মো.ইউসুফ আলী, কেরাণীগঞ্জ থেকে>> বুড়িগঙ্গা নদীর শ্যামবাজার ফরাশগঞ্জ এলাকায় অর্ধশতাধিক যাত্রী নিয়ে একটি লঞ্চ ডুবির ঘটনায় এ পর্যন্ত নারী ও শিশুসহ ৩২ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে উদ্ধার কর্মে নিয়োজিত ডুবুরিদল। বেশ কয়েকজন যাত্রী সাঁতরে উপরে উঠে গেছে বলেও জানিয়েছেন উদ্ধার কাজে নিয়োজিতরা।
এছাড়া আর কোন যাত্রী নিখোঁজ রয়েছে, তা এখনও জানা যায়নি। উদ্ধারকৃতদের মধ্যে ৭ জন নারী ও ৩ জন শিশু ও ২২ জন বিভিন্ন বয়সের পুরুষ রয়েছে বলে জানিয়েছেন উদ্ধার কাজে নিয়োজিতরা। লাশ উদ্ধারের পর মিটফোর্ট হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছেন উদ্ধারকর্মীরা। সেখান থেকে স্বজনরা লাশ চিহ্নিত করে নিয়ে যাবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
তবে ৮ঘন্টারও বেশী সময় পার হলেও ডুবে যাওয়া লঞ্চটিকে এখনও উদ্ধার করতে পারেনি উদ্ধার কর্মীরা। সরকারি উদ্ধারকারি জাহাজ প্রত্যয় নারায়নগঞ্জ থেকে ছুটে আসলেও নদীতে পানির স্তর বাড়তি থাকার কারনে চীনমৈত্রী সেতুতে আটকে পরে সেটি। ফলে সেটিকে বাদ রেখে লিফটিং ব্যাগের মাধ্যমে উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছেন উদ্ধারকর্মীরা।
তবে কতক্ষণ নাগাদ উদ্ধার করা সম্ভব হবে তা সময় নিরুপন করে বলতে পারছেনা সংশ্লিষ্টরা। তবে এ বিষয়ে ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন কোষ্টগার্ড, নৌ-পুলিশ নৌবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল।
এ ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়াও সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করর্পোরেশনের মেয়রসহ সংশ্লিষ্ট আরও অনেকে শোক জানিয়েছেন।
লঞ্চডুবির পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা। ঘটনাস্থলে এসেছেন তদন্ত কমিটির প্রধান নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (উন্নয়ন ও পিপিপি সেল) মো. রফিকুল ইসলাম খানও। তবে সিসি টিভির ফুটেজ দেখে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ বলেছেন এটা দুর্ঘটনা নয়-হত্যাকাণ্ড। তিনি নৌপরিবহন মন্ত্রনালয়ের পক্ষ থেকে প্রত্যেক পরিবারকে দেড়লাখ টাকা এবং দাফন কার্য সম্পাদনের জন্য আরো ১০ হাজার টাকা করে দেয়ার ঘোষনা দেন।
তদন্ত কমিটি গঠন :
বরাবরের মত এবারও এ লঞ্চডুবির ঘটনায় ৭ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (উন্নয়ন ও পিপিপি সেল) মো. রফিকুল ইসলাম খানকে প্রধান করে এ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে আগামী ৩ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টসূত্রে জানা গেছে।
এ রিপোর্ট লেখার আগ পর্যন্ত ঘাতক লঞ্চটিকে আটক করলেও পলাতক রয়েছে ময়ুর-২ এর চালক। জানা যায়, আজ ২৯ জুন সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মুন্সিগঞ্জ কাঠপট্টি থেকে প্রায় অর্ধশতাধিক যাত্রী নিয়ে ঢাকায় আসছিলো এমভি মনিংবার্ড নামের একটি যাত্রীবাহিী লঞ্চ। লঞ্চটি ঢাকা সদর ঘাটের কাছাকাছি শ্যামবাজার বরাবর আসলে ফরাশগঞ্জ ঘাট সংলগ্ন কুমিল্লা ডক এরিয়ায় থেকে ময়ূরীরী-২ নামক আরেকটি লঞ্চ পেছনের দিকে ধাক্কা দিলে মর্নিং বার্ড লঞ্চটি ডুবে যায়। এতে এ পর্যন্ত ৩২ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে উদ্ধার কাজে নিয়োজিত ডুবুরি দল।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ জামান বলেন, ধারণা করা হচ্ছে প্রায় ১০০ জন যাত্রী ছিলেন ওই লঞ্চে। এরমধ্যে নিখোঁজ হয়ে যান প্রায় ৬০- ৭০ জন। তা থেকে এরইমধ্যে ৩২ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।