জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে আমাদের মতো গরিব দেশগুলো চরম বিপর্যয়ের সম্মুখীন বলে মন্তব্য করেন ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল।
তিনি আরও বলেন, জি-২০ সম্মেলনে প্রত্যেকবার বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও তা বাস্তবায়নে নির্জীব ভূমিকা পালন করে থাকে। পাশাপাশি, জলবায়ু পরিবর্তনে দায়ী দেশগুলো তাদের দায় এড়িয়ে ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলোকে বিভিন্ন কৌশলে ঋণের ফাঁদে ফেলার কর্মসূচি গ্রহণ করে। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী দেশগুলোর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় ও অনতিবিলম্বে উপযোগী জলবায়ু নীতি গ্রহণের জন্য জি-২০ সম্মেলনে সিদ্ধান্ত গ্রহণের দাবি জানান তিনি।
শরীফ জামিল আজ জি-২০ সম্মেলনকে সামনে রেখে জলবায়ু-ন্যায্যতা’র দাবিতে অনুষ্ঠিত কর্মসূচিতে এসব কথা বলেন।
জলবায়ু-ন্যায্যতা’র দাবিতে আজ ৮ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার, সকাল ১০ টায় রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘর এর সামনে মানববন্ধন, সাইকেল র্যালি ও বিষয়ভিত্তিক মূকাভিনয় প্রদর্শিত হয়েছে।
জি-২০ সম্মেলনকে সামনে রেখে ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ, ইকুইটি বিডি, ইয়ুথ নেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস, সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্স এন্ড ডেভেলপমেন্ট, ব্রতী, গ্লোবাল ল’থিংকার্স সোসাইটি, বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশন, সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন, বাংলাদেশ সাইকেল লেন বস্তবায়ন পরিষদ যৌথভাবে এই কর্মসূচীর আয়োজন করে।
কর্মসূচির সভাপতি ব্রতীর প্রধান নির্বাহী শারমিন মুরশিদ বলেন, জি-২০ জোটভুক্ত দেশগুলো জলবায়ু সংকটের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী। শিল্পোন্নত দেশগুলোর অনিয়ন্ত্রিত কার্বন নিঃসরণে বর্তমানে সারাবিশ্ব একটি সংকটের মুখোমুখি হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে, দায়ী দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলোকে বিভিন্ন ক্ষতিপূরণমূলক অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহায়তা দেওয়ার আবশ্যকতা থাকলেও তারা সেটা না করে উপরন্তু গ্লোবাল সাউথের দেশগুলোর জন্য ঋণের ফাঁদ তৈরীর মতো হঠকারী পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করছে। এছাড়াও যে সকল ইতিবাচক সিদ্ধান্ত বিভিন্ন সম্মেলনে গৃহীত হয়েছে তার অধিকাংশই সম্মেলন কক্ষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো। তাই এই কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা আগামীতে জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলোর জন্য জি-২০ সম্মেলনে পরিকল্পনা গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানাই।
বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি বদরুল আলম বলেন, আসন্ন জি-২০ সম্মেলনে পৃথিবীকে এক পরিবার বললেও এ সংগঠনটি বিশ্বের বিভিন্ন ধনী দেশগুলোর স্বার্থকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। ২০০৯ সালে এ সংগঠনের সম্মেলনে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিলেও অর্থ, বানিজ্য ও জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে তারা চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে পর্যায়ক্রমে বের হয়ে আসার কথা থাকলেও সদস্য দেশগুলোর শিল্পাকারখানার কারণে আরো বেশি দূষণের শিকার হচ্ছে গরিব দেশগুলো। অবিলম্বেই এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উপকূলে দুর্যোগ বাড়ছে। লবণাক্ততার আগ্রাসনে ফসলের উৎপাদন কমছে। বিশ্বঐতিহ্য সুন্দরবন ও সাগর সৈকত ধবংস হচ্ছে। ফলে উপকূলের মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে। অথচ ধনী দেশগুলো একের পর এক প্রতিশ্রুতি দিলেও তা রক্ষা করছে না। তাই দুর্যোগ কবলিত মানুষকে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম জোরদার করতে হবে।
অনুষ্ঠানের জলবায়ু শরণার্থী, নদী দূষণ ও বৃক্ষ নিধন বিষয়ক মূকাভিনয় প্রদর্শন করেন ঢাকা ইউনিভার্সিটি মাইম অ্যাকশনের শিল্পীবৃন্দ এবং বাংলাদেশ সাইকেল লেন বাস্তবায়ন পরিষদের শতাধিক সাইকেলিস্টের একটি র্যালি অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে সিপিআরডি’র গবেষণা কর্মকর্তা আল ইমরান, গ্লোবাল ল’থিংকার্স সোসাইটির সভাপতি রাওমান স্মিতা, কম্পিটিশন কমিশনের উপদেষ্টা এম এস সিদ্দিকি, ইয়ুথ নেটের সমন্বয়ক এস জেড অপুসহ আয়োজনকারী সংগঠনসমূহ ছাড়াও অন্যান্য পরিবেশবাদী সংগঠন এবং ব্যাক্তিবর্গ বক্তব্য রাখেন।
“ভাসুধাইভা কুটুম্বাকাম” বা “এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ” স্লোগানকে সামনে রেখে বিশ্বের শক্তিশালী অর্থনীতির ১৯ টি দেশ ও ইইউ সমন্বয়ে গঠিত আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ফোরাম জি-২০ এ বছরের ৯-১০ সেপ্টেম্বর ভারতে তাদের বার্ষিক সম্মেলনের আয়োজন করতে যাচ্ছে। এই সম্মেলনকে সামনে রেখে এশিয়ান পিপলস মুভমেন্ট অন ডেট এন্ড ডেভেলপমেন্টট (এপিএনডিডি) এর সমন্বয়ে বাংলাদেশসহ এশিয়ার দশটি দেশে জি-২০ জোটের নেতৃবৃন্দের প্রতি বিভিন্ন দাবি নিয়ে একযোগে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।