শঙ্খ নদ : দ্যা রিগ্রাই খিয়াং ।। মুহাম্মদ মনির হোসেন

শঙ্খ নদ

একটি বাঁক পেরিয়ে আরেকটি বাঁক মানেই নতুন সৌন্দর্যের সংজ্ঞা খোঁজা। যেন নদীর গতিপথ এখানেই শেষ, তবে সেটি নিছক মরীচিকা। আরেকটি বাঁক নিয়ে যাবে নিরুদ্দেশের দিকে। এটিই ‘শঙ্খ’ নদ। স্থানীয়রা একে ‘রিগ্রাই খিয়াং’ বা ‘স্বচ্ছ নদী’ নামে ডাকে। শঙ্খের সাথে আমার পরিচয় ২০১০ সনের শেষের দিকে। বান্দরবান থেকে রুমা যাওয়ার পথে মিলনছড়িতে তার সাথে প্রথম দেখা। পাহাড়ের উপর থেকে দেখা শঙ্খকে খুবই আকর্ষণীয় মনে হয়েছিল। দূর থেকে এক পলক দেখেই তার প্রতি ভাল লাগা শুরু। তারপর রুমা যাওয়ার পর আবার ভাল করে দেখা ও অনুভর করা। তাতেও মন ভরেনি। তাই নৌকা…

আমার ছেলেবেলার বড়নদী ।। মু আ লতিফ

বড়নদী

আমি যখন ছোট ছিলাম তখন আমার একটা বড়নদী ছিলো। এখন আমি বড় হয়েছি, এখন সেই নদী ছোট হতে হতে প্রায় মিলিয়ে গেছে। আমি কোনোভাবেই আমার ছেলেবেলার নদীর সাথে একে মিলাতে পারি না। আমার মন ভারাক্রান্ত হয়, আমি বড় কষ্ট পাই। আথচ ছেলেবেলায় এই নদীই ছিলো আমার ভালোবাসা। আমার শৈশব-কৈশর নদীর জল, জলের নিরবধি বয়েচলা, বর্ষায় টই-টম্বুর স্রােতধারার সাথে মিশে ছিলো। শুধু কী তাই- আমার শরীর-মন ও আমার চৈতন্যকে বিকশিত করেছিলো আমার প্রিয় ভালোবাসার এই নদী। আমার জন্মভিটা থেকে তিন’শ গজ দূরেই ছিলো সেই নদী। সেই নদীতে সাঁতার কাটা, বন্ধুদের নিয়ে…

আমলাচাতর গ্রামের ভুজুং মাঝি ও অজয় নদীর পাথর ।। দিবাকর দাস

আমলাচাতর

সে অনেক বছর আগের কথা, ভুজুং তখন জোয়ান। তার বাড়ি ছিল আমলাডিহি গ্রামে (বর্তমান নাম আমলাদহি)। এখন যেখানে চিত্তরঞ্জন রেল শহরের চব্বিশ নম্বর (নামের) স্কুলটা আছে তার পাশে। তার বাড়ির দাওয়ায় একটা কাঁঠাল গাছ ছিল। পূর্ব দিকে অনেকটা নিচু জায়গা। বর্ষাকালে সেখানেই মাছ ধরত তারা ছোটো বেলায়। এখন সে টাঙ্গির এক কোপে শ্যাওড়া গাছ কাটে। একদিন গাঁয়ে নেমে এল শোকের ছায়া। তাদের ভিটে ছেড়ে চলে যেতে হবে। সেখানে নাকি শহুরে বাবুদের জন্য থাকার বাড়ি হবে। ভুজুং বুঝতে পারে না, তাদের কেন বাড়ি ছেড়ে যেতে হবে। এত ট্যাঁড় জমি। বানাক না…

রাইন আমার প্রিয় নদী : যেমন আত্রেয়ী আর আন্ধারমানিক ।। তুহিন শুভ্র মন্ডল

রাইন

যে নদীর পারে আমার জন্ম, সেই আত্রেয়ী তো আমার প্রিয় হবেই। আমার মন-প্রাণ তাতে জুড়ে থাকবেই নদীর জলে সাথে মাছের মতো। কিন্ত যে নদী আমি দেখিনি কোনও দিন সে নদী? সে নদীও তো প্রিয় হতে পারে। যেমন রাইন। তাকে যে মনশ্চক্ষে দেখেছি অনেকবার। শিরা উপশিরায় প্রবাহিত তার জলের ছন্দ। আর আন্ধারমানিক? তাকে দেখেছি একটা বৃষ্টি ঝিরঝির মায়াবী সকালে। সূর্যের আলো যার জলে হয়তো আমারই পূর্বপুরুষের ছবি এঁকে রেখেছিল। তাই তার কথা এত মনে হয়। ঢাকার সদরঘাটে বুড়িগঙ্গা থেকে এম ভি, সুন্দরবন লঞ্চে নদী সমূহের জলে ভাসতে ভাসতে,  জলের হাওয়ায় মন…

এই মৃত নদী আমার তিস্তা না ।। শুভময় পাল

মৃত নদী

‘ছলাৎ ছল ছলাৎ ছল ছলাৎ ছল ঘাটের কাছে গল্প করে নদীর জল’ না, আমার তিস্তা এমন নদী না; গল্প সে করে, তবে সে গল্প নামনাজানা পাহাড়ি ঝরনার, সে গল্প প্রায় ভুলে যাওয়া আদিম জনজাতির। সে গল্প দুরন্ত, চঞ্চল, উচ্ছল। আমার তিস্তা অভিমানী, বেপরোয়া। শীতের বেলায় প্রায় মরা সোঁতা, বর্ষাকালে উপচে পড়া তাথৈথৈ। আমার বাড়ি তিস্তার পারে ছিল বললে খুব ভুল বলা হবে না। জলপাইগুড়ির হাকিমপাড়া, সরু একটেরে গলিতে প্রায় শেষে এক ভাড়া বাড়ি। বাঁশের ছেঁচার বেড়া, লঙ্কা জবার গাছ, এগোলে তপনদের খাটাল আর বিষ্ণুদা’দের বাড়ি। নীল অপরাজিতা ফুটে থরে থরে।…

আমার নদী…তুই ডাকলেই সাড়া দেয় যারা ।। সুস্মিতা চক্রবর্তী

আমার নদী

প্রথম নদী চিনিয়েছিল আমায় সহজপাঠ। সে নদী ছিল আমারই দোসর যেন। কুল, করমচা, বাঁশঝাড়ে দৌড়ে বেড়ানো শিশুকালের মতোই সে চেনা চৌহদ্দির ছোট নদী। তাকে চেনে গাঁয়ের হাট, পাড়ার ঘাট। আমারই মত, তার দুনিয়াখানাও বুঝি দিব্যি এঁটে যায় একখানা পুতুলের বাক্সের মাপে। তার হাঁটুজলের পৃথিবীটিতে সে এঁকে দিতে দিতে চলে আঁকিবুঁকি খুশি। তারপর সহজপাঠ ফুরিয়ে আসে একদিন। আমার  মফস্বলের বড় হতে থাকা দিনগুলোয় নদী ছিল না কোন। কালেভদ্রে যাওয়া হত খানিক দূরের দক্ষিণেশ্বরে। সেখানে যে জলধারা আমার কাছে সে ছিল নিতান্তই ভূগোলের দাপুটে নদী। তার বুকে ভেসে যায় পুজোর মানত, পুণ্য…

ঘুসকি, একটি সম্ভাবনার নাম ।। কৌশিক বিশ্বাস

ঘুসকি

অন্তঃদেশীয় জলাভূমির ক্ষেত্রে অবিভক্ত দিনাজপুর এক গুরুত্বপূর্ণ নাম। বর্তমান দিনাজপুরে হারিয়ে গেছে অনেক নদী। আজ আমরা আত্মবিস্মৃত আমাদের হারিয়ে যাওয়া নদীর ইতিহাস নিয়ে। এরকম অনেক নদী পরিণত হয়েছে খাঁড়িতে। ঠিক এমনই একটি নদী ঘুসকি। ইংরেজ সমীক্ষক মন্টেগোমারি মার্টিন ১৮০৮ সাল নাগাদ তাঁর সমীক্ষাপত্রে এই ঘুসকি নদীর উল্লেখ করেছেন। এই ঘুসকি নদীই বর্তমান সময়ে ঘুপসি খাঁড়ি নামে বহুল প্রচলিত। ঘুসকি নদীর গতিপথ আমাদের আশ্চর্য করে। এই নদীর প্রাচীন ইতিহাস নি:সন্দেহে এক গৌরবময় অধ্যায়ের সামনে আমাদের দাঁড় করিয়েছে। বাংলাদেশ থেকে ফুলবাড়ি দিয়ে গোপালবাটি, অমৃতখন্ড, চিঙ্গিশপুরে এই তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত…

স্মৃতির লোহালিয়ায় আজও ভাসে মন ।। মো.ইউসুফ আলী

স্মৃতির

নদী বিধৌত জেলা পটুয়াখালীতে আমার জন্ম হলেও আমাদের বাড়ির আশেপাশে কোনো নদী নেই। তবুও মনের দিক থেকে নদী ছিলো আমার অসম্ভব পছন্দের। শৈশব-কৈশোরে নদীকে ঘিরে অনেক স্বপ্নও ছিলো আমার। কিন্তু শৈশব-কৈশোরের সব স্বপ্নকী সবার পুরণ হয় ? সে যা-ই হোক অন্যদের কথা না-ইবা টানলাম। আমার সে সব স্বপ্ন আজও অধরাই পরে রইলো। তবে খাল-বিল, নদী কিংবা জল ও মাছের প্রতি অসম্ভব রকমের টান আজও আমার রয়েছে। কিন্তু কি আর করার শহরে বসবাস। আচ্ছা সেই শৈশবেই আবার ফিরে যাওয়া যাক। ঘুরে আসি কতক্ষণ সেই ছেলেবেলার কথকতা নিয়ে। যা বলছিলাম যে আমাদের…

সে, আমি ও আত্রেয়ী ।। সুদর্শন ব্রহ্মচারী

আত্রেয়ী

নদীটা চুপসে গেছে। রতন হালদার মন খারাপ করে বাউলার ভেক ধরেছে। জাল বুনতে বুনতে সে গুনগুন করে। হাঁসগুলো দল বেঁধে যেতে যেতে হঠাৎ ছড়িয়ে পড়ে। দু’এক জোড়া উল্টো দিকে মাঝনদিতে ছুটে যায়।নীল রঙের মাছরাঙা উড়ে এসে ছোঁ মেরেই পালায়।পানকৌড়ি ডূব মেরে সাঁতরে ছুটে পালায়।নিরিবিলিতে হংসমিথুন দেখতে দেখতে বাউলা রতন গান ধরে, “জ্বলে পুড়ে মরল রাধা যৌবন জ্বালায় যখন ডাকল বাঁশি তখন রাধা যাবে যমুনায়…।” প্রেমপূজারী বাউলা একা একা দেহতত্বের পাঠ নেয়।জল চিকচিক করে। নৌকায় বাঁধা বাঁশের মাথায় সাদা সাদা মাছরাঙা চড়ুই পাখির মতো প্রেম করে উড়ে যায়। বাঁশির সুরে নদী…

নদী একটাই ।। রাজেশ ধর

রাজেশ

‘নদী’…কলকল, কলকল… ঢেউতোলা এই শব্দটা প্রথম কবে শুনেছিলাম ? কবে প্রথম ‘নদী’র ডাকে  বুকের রক্ত ছলকে উঠেছিল? প্রথমবার কবে জেনেছিলাম নদী আসলে জলের ধারা…সে জল শীতল, মিষ্টি আবার কখনও নোনা পানি!  সেদিন কি জেগেছিলাম? নাকি ছিলাম ঘুমিয়ে…স্বপ্নের মধ্যে? দুই কুল…দুপারকে বেঁধে রাখতে রাখতে এক নিমেষেই নদী… সব গিলে খেয়ে নিতে পারে!  নির্বিচারে মুছে যেতে পারে– ডাঙা, ফসল, গাছপালা,… সাতমহলা কীর্তির অহংকার। নদী নাকি সে নিয়তি? তারই বা জ্ঞান হল কবে? জানি না…বলতে পারব না। দুই.  জন্ম থেকে প্রায় বছর তিরিশ পর্যন্ত এক বিশাল ঘিঞ্জি শহরে বাস আমার। সে শহরের পশ্চিম…

কালনির স্নিগ্ধতায় আমার ছেলেবেলা ।। আলম মাহবুব

কালনির

কালনি! এই কালনি নামের সাথে মিশে আছে হাজার বছরের ইতিকথা। আমি বলছিলাম কিশোরগঞ্জ জেলার হাওর বেষ্টিত অষ্টগ্রামের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া মেঘনার শাখা কালনি নদীর কথা। আবহমান গ্রামবাংলার নদীর আত্মপ্রকাশে চিরচেনা এই ভাটির জনপদের কালনি নদীর তীরেই গড়ে উঠেছে বহু জনপদ, আছে অনেক রত্নগল্প। যা আজ কিছুটা তুলে ধরতে চেষ্টা করছি। কিশোরগঞ্জের সীমান্ত ঘেঁষে থাকা এই নদীটি কোন একসময় খরস্রোতা নব যৌবনায় ভরপুর ছিলো। বিস্তীর্ণ হাওরের বুকের প্রশস্ত সবুজে কৃষকের ক্লান্তি, হতাশার একমাত্র অবলম্বন এই কালনি। যার উৎপত্তি কিশোরগঞ্জ জেলা ও বি- বাড়িয়া জেলার সীমান্ত নির্ধারণকারী মেঘনার শেষ ভাগ হতে…

নদীর নাম মুজনাই ।। শৌভিক রায়

মুজনাই

নদী মানেই প্রবাহ। আর প্রবাহ মানে জীবন। তাই নদী বাদে জীবনকথা সম্পূর্ণ হতে পারে না। আবার, জীবনসঙ্গীত গায় কিন্তু তথাকথিত ব্রাত্যজনেরা। আবহমানকাল ধরে তারাই সচল রেখেছে জীবনের জয়যাত্রা। ঠিক একইভাবে, নামীদামী বৃহৎ নদ-নদীর পাশাপাশি, ছোট্ট ছোট্ট নদীরা ধরে রেখেছে সভ্যতার মূল চালিকাশক্তিকে। পশ্চিমবঙ্গের উত্তরদিকে,  জানা-অজানা অজস্র নদীর রুদ্ধকথা সেই শক্তিকেই বিবৃত করছে। ভুটান পাহাড়ের দক্ষিণ বনাঞ্চলে আট হাজার উচ্চতায় জন্ম নেওয়া ‘রঙ্গোরি’ নামের নদীটিও ঠিক এমনই। তবে উৎসমুখের নামে নয়, তার অধিক পরিচিতি ‘মুজনাই’ নামে এবং এই উৎস নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। কেননা উৎস থেকে যে প্রবাহ দেখা যায় তার খাত…