির আশেপাশে কোনো নদী নেই। তবুও মনের দিক থেকে নদী ছিলো আমার অসম্ভব পছন্দের। শৈশব-কৈশোরে নদীকে ঘিরে অনেক স্বপ্নও ছিলো আমার। কিন্তু শৈশব-কৈশোরের সব স্বপ্নকী সবার পুরণ হয় ? সে যা-ই হোক অন্যদের কথা না-ইবা টানলাম। আমার সে সব স্বপ্ন আজও অধরাই পরে রইলো। তবে খাল-বিল, নদী কিংবা জল ও মাছের প্রতি অসম্ভব রকমের টান আজও আমার রয়েছে। কিন্তু কি আর করার শহরে বসবাস। আচ্ছা সেই শৈশবেই আবার ফিরে যাওয়া যাক। ঘুরে আসি কতক্ষণ সেই ছেলেবেলার কথকতা নিয়ে। যা বলছিলাম যে আমাদের…

সে, আমি ও আত্রেয়ী ।। সুদর্শন ব্রহ্মচারী

আত্রেয়ী

নদীটা চুপসে গেছে। রতন হালদার মন খারাপ করে বাউলার ভেক ধরেছে। জাল বুনতে বুনতে সে গুনগুন করে। হাঁসগুলো দল বেঁধে যেতে যেতে হঠাৎ ছড়িয়ে পড়ে। দু’এক জোড়া উল্টো দিকে মাঝনদিতে ছুটে যায়।নীল রঙের মাছরাঙা উড়ে এসে ছোঁ মেরেই পালায়।পানকৌড়ি ডূব মেরে সাঁতরে ছুটে পালায়।নিরিবিলিতে হংসমিথুন দেখতে দেখতে বাউলা রতন গান ধরে, “জ্বলে পুড়ে মরল রাধা যৌবন জ্বালায় যখন ডাকল বাঁশি তখন রাধা যাবে যমুনায়…।” প্রেমপূজারী বাউলা একা একা দেহতত্বের পাঠ নেয়।জল চিকচিক করে। নৌকায় বাঁধা বাঁশের মাথায় সাদা সাদা মাছরাঙা চড়ুই পাখির মতো প্রেম করে উড়ে যায়। বাঁশির সুরে নদী…

নদী একটাই ।। রাজেশ ধর

রাজেশ

‘নদী’…কলকল, কলকল… ঢেউতোলা এই শব্দটা প্রথম কবে শুনেছিলাম ? কবে প্রথম ‘নদী’র ডাকে  বুকের রক্ত ছলকে উঠেছিল? প্রথমবার কবে জেনেছিলাম নদী আসলে জলের ধারা…সে জল শীতল, মিষ্টি আবার কখনও নোনা পানি!  সেদিন কি জেগেছিলাম? নাকি ছিলাম ঘুমিয়ে…স্বপ্নের মধ্যে? দুই কুল…দুপারকে বেঁধে রাখতে রাখতে এক নিমেষেই নদী… সব গিলে খেয়ে নিতে পারে!  নির্বিচারে মুছে যেতে পারে– ডাঙা, ফসল, গাছপালা,… সাতমহলা কীর্তির অহংকার। নদী নাকি সে নিয়তি? তারই বা জ্ঞান হল কবে? জানি না…বলতে পারব না। দুই.  জন্ম থেকে প্রায় বছর তিরিশ পর্যন্ত এক বিশাল ঘিঞ্জি শহরে বাস আমার। সে শহরের পশ্চিম…

কালনির স্নিগ্ধতায় আমার ছেলেবেলা ।। আলম মাহবুব

কালনির

কালনি! এই কালনি নামের সাথে মিশে আছে হাজার বছরের ইতিকথা। আমি বলছিলাম কিশোরগঞ্জ জেলার হাওর বেষ্টিত অষ্টগ্রামের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া মেঘনার শাখা কালনি নদীর কথা। আবহমান গ্রামবাংলার নদীর আত্মপ্রকাশে চিরচেনা এই ভাটির জনপদের কালনি নদীর তীরেই গড়ে উঠেছে বহু জনপদ, আছে অনেক রত্নগল্প। যা আজ কিছুটা তুলে ধরতে চেষ্টা করছি। কিশোরগঞ্জের সীমান্ত ঘেঁষে থাকা এই নদীটি কোন একসময় খরস্রোতা নব যৌবনায় ভরপুর ছিলো। বিস্তীর্ণ হাওরের বুকের প্রশস্ত সবুজে কৃষকের ক্লান্তি, হতাশার একমাত্র অবলম্বন এই কালনি। যার উৎপত্তি কিশোরগঞ্জ জেলা ও বি- বাড়িয়া জেলার সীমান্ত নির্ধারণকারী মেঘনার শেষ ভাগ হতে…

নদীর নাম মুজনাই ।। শৌভিক রায়

মুজনাই

নদী মানেই প্রবাহ। আর প্রবাহ মানে জীবন। তাই নদী বাদে জীবনকথা সম্পূর্ণ হতে পারে না। আবার, জীবনসঙ্গীত গায় কিন্তু তথাকথিত ব্রাত্যজনেরা। আবহমানকাল ধরে তারাই সচল রেখেছে জীবনের জয়যাত্রা। ঠিক একইভাবে, নামীদামী বৃহৎ নদ-নদীর পাশাপাশি, ছোট্ট ছোট্ট নদীরা ধরে রেখেছে সভ্যতার মূল চালিকাশক্তিকে। পশ্চিমবঙ্গের উত্তরদিকে,  জানা-অজানা অজস্র নদীর রুদ্ধকথা সেই শক্তিকেই বিবৃত করছে। ভুটান পাহাড়ের দক্ষিণ বনাঞ্চলে আট হাজার উচ্চতায় জন্ম নেওয়া ‘রঙ্গোরি’ নামের নদীটিও ঠিক এমনই। তবে উৎসমুখের নামে নয়, তার অধিক পরিচিতি ‘মুজনাই’ নামে এবং এই উৎস নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। কেননা উৎস থেকে যে প্রবাহ দেখা যায় তার খাত…

“নদী সেতু হয়ে আছে আমাদের বন্ধুত্বে” 

বন্ধুত্বে

তাঁদের বন্ধুতা অনেকদিনের। নদীই বেঁধে দিয়েছে বন্ধুতার এই পথ। নদীই দুই বন্ধুর সেতু। ভারতের সাংবাদিকও পরিবেশকর্মী তুহিন শুভ্র মন্ডল এবং নদী বিশেষজ্ঞ সুপ্রতিম কর্মকার। নদীকে কেন্দ্রে রেখে তাদের এই আড্ডায় প্রথম থেকে শেষপর্যন্ত জুড়ে থাকলো নদীই। উঠে এল স্থানীয় ও দেশীয় নদী, নদীর সমস্যা, সমাধানের পথ। কলকাতায় অনুষ্ঠিত এই আড্ডার সবটুকু রিভার বাংলার পাঠকদের জন্য উপস্থাপন করা হলো।- সম্পাদক, রিভার বাংলা। তুহিন শুভ্র মন্ডল: সুপ্রতীম, তোমাকে নদীমাতৃক সবুজ শুভেচ্ছা।নদীই আমাদের বন্ধুত্বের সেতু। কি বলো? সুপ্রতিম কর্মকার: তুহিন দা, তুমি আমার একজন নদী বন্ধু। তাই তোমাকেও জানাই একনদী শুভেচ্ছা। তুমি দেখো,…

প্রিয় নদী ।। মনোনীতা চক্রবর্তী

প্রিয় নদী

জল উঁচু-নীচু হলে বড়ো মায়া পড়ে যায়। জল যখন খেয়ালে গান গায় এবং গাইতে-গাইতে যখন হঠাৎ তার ভয়েস-চোকড হয়ে যায়; যখন কান্নাগুলো পোশাক পরতে গিয়ে আসলে পোশাক খুলে ফেলে; দৃষ্টিলক্ষ্য যখন ভেঙে টুকরো-টুকরো হয়ে যায়, যখন লাজুক চাঁদের ধারালো চোখের ছায়া জলের ওপর পরে, যখন একটা উত্থিত দুপুর বিকেলের যৌথ-গান হয়ে ঝরে পড়ে আর চরাচর মুখর হয় সভ্যতা-গানে.. ঠিক তখন পরিকল্পনাহীন ছুটে যাই প্রিয় নদীটির কাছে। হ্যাঁ, খেয়ালে-আড়ালে; অভাবে-অভিমানে ধুমধাম প্রেমে ভিজলে শ্বাসের ওঠা-নামা যেমন করে হয়, ঠিক সেভাবেই আমি ছুটে যাই তার কাছে। প্রিয় নদীটির কাছে। ডক নদী; সে-নদীটির…

টাঙ্গন : আমার প্রিয় নদী ।। ড. অমর কুমার পাল

টাঙ্গন

টাঙ্গনের সঙ্গে আমার সম্পর্ক মায়ের সঙ্গে সন্তানের সম্পর্কের মতো। টাঙ্গন আমাকে শিখিয়েছে মানব জগতের সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত জীবজগৎকে ভালোবাসতে। টাঙ্গন আমার অন্তরের ক্ষুদ্রতাকে দুইহাতে সন্তর্পনে আলগোছে সরিয়েছে। মনের দৈন্যতা, সংকীর্ণতা, হীনমন্যতা ঝেড়ে ফেলে জীবনযুদ্ধে কীভাবে অনমনীয় মনোভাব নিয়ে মোহনার দিকে এগিয়ে যেতে হয় তার পাঠ আমি টাঙ্গনের কোলে বসে নিয়েছি। টাঙ্গন নামক অখ্যাত নদীটি তার সমস্ত সত্তা দিয়ে চেষ্টা করে যায় আজও রাইখোরের জোগান দিয়ে আমাদের রসনাকে আর মৎসজীবীদের আর্থিক দিককে তৃপ্ত করতে। দারিদ্র্যতা তার আলুথালু বেশ ও বারিহীন রুক্ষকেশ দেখে একনজরেই ঠাহর করা গেলেও তা নিয়ে তার নেই কোনও…

প্রিয় নদী ‘গঙ্গা’ ।। ডা. শর্মিষ্ঠা কর

প্রিয়নদী

অফুরান কথা আর প্রাণোচ্ছ্বলতা আমার স্বভাবসিদ্ধ বলে বাংলার মাষ্টারমশাই আমার নাম দিয়েছিলেন স্রোতস্বিনী। নদীর সম্পর্কে আমার প্রাথমিক আগ্রহ তৈরী হয়েছিলো বাবার দরাজ গলায় শোনা গান শুনে শুনে…. ও নদীরে একটি কথা-ই শুধাই শুধু তোমারে, আমায় ডুবাইলি রে আমায় ভাসাইলি রে, এ নদী এমন নদী, জল চাই একটু যদি দুহাত ভ’রে উষ্ণ বালুই দেয় আমাকে ! দুর্বোধ্যতার এক অদ্ভূত রহস্য ঘনীভূত হতো মনের মধ্যে নদীকে ঘিরে। শ্রদ্ধেয় সমরেশ মজুমদার লিখেছিলেন- “যে নদীর সঙ্গে শৈশব জড়িয়ে থাকে, যে নদীকে একসময় প্রায় বন্ধুর মতো মনে হয়, তার জন্যে যে ভালোবাসা তা আজন্ম থেকে…

নদীর নাম বলাকুট ।। মনির হোসেন

বলাকুট

সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক তাঁর ‘আমার পরিচয়’ কবিতায় লিখেছেন-‘তেরশত নদী শুধায় আমাকে কোথা থেকে তুমি এলে?’ নদীর কলকল ধ্বনির এমনই প্রশ্নে আমি বলবো, ‘আমি এসেছি বলাকুট নদীর তীর থেকে। আমার স্মৃতিময় বলাকুট। আমার শৈশব-কৈশোরের বলাকুট। কুশিয়ারা নদীর অববাহিকায় বহমান বলাকুট এর জলে আমার তৃষ্ণা মিটে। বলাকুট নদী নয়, বলাকুট আমার মা। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের ব্রহ্মপুত্রের তীরে আমার জন্ম। বাবার কর্মস্থলের সুবাদে ইটনা থানার জয়সিদ্ধিতে বসবাস। সুদীর্ঘসময়, আবাল্য, শৈশব-কৈশোর দুরন্তপনার সবগুলো অধ্যায় কেটেছে বলাকুটের তীরে শান্তির নীড়ে। নদীর উৎপত্তিস্থল সুনির্দিষ্ট না হলেও হবিগঞ্জ জেলার আজমেরীগঞ্জ এর নিকটে কুশিয়ারা বা কালনী…

সুন্দরী সোমেশ্বরী ।। আব্দুস সামাদ নয়ন

সোমেশ্বরী

নদ-নদী এদেশের সৌন্দর্যের অন্যতম এক অনুষঙ্গ। তেমনি অপার্থিব সৌন্দর্যের রাণী নেত্রকোণা জেলার সোমেশ্বরী নদী। এ নদীকে স্মরণ করতে গেলে শ্রদ্ধাবনত চিত্তে শুরুতেই স্মরণ করতে হয় টঙ্ক আন্দোলনের বিপ্লবী নেত্রী হাজং বিদ্রোহে সর্বোচ্চ শ্রদ্ধেয় স্বজন, যিনি হাজংদের কাছে আজও হাজং মাতা সেই শহীদ রাশিমনি হাজং সহ শঙ্খমণি, রেবতী, নীলমণি, পদ্মমণি ও আরো অনেক শহীদদের নাম। যারা সোমেশ্বরী নদীর ধারে টঙ্ক আন্দোলনের জন্য শহীদ হন। এ ছাড়া স্মরণ করতে হয় টঙ্ক আন্দোলনের প্রয়াত বিপ্লবী সর্বজন শ্রদ্ধেয় কমরেড মনি সিং কে। যিনি এই সোমেশ্বরীকে ভালোবেসে বড় হয়েছিলেন। এক অসাধারণ মায়াবী সুন্দরী নদী সোমেশ্বরীর…

যে নদীকে কেবল ভাসিয়ে দেওয়া গেল ।। সুপ্রতিম কর্মকার

সুপ্রতিম

লেখা শব্দগুলো ভেসে বেড়াচ্ছে। নৌকার খোলের মত করে। জলের ওপর বা পানির ওপর। ঠিক এখনো জানি না, জলের ওপর পানি! না পানির ওপর জল! শুধু এটাই জানি, ওই দুটো গ্যাসীয় পদার্থ একে অন্যের সঙ্গে মিলে মিশে তৈরি করে একটা তরল পদার্থ। জীবন বাঁচাতে ঐ রঙহীন তরলের মতন আর বিকল্প তরলের জন্ম হল না, এই বিশ্ব চরাচরে। আর সেই না হওয়ার কারণেই জলের মতন সহজ আর জলের মত দামীও কেউ হল না। জীবনকে প্রজাপতির মত রঙ্গিন দেখতেই পছন্দ করে সবাই। কিন্তু জল তার কোন রঙ নেই। কোন গন্ধ নেই। কোন স্বাদ…