আগামীকাল ২৭ সেপ্টেম্বর, রবিবার বিশ্ব নদী দিবস। নদী সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে ও মানুষের মধ্যে নদী ভাবনা তৈরি করতে প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসের চতুর্থ রবিবার দিবসটি পালন করা হয়। বাংলাদেশেও বিভিন্ন সংস্থা ও পরিবেশবাদী জোট দিবসটি পালন করছেন। এর মধ্যে ১২টি সংস্থার যৌথ আয়োজনে বাংলাদেশেও দিবসটি এবার জাকজমকভাবে পালিত হচ্ছে।
সংস্থাগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশন, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন, রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা নদী গবেষণাগার, বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দল, রিভার বাংলা, দি ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব এপেক্স ক্লাবস বাংলাদেশ, হালদা নদী রক্ষা কমিটি, জিবিএম বেসিন বেইজ্ড পিপলস নেটওয়ার্ক, ব্রহ্মপুত্র সুরক্ষা আন্দোলন, ক্লিন রিভার বাংলাদেশ এবং পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন সোসাইটি।

আয়োজক সংস্থাসমূহ করোনাকাল তথা কভিড-১৯, নদ-নদী ও পরিবেশের সুস্থতা তার সাথে সুস্থ জীবনকে সম্পর্কিত করে স্থানীয়ভাবে একটি প্রতিপাদ্য ঠিক করে তা হচ্ছে ‘দূষণমুক্ত নদী, সুস্থ জীবন’। আর বিশ্ব নদী দিবসের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ার মার্ক এঞ্জেলো স্বয়ং এ শিরোনামের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন তার শুভেচ্ছা বার্তায়। আরও বলেছেন, বর্তমান করোনাকালীন সময়ে এরকম থিম প্রাসঙ্গিক। ‘দূষণমুক্ত নদী, সুস্থ জীবন’ শিরোনামে ভার্চুয়াল সেমিনারটি আগামীকাল ২৭ সেপ্টেম্বর, রবিবার বিকাল ৩.৩০টায় ঝুম ক্লাউড মিটিং অনুষ্ঠিত হবে।
ভার্চুয়াল সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার এবং সভাপতিত্ব করবেন প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু।
অতিথি হিসেবে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে যুক্ত থাকবেন বিশ্ব নদী দিবসের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ার মার্ক এঞ্জেলো। বিশেষ অতিথি হিসিবে উপস্থিত থাকবেন নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য (অতিরিক্ত সচিব) মো. আলাউদ্দিন, পরিবেশ,বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মাহমুদ হাসান, মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের যুগ্ম সচিব ও এটুআইয়ের যুগ্ম প্রকল্প পরিচালক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর, দি ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব এপেক্স ক্লাবস বাংলাদেশের জাতীয় সভাপতি এপেক্সিয়ান নিজামউদ্দিন পিন্টু ও বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনর চেয়ারম্যান মুহাম্মদ মনির হোসেন।
সেমিনারের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হালদা নদী গবেষণাগারের সমন্য়কারী ড. মো. মনজুরুল কিবরীয়া ও রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ। সঞ্চালনা করবেন বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দলের এক্সিকিউটিভ মেম্বার শাহ্জিয়া শাহরিন আনিকা। মিডিয়া পার্টনার দৈনিক কালের কণ্ঠ ও চ্যানেল আই।
দিবসটির সূচনা হয়েছিল কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া রাজ্যে আশির দশকের গোড়ায়। আরো সুনির্দিষ্ট করে বললে ১৯৮০ সালের সেপ্টেম্বর মাসের শেষ রবিবার (এখন সেপ্টেম্বর মাসের চতুর্থ রবিবার পালিত হচ্ছে), সাপ্তাহিক ছুটির দিন ব্রিটিশ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক তরুণ শিক্ষক এবং নদীপ্রেমিক মার্ক অ্যাঞ্জেলো তাঁর কিছু ছাত্রছাত্রী ও বন্ধুকে নিয়ে একটি নদীতে ‘ক্লিন আপ’ বা পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালান। নদীটি র্যাফটিংয়ের জন্য জনপ্রিয় ছিল; কিন্তু যারা অংশ নিতেন তাদের খাবারের প্যাকেট, র্যাফটিংয়ের যন্ত্রাংশ, বিনোদন উপকরণ প্রভৃতি নদীটিতেই পরিত্যাজ্য হত। তারা সেগুলো পরিস্কার করেন। একটা পিকনিকের আবহে দলটি অংশ নিয়েছিল এবং তখনও তারা হয়তো জানতেন না যে, একটি ইতিহাস তৈরি হতে যাচ্ছে।

পরের বছরগুলিতে দিবসটি উদযাপন ক্রমেই ছড়িয়ে পড়তে থাকে; ব্রিটিশ কলম্বিয়া রাজ্য হয়ে ক্রমে পুরো কানাডা, নর্থ আমেরিকা, সাউথ আমেরিকা, ইউরোপ অস্ট্রেলিয়া। ২০০৫ সালে এসে জাতিসংঘ দিবসটি সমর্থন করে এবং ২০১৫ সাল পর্যন্ত ‘ওয়াটার ফর লাইফ ডিকেড’ কর্মসূচির অংশ করে নেয়। মার্ক অ্যাঞ্জেলো ততদিনে তাঁর নদীপ্রেমের জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিত। তিনিই প্রতিষ্ঠিত হন দিবসটির জাতিসংঘ চেয়ার হিসেবে। এরপর থেকেই জাতিসংঘের বিভিন্ন সহযোগী সংস্থা দিবসটি পালন করছে, যা দিন দিন বিস্তৃত হচ্ছে। গত বছর বিশ্বের প্রায় ৭০টি দেশে পালন করা হয়েছে বিশ্ব নদী দিবস। বিশ্ব নদী দিবস উদযাপন সংশ্লিষ্ট সদর দপ্তরের তথ্যমতে এবছর বাংলাদেশসহ ১০০ টি দেশে দিবসটি পালিত হচ্ছে। বাংলাদেশে ২০১০ সাল থেকে এ দিবসটি পালিত হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি সংস্থার যৌথ আয়োজনে প্রথম দিবসটি পালিত হয় ২০১৬ সালে। সে বছর জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন ও বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দল যৌথভাবে জাতীয় প্রেসক্লাবে একটি সেমিনারের আয়োজন করে যার প্রধান অতিথি ছিলেন তৎকালীন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খান।
‘দূষণমুক্ত নদী, সুস্থ জীবন’ শিরোনামের ভার্চুয়াল সেমিনারটি বাস্তবায়নের জন্য সাত সদস্য বিশিষ্ট একটি আয়োজক কমিটি গঠন করা হয়েছে। বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দলের এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি প্রকৌশলী মো. হাবিবুর রহমান আহ্বায়ক ও নদী বিষয়ক পত্রিকা রিভার বাংলার সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ সদস্য সচিব। অন্যান্য সদস্যরা হলেন জাবেদ সারোয়ার, ইসলাম মাহমুদ, মো. খলিলুর রহমান মজু, এ এফ এম এনামুল হক মামুন ও রোমান শাহ আলম।
আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী মো. হাবিবুর রহমান রিভার বাংলাকে বলেন-‘এবারের নদী দিবসকে সফল করে তুলতে ইতিমধ্যে আমরা একাধিক প্রস্তুতিসভা করেছি। ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা করতে আমাদের সংগঠনের সদস্যদের নির্দেশনা দিয়েছি। আশা করছি ২৭ সেপ্টেম্বর একটি সফল আয়োজনের মধ্যদিয়ে দিবসটি উদযাপন করতে পারবো। একইসঙ্গে আমরা প্রত্যাশা করছি, আমাদের এই আয়োজনের মধ্যদিয়ে সকল শ্রেণী পেশার মানুষের কাছে নদী দিবসের বার্তাটি পৌঁছে যাবে।
আরও পড়তে পারেন….
নদী দিবসে ইকরিমিকরির আয়োজন- আলোকচিত্র প্রদর্শনী
মহাদেব ও ইছামতীর গল্প ।। সুজয় চক্রবর্তী
বরাকর একটি নদীর নাম ।। অতনু রায়
