ব্রিটিশ ভারতে ১৮৩৯ সালে প্রথম গঙ্গার উপর বাঁধ তৈরী হয়। উচ্চ গঙ্গা খাল তৈরী করা হয় ১৮৫৪ সালে। শাখা খাল সমেত ৫৯৫৬ মাইল খাল খনন করে শুরু হয় হিমালয় থেকে নেমে আসা গঙ্গার জল বন্টন। সেই থেকে একের পর এক বাঁধ নির্মাণ ভারত উপমহাদেশের ধারক ও বাহক নদীর শোষণ আজ ও অব্যাহত।
সাধারণ মানুষের প্রতিবাদ -প্রতিরোধ কোন দিনই এই শোষণ কে স্তব্ধ করতে পারেনি। শুধু উত্তরাখন্ড হিমালয়ে প্রায় ২০০টি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প করতে চায় সরকার। যার মধ্যে ৩৭ তৈরী বেশ কিছু নির্মীয়মান বা অদূর ভবিষ্যতে তৈরী হবে।
গাঙ্গেয় অববাহিকা জুড়ে এর প্রতিবাদ হচ্ছে। গত বছর অনশনের ১১২ তম দিনে ১১ অক্টোবর স্বামী সানন্দ ( অধ্যাপক জি ডি আগারওয়াল) আত্মবলিদান করেন। স্বামী গোকুলানন্দা, স্বামী নাগ বাবা ও স্বামী নিগমানন্দ সরস্বতী গঙ্গার অবিরল-নির্মল ধারার জন্য আত্মবলিদান দিয়েছেন। হরিদ্বার এর কাছে কংখলে মাতৃসদন আশ্রমে স্বামী সানন্দজী র আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে গত ২৪শে অক্টোবর থেকে অনশন তপস্যা করছেন ব্রহ্মচারী আত্মবোধানন্দ। একই দাবীতে ২৪শে জুন থেকে অনশন তপস্যা করছিলেন সন্ত গোপাল দাস।
গত ৪ ডিসেম্বর থেকে প্রশাসনের হেফাজত থেকে নিখোঁজ হন অথচ সরকারের তরফে কোন বক্তব্য বা উদ্ধার এর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। হিন্দুত্বর ধ্বজাধারী বিজেপি সরকার একের পর এক সন্যাসীর আত্মবলিদান সম্পর্কে সম্পূর্ণ উদাসীন। ভারত বর্ষ এক অদ্ভূত সময়ের মধ্যে চলছে এক দিকে সাধুদের জন্য ভাতা ঘোষণা করছে সরকার অন্য দিকে সন্যাসীর আত্মবলিদান কে অবজ্ঞা করা হচ্ছে। মাতৃসদন আশ্রমে ২৬ বছর বয়সী ব্রহ্মচারী আত্মবোধানন্দ গঙ্গার অবিরল-নির্মল ধারা এবং গঙ্গত্ব (গঙ্গার নিজস্ব গুণ) অক্ষুণ্ণ রাখার আমরণ অনশন তপস্যা আন্দোলনের কোন রকম আলোড়ন সৃষ্টি করতে পারছে না। তাই, ভারতবর্ষের বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসা প্রতিনিধি ১৯-২০ জানুয়ারি মাতৃসদন আশ্রমে মিলিত হন। ব্রহ্মচারী আত্মবোধানন্দর অনশন তপস্যার বিষয় দেশ জুড়ে প্রচার প্রতিরোধ গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে সহমত হন। সেই ক্রমে গত ২৮ জানুয়ারি থেকে লাগাতার ধর্না শুরু হয়েছে দিল্লীর যন্তর মন্তরে। দেশ জুড়ে বিভিন্ন কর্মসূচীর সঙ্গে বাংলাতেও প্রচার প্রতিরোধ শুরু হয়েছে। ২৭শে জানুয়ারি রানাঘাট নেচার ফার্স্ট এর উদ্যোগে রানাঘাট সিদ্ধেশ্বরী তলাতে একটি প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
অনশন এবং ধর্ণা অবস্থান অনুষ্ঠিত হয় বারাকপুর ধোবী ঘাটে। বারাকপুর ও শ্রীরামপুর ফেরি পারাপারের গুরুত্বপূর্ণ এই ঘাটে ২০ জন প্রতিকী অনশনে বসেন। কোন প্রতিনিধি ১২ ও ২৪ ঘন্টা অনশন করেন বাংলার নদী কর্মীরা। যাদের মধ্যে ছিয়াশি বছরের বৃদ্ধ থেকে পনেরো বছর বয়সী বালকও ছিল।
বারাকপুর পরিবেশ বান্ধব মঞ্চের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এই অবস্থানে প্রত্যক্ষ ভাবে ২০ টি সংগঠন উপস্থিত থাকেন। প্রায় ২০০জন উপস্থিত হয়ে ছিলেন অবস্থান স্থলে। গুরুত্বপূর্ণ ফেরী ঘাট হওয়ায় কয়েক হাজার মানুষ এই কর্মসূচী সম্পর্কে অবহিত হন। বারাকপুর স্টেশন থেকে সকাল ১০টায় বর্ণাঢ্য পদযাত্রা ধোবী ঘাট পৌছায় ১১ টার সময়।
ধর্ণা মঞ্চে উপস্থিত হন প্রাখ্যাত লেখিকা জয়া মিত্র। নদী বিশেষজ্ঞ সুপ্রতিম কর্মকার। আই এস আই এর বিজ্ঞানী দেবাশীষ সেনগুপ্ত। গঙ্গা মুক্তি আন্দোলন এর বিজয় সরকার। বাংলার নাগরিক ও পরিবেশ আন্দোলনের নেতৃত্ব নব দত্ত। বিশিষ্ট সাংবাদিক প্রসূন আচার্য। নদী বাঁচাও জীবন বাঁচাও আন্দোলন এর নদী কর্মীরা। গান, কবিতা সহ আলোচনা চলে বিকেল ৫.৩০মি. পর্যন্ত। কবি বারুদ গুপ্তের কবিতায় সুর দিয়ে গঙ্গার বাস্তব সমস্যা বর্ণনা করেন শিল্পী বিজ্ঞান বন্ধু ভট্টাচার্য। বারাকপুর পরিবেশ বান্ধব মঞ্চের সম্পাদক কল্লোল রায় এমন কর্মসূচীর গুরুত্ব আলোচনা করেন। তাপস বিশ্বাস ও রুপালী চাকলাদার সারা দিন কর্মসূচী পরিচালনা করেন।
আরো পড়তে পারেন….
“নদী দিয়ে আগামীদিনে সমস্ত স্তরের মানুষকে জাগাতে চাই”
নদ-নদী দখলকারীরা নির্বাচন করার ও ঋণ পাওয়ার অযোগ্য হবেন : হাইকোর্ট
নেত্রকোনায় মগড়া নদীকে দখল, দূষণমুক্ত ও খননের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত
নদী রক্ষা আন্দোলন কর্মী, কলকাতা, ভারত।