রিভার বাংলা ডেস্ক: আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস। ইংরেজিতে যাকে বলা হয় ইন্টারন্যাশনাল ডে অব অ্যাকশন ফর রিভারস। বিশ্বের অন্য সকল দেশের সাথে বাংলাদেশেও বিভিন্ন নদীভিত্তিক সংগঠন যথাযোগ্য মর্যদায় পালন করে এই দিবসটি। ১৯৯৭ সালে ব্রাজিলের কুরিতিবা শহরে এক সমাবেশে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিলো। প্রকৃতপক্ষে নদীর প্রতি দায়বদ্ধতা মনে করিয়ে দিতেই সিদ্ধান্ত হয় দিবসটি পালনের। ব্রাজিলের কুরিতিবা শহরে ১৯৯৭ সালে এক স্থানে জমায়েত হয়েছিলো বিভিন্ন দেশের বাঁধের কারণে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার শিকার জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা। ব্রাজিল, তাইওয়ান, আর্জেন্টিনা, চিলি, থাইল্যান্ড, ফ্রান্স, রাশিয়া, সুইজারল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে সেই সম্মেলনে অংশ গ্রহণ করেন প্রতিনিধিরা। ১৯৯৭ সালে জমায়েত হওয়া সেই সম্মেলন থেকেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় ১৪ মার্চ ইন্টারন্যাশনাল ডে অব অ্যাকশন ফর রিভারস পালনের। তারই ধারাবহিকতায় প্রতিবছর আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস পালন হয়ে আসছে বাংলাদেশেও।
‘বোধ মননে নদীকে জানি’ স্লোগানকে সামনে রেখে দেশের নদীপ্রেমী মানুষদের নিয়ে বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশন, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন এবং রিভার এন্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় ব্যতিক্রমধর্মী নদী বিষয়ক বক্তৃতা প্রতিযোগিতা।
১৪ মার্চ আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবসে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সম্মেলন কক্ষে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবুর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য কামরুন নাহার আহমেদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মনজুরুল কিবরীয়া, অধ্যাপক অসীম বিভাকর, বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ মনির হোসেন, রিভার এন্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অভিজ্ঞ মেজর (অব) ইমতিয়াজ ইসলাম, সংস্কৃতিজন লিয়াকত চৌধুরী, বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দলের সেক্রেটারি জেনারেল প্রকৌশলী মো. হাবিবুর রহমান ও পরিবেশ-নদী উন্নয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এইচ এম সুমন।
কর্মসূচিতে প্রতিযোগীরা বক্তৃতা করেন নদীকেন্দ্রিক নানা বিষয়সহ এর দখল-দূষণ- সংকট উত্তরণ ও সম্ভাবনা নিয়ে। মন খুলে বলেন ইট-কাঠের তথাকথিত উন্নয়নযজ্ঞের মধ্যেও কীভাবে আমাদের নদীগুলো ফিরে পেতে পারে তার আপন ধারা সে বিষয়ে।
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য (অতিরিক্ত সচিব) কামরুন নাহার আহমেদ বলেন, এ দিবসকে উপলক্ষ্য করে নদী বিষয়ক বক্তৃতা প্রতিযোগিতা আয়োজন নদী বাঁচানোর দায়বদ্ধতাকেই মনে করিয়ে দেয় । বর্তমানে নদ-নদীগুলো সংকটাপন্ন অবস্থা থেকে উত্তরনের জন্য বহুমাত্রিক উদ্যোগ প্রয়োজন। এখানে থাকবে সরকারি উদ্যোগ, গবেষণা ও সচেতনতা তৈরি। আর সচেতনতা তৈরির ক্ষেত্রে আজকের যে আয়োজন তা খুবই অর্থবহ। আমি মনে করি এর মধ্য দিয়ে জনসম্পৃক্ততা বাড়বে বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে নদী ভাবনা ও নদীচিন্তা বাড়বে। এ ধরনের আয়োজন যত বেশি বাড়বে নদীর কথা তত জনমানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে। এমন একটি চমৎকার আয়োজনের জন্য আয়োজক সংগঠন বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশন, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন ও রিভার এন্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারকে ধন্যবাদ ও সাধুবাদ জানাচ্ছি। আর এ প্রতিযোগিতায় যারা অংশগ্রহণ করেছ তাদেরকে ধন্যবাদ ও যারা বিজয়ী হয়েছো তাদেরকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। আমরা সবাই সমন্বিতভাবে নদীর জন্য লড়বো এবং কাঙ্খিত ফল অর্জন করবো।
প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মো. সাইফুল ইসলাম খান, দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের মাহফুজা মাহবুব নওশিন ও তৃতীয় স্থান অর্জন করেন ভিকারুননেসা নুন কলেজের কাশফিয়া কাওসার চৌধুরী। এছাড়া আরও ৭ জনকে দেয়া হয় বিশেষ পুরস্কার।
এই আয়োজনের সাপোর্টেড পার্টনার বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দল ও পরিবেশ-নদী রক্ষা উন্নয়ন পরিষদ। মিডিয়া পার্টনার: কালের কন্ঠ, চ্যানেল আই, সময়ের কাগজ, স্পেশাল নিউজ, নদী বিষয়ক পত্রিকা রিভার বাংলা ও নদীবার্তা ডট কম।