জলপাইগুড়ির টেমস ‘করলা’ নদীর চিকিৎসা জরুরী

জলপাইগুড়ির

প্রিয় করলা, হ্যাঁ প্রিয়ই বললাম সমস্ত জলপাইগুড়িবাসী আর নদী সন্তানদের পক্ষ থেকে। কেননা কথা বলে বুঝেছি অসংখ্য মানুষ তোমায় ভালবেসে বুকে ধারণ করেছে। তাই তোমার যন্ত্রনায় তারা যন্ত্রনাক্লিষ্ট। তোমার দুর্দশা দেখে কষ্ট হয় তাদের। তাই তাদের হয়ে এই লেখা।

জলপাইগুড়ির ‘জীবন রেখা’ করলা। এই নদী কথা ও কথকতার মেলবন্ধন, সৃজনের অবিসংবাদি উপজীব্য। শুধু কি তাই! পরিবহন এবং জলপাইগুড়ির অর্থনীতির সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সংযুক্ত। অথচ সেই নদী আজ মৃতপ্রায়। ধুঁকছে….. করলার উৎসমুখে যেমন জল স্পর্শহীনা, তেমনই শহরের অংশেও দীর্ণ।

বর্ষার সময় ছাড়া জলপাইগুড়িবাসীর এই প্রিয় নদীর কী হাল হয় তা নতুন করে উল্লেখ করার কিছু নেই। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে আজ থেকে ত্রিশ – পয়ত্রিশ বছর আগেও এই নদীতে জল থাকতো। অথচ এখন? জলপাইগুড়ি শহরে ঢোকার মুখে, মাসকালাইবাড়ি, দিনবাজার, ইঞ্জিনিয়ারিং মোড়ের মত এলাকায় হাসপাতাল, বিভিন্ন নার্সিংহোমের বর্জ্য, বাজারের বর্জ্য নদীতে মিশছে। শহরের সমস্ত আবর্জনা মিশছে জলপাইগুড়ি বাসী প্রিয় করলা নদীতে।

জলপাইগুড়ির টেমস ‘করলা’ নদীর চিকিৎসা জরুরী

যারা নদীতে এসব ফেলছে তারা কি নদীকে ভালবাসে না?  সেদিন ডুয়ার্সের প্রথম সাহিত্য উৎসবে ( আয়োজক: ‘এখন ডুয়ার্স’ পত্রিকা) সমাজপাড়ায় করলা নদীর অংশকে আরো একবার কাছ থেকে দেখলাম। কালো জল, প্লাস্টিক, অন্য আবর্জনা ইত্যাদিতে ভর্তি। রবীন্দ্রভবনের উল্টো দিকের ঘাটেই দেখা পেলাম জলপাইগুড়ির বাসিন্দা সঞ্চয় ঘোষের।

তার কথায় ‘ মানুষ যত জাগবে নদী তত শুকোবে’।

আপনমনেই বলছিলেন কথাটি ।গভীর অর্থবাহী কথাটি শোনার পর নিজে থেকেই আলাপ করলাম। বুঝলাম করলা নদীর কষ্টে তিনিও ব্যাথিত। প্রিয় করলার যন্ত্রনা মুক্তি চান তিনি।

এই করলার প্রাণান্তকর কষ্টের মুক্তি চান রায়কতপাড়ার বাসিন্দা রিঙ্কু মূখার্জী, অন্তর্লীনা মুখার্জি, পি ডি উইমেন্স কলেজের অধ্যাপিকা শ্রীপর্ণা সরকার, জলপাইগুড়ি এ সি কলেজের অধ্যাপক বিপুল চন্দ্র সরকারও।

তাদের কথায়-‘ করলা জলপাইগুড়ির জীবনরেখা।তাকে যে কোন ভাবে বাঁচানো দরকার।’

এর আগে করলার জন্য কর্মসূচি গ্রহণ করেছে জলপাইগুড়ির বিভিন্ন নদী, সমাজ, ভূগোল ও পরিবেশপ্রেমী সংগঠন এবং সচেতন মানুষ। জলপাইগুড়ি পৌরসভা এলাকার মধ্য দিয়ে গিয়েছে জলপাইগুড়ি বাসীর প্রিয় টেমস। অসংখ্য মানুষ নদীটার জন্য কিছু করতে বলেছেন। তারা সবাই যে জলপাইগুড়িতে এখন থাকেন তা নয়। যেমন জামালদহের নব্যেন্দু ঘোষ, কলকাতার সুজিত দাস। তাদের আকুতি যেন একটাই।করলা  নদীকে বাঁচাতে হবে।কিছু একটা করতে হবে। আসলে করলা তাদের বুকে। বুকের ভিতর অহরহ তাদের নদী যাপন চলে। আরও অনেকে করলার ভাল দেখতে চান।করলার হৃত গৌরব পুনরুদ্ধারে তাদের যাবতীয় আবেগ নিয়োজিত।

কি বলছেন পৌরসভার চেয়ারম্যান? কথা বলেছি তার সাথে।

পৌরসভার চেয়ারম্যান মোহন বসুর কথায় ‘ করলা নদীকে বাঁচানোর জন্য কিছুদিনের মধ্যেই আমরা নিকাশি নালার মুখ গুলোতে নেটিং করবো। তার টেন্ডার প্রক্রিয়া প্রায় শেষ। এছাড়া পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরে করলা অ্যাকশন প্ল্যান জমা দেওয়া আছে। করলা নদী পাড়ের বাসিন্দাদের বুঝতে হবে যে নদী টাকে কি কি ভাবে ভাল রাখা যায়।’

রাজ্য নদী বাঁচাও কমিটির কনভেনর হিসাবে বলতে পারি স্কুল, কলেজ , বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের সাথে নিয়ে জলপাইগুড়ির সমস্ত সংগঠন, সমস্ত স্তরের মানুষদের সাথে আমরা জলপাইগুড়ির টেমস করলা নদীর জন্য কিছু করতে চাই। আমরা সবার সহযোগিতা চাই। মূর্তি নদীর গায়ে হেলান দিয়েই করলাকে তার প্রিয় নদী বলেছেন কবি সুজিত দাস। আদতে শিলিগুড়ির অধুনা কলকাতার বাসিন্দা হলেও করলার জন্য কোন উদ্যোগ হলে তাতে খুশির ভাব প্রকাশ করেন নদী বন্ধু জয়ন্ত গুহ। নদীকে ভালবেসে নদীর জন্য পাশে থাকার অঙ্গীকার করেন কবি সুমন ভট্টাচার্য, গল্পকার মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্যরা। এত মানুষের মনের আহ্বান, করলার প্রতি ভালবাসা, প্রার্থনাকে বৃথা যেতে দেওয়া যায় না। আগামীতে দেখতে পাচ্ছি বিজ্ঞান সন্মত পদ্ধতি অবলম্বন করে, প্রশাসন ও সরকারের উপযুক্ত পদক্ষেপে এবং মানুষের ভালবাসার চিকিৎসায় আরোগ্য লাভ করছে প্রিয় করলা। করলার ‘জীবন ও জীববৈচিত্র্য’ বাঁচাতে একমুখী ভাবনাই এখন সর্বাগ্রে জরুরী।

আরও পড়তে পারেন….

নদীর জন্য ভোটার কার্ড চাইছি

ইছামতী নদী দখলকারীদের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট

সংশ্লিষ্ট বিষয়