গাজীপুরের চিলাই নদী এখন দখল দূষণের কবলে। জেলার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত এ নদীটি এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। ২৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এক সময়ের প্রমত্তা এ নদীর সীমানা দখল করে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন স্থাপনা ও কারখানা। সীমানা নির্ধারিত না থাকায় দখল ও দূষণের গতি বাড়ছেই। তবে স্থানীয় প্রশাসন নদীটি রক্ষায় উদ্যোগী হয়েছে। নদী উদ্ধার ও খনন করে নদী কেন্দ্রিক পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা চলছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) ড. দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির।
গাজীপুরের মধ্যে প্রধান চিলাই নদী। সদর উপজেলার ভাওয়ালের গড় থেকে শুরু হওয়া নদীটি বিভিন্ন পথ অতিক্রম করে সদরের পূবাইল এলাকার বালু নদে গিয়ে মিশেছে। এটি ভাওয়াল গড় ইউনিয়ন, চতর বাজার, বনখড়িয়া, দেশীপাড়া, তিতাস জি, মারকাজ ব্রিজ, কালা সিকদার ঘাট ও শ্মশানঘাট হয়ে হানকাটা ব্রিজ এলাকায় এসে পড়েছে। পরে বেলাই বিলের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন পথ অতিক্রম করে বালু নদে গিয়ে মিশেছে।
সম্প্রতি নদীর বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখা গেছে, এক সময় গড়ে ২৩ মিটার প্রস্থের এ নদী এখন সরু খাল। নদী দখল করে গড়ে উঠেছে বড় বড় কারখানা, বহুতল ভবন। যেটুকু পানি আছে, সেটিও কালো দুর্গন্ধযুক্ত। এর মধ্যে নদীর পাড় দখল করে রাস্তা নির্মাণ করছে সিটি করপোরেশন। শহরের উত্তর পাশের অংশে নদী দখল চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। দখলদাররা নদীর গতিমুখ বদলে দেওয়ার চেষ্টা করছে। বনখুরিয়া থেকে হানকাটা ব্রিজ পর্যন্ত যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন দখলদার। গাজীপুর শহরের তিতাস ব্রিজ এলাকায় গেলে দেখা যায়, নদী দখল করে নির্মিত হচ্ছে কারখানা। মারকাজ ব্রিজ এলাকায় নিজের জমি দাবি করে দখল করা হয়েছে নদী। তোলা হয়েছে বসতবাড়ি। এসব বসতবাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে শীর্ণকায় চিলাই।
শহরের লাগোয়া কালা সিকদারের ঘাটে নদী দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে বহুতল ভবন। নদীতে ফেলা হয়েছে ইটের টুকরো, বালি, সিমেন্টের ব্যাগ। বাসা-বাড়ির আবর্জনায় ফেলা হচ্ছে নদীতে। আর কালা সিকদার ঘাটের ব্রিজের গোড়া রীতিমতো ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। শ্মশানঘাট এলাকায়ও দখল-দূষণের ছাপ স্পষ্ট। এখানে নদীর তীর ঘেঁষে রয়েছে ভাওয়াল রাজের শ্মশান। এটিও এখন বিপন্ন। শহরের পয়ঃনিষ্কাশনের নালাও গিয়ে পড়েছে চিলাই নদীতে।
নদ-নদী বাঁচাতে নওগাঁর ছোট যমুনায় নৌসমাবেশ
নদীর সুরক্ষায় ভূমিকা নিতে পারে নারী ও
এ নদীর সঙ্গে সংযোগ রয়েছে গাজীপুরের বিখ্যাত বেলাই বিলের, যা দেশী মাছের জিন ব্যাংক হিসেবে পরিচিত। নদী মরে গেলে এ বিলও রক্ষা পাবে না। এরই মধ্যে বেলাই বিল দখল করে আবাসন প্রকল্প উঠতে শুরু করেছে।
বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দলের সভাপতি মনির হোসেন বলেন,‘এ নদীটি বর্তমানে অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে। দখলদাররা নদীর বিভিন্ন অংশ দখলে নিয়েছে। এ ধারা বর্তমানে চরম আকার ধারন করেছে। এ থেকে উত্তরন দরকার।’
গাজীপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) ড. দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ূন কবির বলেন,‘নদীটি খননের আগে সীমানা নির্ধারণ ও দখলদার উচ্ছেদ করা হবে। নদীটিকে আগের অবস্থায় ফেরাতে এরই মধ্যে বেশকিছু কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে দখল-দূষণ বন্ধ করা হবে। এরই মধ্যে কিছু জায়গা উচ্ছেদ করা হয়েছে। সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন।