বন্ধুগণ,
আজকের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুধুমাত্র এই বিষয়টি বুঝতে পারলেও আমরা নিজেদেরকে আবিষ্কার করতে পারবো। এই যে ‘প্রাণ’ শব্দটি এখানে ব্যবহার করা হয়েছে, পরে ‘সভ্যতা’ এবং ‘শিল্প-সাহিত্যের বিকাশ’… এই সবকিছুই শুরু হয়েছে জল এবং জলপ্রবাহ বা নদী থেকে।
আমার খুব প্রিয় একজন মানুষ কফিল আহমেদ, আপনারা তাঁকে গণসংগীতশিল্পী হিশেবে চিনেন, আমি তাঁকে দার্শনিক মনে করি; তাঁর কাছ থেকে আমি এ বিষয়ে সীমাহীন উপকৃত হয়েছি। প্রাণ কি? প্রকৃতি কি? এগুলোর সাথে আমাদের সম্পর্কটাই বা কি? দেখতে ভালো লাগে, শুধুমাত্র এ জন্যই কি আমরা নদীকে বাঁচাতে চাই? একটু ঘোরাঘুরি করি বা চোখে দেখার জন্য?
এখানে যারা আছেন, তারা জানেন পৃথিবীর বিকাশটা। প্রাণের আগে পানি তৈরি হয়েছে। সেই পানি থেকেই সমস্ত প্রাণের উৎপত্তি। পৃথিবীর প্রাক ভূমিরূপ তিনটি বৃহত্তর জলপ্রবাহ: ব্রহ্মপুত্র, সিন্ধু এবং কলরেডো- এই তিনটি নদীর পাড়ে পৃথিবীর আদি তিনটি সভ্যতার উৎপত্তি এবং বিকাশ লাভ করেছে।
এই আমরা যেখানে দাড়িয়ে আছি, ধরুন, আমাদের পায়ের নিচে মাটি নাই.. টাইম মেশিনে চড়ে পেছনের দিকে গেলে আমরা দেখবো, এখানে তখন টেথিস সাগর… ব্রহ্মপুত্র গঙ্গার মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ বছর যাবৎ অব্যাহত পলিভরণের ফলে এই ভূখণ্ডটি তৈরি হয়েছে।
পৃথিবী আজকের পর্যায়ে আসার পেছনে এই নদীর শ্রম সর্বাধিক। কফিল ভাই যে কথাটি বলেন, শ্রম আসলে কি? শুধুমাত্র মানুষের শ্রমই কি শ্রম? একটি নদী, যে দীর্ঘদিন তিলে তিলে পলি নিয়ে এসে এ অঞ্চল তৈরি করেছে, আমাদের পায়ের নিচে মাটি দিয়েছে, প্রাণের বিস্তার ঘটিয়েছে … আমরা কি নদীর সেই শ্রমকে অস্বীকার করতে পারি? এবং সেই নদীর পাড়ে যে প্রাণের সঞ্চার… মানুষ, পশুপাখি, জন্ত-জানোয়ার, কীটপতঙ্গ, বৃক্ষ-তরুলতা… প্রত্যেকটা জিনিসই যার যার জায়গায় শ্রম দিয়ে যাচ্ছে। এবং এদের সম্মিলিত শ্রমের কারণেই এ পৃথিবী সুজলা সুফলা এবং সুন্দর!
শুধুমাত্র মানুষ চাইলেই কোথাও কোনও প্রাণের বিস্তার ঘটাতে পারে না, উন্নয়ন করতে পারে না, তার শ্রম দিয়ে; সেই শ্রমের সাথে যদি আরও আরও শ্রম যুক্ত না হয়। যেমন ধরুন, কৃষি : যে মাটিতে কীটপতঙ্গের উপস্থিতি নাই, সেটা উর্বরা শক্তিহীন। প্রাণের যে বিবর্তন: জন্ম নিচ্ছে, ধ্বংস হচ্ছে… ধ্বংস হয়ে মাটিকে উর্বর করছে; আমরা এটাকে সারা বলছি। এনার্জি বলেন কিংবা তেল, গ্যাস, কয়লা… এইসব ফসিল ফুয়েল তো প্রাণেরই ধ্বংসাবশেষ! আমরা যেগুলো এনার্জি হিসাবে ব্যবহার করছি। সুতরাং, এনার্জি বা শক্তি, পৃথিবীর যাবতীয় শক্তি উপাদানগুলো আসলে সমস্ত প্রাণের সম্মিলিত শ্রমের ফসল।
একটি নদী তো শুধু পানির প্রবাহ না, প্রাণের প্রবাহ। সে পানির সাথে সাথে প্রাণের যত সহায়ক উপাদানগুলো আছে, নদী সবকিছু সাথে করে নিয়ে আসে। চারপাশে প্রাণের বিস্তৃতি ঘটায়। এগুলো অটো চয়েজে হয়। যেমন: ব্রহ্মপুত্র প্রবাহে যেসব বৃক্ষ লতাপাতা পশুপাখিদের বিকাশ ঘটিয়েছে, কলরেডা প্রবাহে তা অন্যরকম। ব্রহ্মপুত্র প্রবাহে যে গাছগুলো জন্মেছে সেই গাছগুলো এই মাটির উপযোগী, যে পাখিদের জন্ম সেগুলো এখানকার পরিবেশে উপযোগী। প্রকৃতির নিজস্ব পছন্দসই। প্রকৃতির নিজস্ব পছন্দ আছে। সেই অনুসারে প্রাণ প্রকৃতির বিন্যাসটা হয়েছে। প্রাণ প্রকৃতির এই বিন্যাসটা যেখানে স্বছন্দে চলতে পারে, সেখানে আমরা বলতে পারি: প্রকৃতি স্বাভাবিক আছে। যেখানে সেটা স্বাভাবিকভাবে চলতে পারে না, বাধাগ্রস্ত করা হয়, মানুষ নিজের স্বার্থে প্রাণকে ধ্বংস করে, প্রকৃতির নানা উপাদানকে ধ্বংস করে, তখন আমরা বলি: প্রকৃতি বিপন্ন হচ্ছে।
ব্রহ্মপুত্র পাড়ে কি কি ছিল? এর সুনির্দিষ্ট কোনও রেকর্ড নাই। আমরা শুধু কয়েকশো বছরের কথা ধারণায় আনতে পারি। আমাদের এই ব্রহ্মপুত্র প্রবাহে সবচেয়ে বেশি ছিল হিজল গাছ। শত শত রকমের বৃক্ষ লতাগুল্ম এবং হাজার রকমের পাখপাখালি ছিল। আজকে যদি ব্রহ্মপুত্র পরিভ্রমণ করেন হিজল তমালের দেখা পাবেন না, শত প্রজাতির গাছ উধাও হয়েছে, কয়েকশো প্রজাতির পাখি শেষ হয়ে গেছে। মানুষের কারণেই এগুলো হারিয়ে গেছে।
আমাদের দেশে এই যে শত শত নদী এগুলোর বেশিরভাগই আসলে ব্রহ্মপুত্র নদী। আমরা সেগুলোকে যমুনা, বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র ইত্যাদি নানান নামে ডাকতে পারি, এতে সত্যের হেরফের হয় না। দীর্ঘ চলার পথে ব্রহ্মপুত্র নানান শাখা-প্রশাখার জন্ম দিয়েছে। এই সবগুলো নিয়েই ব্রহ্মপুত্র বেসিন, ব্রহ্মপুত্র সভ্যতা। এখনও, শীতকালে বাংলাদেশে যে পানির প্রবাহ তার শতকরা সত্তর-বাহাদুর ভাগ পানি সরবরাহ করে ব্রহ্মপুত্র।
এই ব্রহ্মপুত্রের উজানে চীন বাঁধ দিয়ে ছয়টি পাওয়ার প্লান্ট করছে এবং রাবারডেম তৈরি করে পানির প্রবাহ চীনমুখি করতে চাইছে। এতে ভারত উদ্বিগ্ন। অথচ, ভারত একই কাজ করেছে গঙ্গা তিস্তা সহ প্রায় সবগুলো নদীতে বাঁধ দিয়ে। এখন, ভারত ব্রহ্মপুত্রের বুকেও বাঁধ তৈরির পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে…..
এই ব্রহ্মপুত্র কেন প্রয়োজন? এই প্রশ্নটির মীমাংসা জরুরি। ব্রহ্মপুত্র লক্ষ লক্ষ বছর অব্যাহতভাবে পলিভরণের মাধ্যমে এই বঙ্গভূমি তৈরি করেছে। এই ভূমি আসলে জলজভূমি। জলের সাথে এই ভূমির সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। যে প্রাণী জলজ, সে জল ছাড়া বাঁচতে পারে না। এটাই স্বাভাবিক। তেমনি, যে ভূমি জলজ, জল ছাড়া সেই ভূমি স্বতঃস্ফূর্ত প্রাণময় থাকতে পারে না, তার স্বাভাবিক চরিত্রের পরিবর্তন ঘটে। সেই পরিবর্তনটি প্রকৃতি নিপীড়নের নামান্তর।
আজকে ব্রহ্মপুত্র নিয়ে নানান প্রশ্ন আছে, প্রতিটি নদী নিয়েই এমন প্রশ্ন: নদীর মালিক কে?
আপনারা জানেন, ব্রহ্মপুত্র তিনটি রাষ্ট্রের উপর দিয়ে প্রবাহিত। 2900 কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ব্রহ্মপুত্র প্রায় 1625 কিলোমিটার চীনের তিব্বত এলাকায়, 918 কিলোমিটার ভারতে এবং 363 কিলোমিটার বাংলাদেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পদ্মার সাথে মিলে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে। এখন বিশ্বব্যাপী আলোচনা, সমালোচনা এবং যুদ্ধাবস্থা যে প্রশ্নটি নিয়ে: “নদীর মালিক কে?”
সাধারণভাবে, পত্রপত্রিকা মিডিয়া বা একাডেমিক এবং রাজনৈতিক অঙ্গণে বলা হয় “ভারতের নদী”, “চীনের নদী”, “আন্তর্জাতিক নদী”, “যৌথনদী” ইত্যাদি। ভারত বলছে তাদের নদী, আমরা বলছি আমাদের নদী। বাস্তবিকই তাই না কি?
এটি আসলে বিচ্ছিন্নতার সূত্র থেকে আসা শব্দাবলি। এই ময়মনসিংহ জেলা বা আসাম চীন এই ব্রহ্মপুত্রকে জন্ম দেয়নি। বরং ব্রহ্মপুত্রই এইসব অঞ্চল দেশ বানিয়েছে। নদীই দেশ তৈরি করে। কাজেই, কোনও দেশের মালিকানায় কোনও নদী হতে পারে না। এই দাবি করার কোনও অধিকার কোনও রাষ্ট্রের নাই। নদী প্রকৃতি। প্রকৃতির কোনও মালিকানা থাকতে পারে না।
কিন্তু, আজকে দুনিয়াব্যাপী যে একচেটিয়া রাষ্ট্রগিরি চলছে, সেই রাষ্ট্র জোর করে দখল করে খুঁটি গেড়ে, কাঁটাতার বসিয়ে বলছে: এইটুকু আমার। এই জায়গায় য়তো ঘাস লতাপাতা নদী পাখি জীবজন্তু মানুষ আছে- সব আমার অধীন। ব্যক্তি মালিকানা এবং রাষ্ট্রীয় মালিকানার পৃথিবীতে এটাই চলছে। আমি বন ধ্বংস করে শিল্পাঞ্চল করবো, সুন্দরবনে বিদ্যুতকেন্দ্র করবো, গ্যাসপ্লান্ট করে ভারতের সাথে বন্ধুতা করবো, বাঁধ বানাবো– এটা আমার অধিকার। ভাটিতে যে আছে সে শুকিয়ে মরুক। প্রকৃতি ধ্বংস হোক। এই যে একটা অস্বাভাবিক, প্রকৃতিবিরোধী চিন্তা তা শুধু মানুষের মনের মধ্যেই আছে, এমন নয়। এটি আইনি কাঠামোর মধ্যেই ঢুকে গেছে। বিভিন্ন দেশের আইনকানুন বলেন, রাষ্ট্রসংঘ বলেন সবগুলো জায়গাই এই নীতির অধীনে চলে গেছে। ফলে, চাইলেই নদীতে বাঁধ দেওয়া যায়।
আমরা দীর্ঘদিন এইসব বিষয়ে নিরব থেকেছি। আমাদের নিরবতার ফসল হচ্ছে চীনের বাঁধ, ভারতের বাঁধ, দেশের আভ্যন্তরে বাঁধ স্লুইসগেট।
চীনের রাবারডেম পরিকল্পনায় ভারতের গলা শুকিয়ে গেছে। ভারতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি রাবারডেম বা বাঁধ দিয়ে চীন পানি প্রত্যাহার করে নেয় তাহলে ভারত ও বাংলাদেশে ব্রহ্মপুত্রের সাথে যুক্ত নিচু এলাকায় বন্যা, খরা ও ভূমিধ্বসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিবে।
ফারাক্কা ও তিস্তা এবং অন্যসব নদীতে ভারতীয় বাঁধের কারণে বাংলাদেশের কি ক্ষতি হয়েছে এবং হচ্ছে, সেকথা ভারতের চেয়ে আর কে বেশি জানে?
মাটি পানি বায়ূ তথা জলবায়ু পরিবর্তিত হয়ে কৃষি অর্থনীতি প্রাণ প্রকৃতি সবকিছুই বিনাশ হচ্ছে ভারতীয় রাষ্ট্রনীতির কারণে।
ভাটির দেশের উজানে নদীগুলোতে বাঁধ দিলে যা হয়, বাংলাদেশেও তাই হচ্ছে। যেহেতু পানি প্রবাহ থাকছে না সেহেতু পলিভরণে ভূমি উঁচু হচ্ছে না। অন্যদিকে, উষ্ণতাবৃদ্ধির কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে। ফলে, দেশের দক্ষিণাঞ্চল তলিয়ে যাচ্ছে, নোনাপানির জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে। বাস্তুচক্র বিপন্ন হচ্ছে।
বাংলাদেশ এবং পৃথিবীই এক ভয়ানক পরিণতির দিকে ধাবিত হচ্ছে।
বিশেষ করে ষাটের দশকে, স্বাধীনতা পরবর্তিকালে যেটা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, দেখবেন, বিশ্বব্যাংক আইএমএফের পরিকল্পনা এবং অর্থায়নে পুরো দেশব্যাপী বিভিন্ন নদী এবং খালে বাঁধ তৈরি করা হয়েছে, স্লুইসগেট তৈরি করা হয়েছে, বহমান নদীকে জলাধারে পরিণত করা হয়েছে। এতে তাৎক্ষণিকভাবে হয়তো সেচ এবং কৃষি কার্যক্রমে কিছু সুফল পাওয়া গেছে; কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে বিরাট ক্ষতি হয়ে গেছে। বিশেষ করে, যেখানে বড়ো নদী থেকে ছোট নদীর উৎসস্থলে বাঁধ স্লুইসগেট দেওয়ার কারণে ছোটোনদীগুলো মরে গেছে, পরবর্তীতে সেগুলো ‘বদ্ধ জলাশয়’ দেখিয়ে ক্ষমতাবানদের লিজ দেওয়া হয়েছে। এতে নেট ফলাফল হয়েছে ভূমিরূপ এবং প্রাণপ্রকৃতির বিকৃতি বিনাশ; অনেক অঞ্চলে স্থায়ী বারোমাস্যা জলাবদ্ধতা। শহরাঞ্চলে নদী-খালের অস্তিত্বই বিলুপ্তপ্রায়। নদী-খাল দখল করে নগরায়ন হয়েছে, কর্তৃপক্ষ রাস্তা তৈরি করেছে, ‘উন্নয়ন’ করেছে! আজ সময় হয়েছে, কেননা, শহরগলো মৃতপ্রায়, পৃথিবী কোমায়; তাই বলি, এই রঙিন দালানগুলো ভেঙে গুঁড়িয়ে দাও… যেখানে নদী ছিল, খাল ছিল সেগুলো উদ্ধার করো। গাছ লাগাও। ঝোপঝাড় হতে দাও। পাখিদের জায়গা করে দাও। যে শহরে পাখি নাই, সে শহর শহর না কি? যে শহরে শিশুদের খেলার মাঠ নাই, লুকোচুরি খেলার জায়গা নাই, সেই শহরের চেয়ে অশ্লীল কিছু আছে না কি?
নদী খননের বিশাল অঙ্কের প্রকল্প নিয়েছেন, ভালো কথা; কিন্তু, তার আগে যে জরুরি দুটি কাজ করার ছিল : নদীকে দখল ও দূষণমুক্ত করা…. সেটি একদমই করা হচ্ছে না। অন্তত এই ব্রহ্মপুত্র পাড়ে দখল উচ্ছেদের কোনও লক্ষণ চোখে পড়েনি, দূষণের বিরুদ্ধেও কোনও কার্যকর পদক্ষেপ নাই। নদীপাড়ের মানুষকেও যুক্ত করা হয়নি। শেষ পর্যন্ত পর্বতের মূষিক প্রসব না হলেই রক্ষা!
আজকের আলোচনার বিষয় ছিল ‘ব্রহ্মপুত্র প্রবাহে প্রাণ সভ্যতা এবং শিল্প-সাহিত্যের বিকাশ’। আমি প্রথমাংশেই থাকলাম, বিষয়গুলো সেভাবে আলোচিত হয় না বলে। নিশ্চয়ই পরবর্তী বক্তাগণ এবিষয়ে আলোকপাত করবেন।
আমি শুধু বলবো, মানব সভ্যতার উৎপত্তি বিকাশ যেহেতু নদীকেন্দ্রিক, ব্রহ্মপুত্র প্রবাহও এর ব্যতিক্রম না। এখানে বরং শিল্পসাহিত্যে নদীর প্রভাব সর্বাধিক। এখানে মানুষের কণ্ঠস্বরে নদীর কলধ্বনি স্পষ্ট। হাজার বছরের সাহিত্যের পরতে পরতে নদী, নদীপাড়ের মানুষের সংগ্রাম, সওয়াল-জওয়াব বিদ্যমান। এই নদীঘনিষ্ঠতার কারণেই তুর্কি-মোগল ইত্যাদি বিদেশি শাসন এখানে যুদ্ধ জয় করেও সেভাবে টিকতে পারেনি বা সমাজ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। দখল ছিল উপরিকাঠামোতে, সমাজ ছিল কার্যত স্বাধীন। এবং বাংলার মানুষ অপেক্ষা করতো কবে বর্ষা আসবে আর মোগল সৈন্যদের তাড়াবে….
বিশ্ব সাহিত্যের অন্যতম লোককীর্তি আমাদের ‘মৈমনসিংহ গীতিকা’ এক অর্থে ‘স্বাধীন ময়মনসিংহের’ সৃজনকর্ম। পনেরোকুড়ি মাইল ব্রহ্মপুত্র নদী পার হয়ে ইংরাজ শাসন যেখানে সেভাবে গেড়ে বসতে পারেনি সেই পূর্ব ময়মনসিংহের নেত্রকোনা-কিশোরগঞ্জ অঞ্চলে এই গীতিকা রচিত-চর্চিত হয়েছে। এমনকী, করমশাহ টিপুশাহর নেতৃত্বে যে কৃষক বিদ্রোহ সংঘটিত হয়ে শেরপুর-জামালপুর-ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল-নেত্রকোনার বিশাল অঞ্চল প্রায় আড়াই বছর স্বাধীন ছিল, তাতেও বিশাল ব্রহ্মপুত্রের ভূমিকা ছিল নির্ধারক।
সেই আলোচনা অন্য কোনও দিনের জন্য তোলা থাক।
◾ গত 18 অক্টোবর 2019, ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাহিত্য পরিষদ’র চতুরঙ পাঠচক্রে ‘ব্রহ্মপুত্র প্রবাহে প্রাণ সভ্যতা ও শিল্প-সাহিত্যের বিকাশ’ শীর্ষক আলোচনার সংক্ষিপ্তরূপ।