প্রিয় না হয়ে ওঠা একটি নদী ।। তাপস দাস

তাপস

রাস্তার নাম “করুণাময়ী ঘাট রোড”। ‘ঘাট’ কোন কালে ছিল?  সেই ঘাটের রাস্তায় কারা, কোথায়, কোথায় যাওয়া-আসা করতেন?  কী ছিল ঘাটের কড়ি?  সঙ্গে থাকতো কী?  জানা নেই। কে জানেন তাও জানা নেই। আমার ঐ পথ দিয়ে যাওয়া-আসা শুরু হয় ১৯৮৬-৮৭ সালে। তখনো করুণাময়ী ব্রীজ হয়নি। গাড়ী পথে কলকাতার সঙ্গে যোগাযোগ সিরিটি-ভাটিখানা-মহাবীরতলা হয়ে টালিগঞ্জ ব্রীজ পার পথে। সোদপুর বাজারে বাসের অপেক্ষায় দাঁড়ানো পথিককে কোথায় যাচ্ছো প্রশ্ন করলে উত্তর আসতো, “কলকাতা যাচ্ছি”। বেহালা মিউনিসিপালটি ‘এডেড এরিয়া’’রূপে কলকাতায় যুক্ত হলেও পুরনো অভ্যাস তখনো রয়ে গিয়েছে। আর হবে নাই বা কেন বড় বড় ইট ভাটার…

প্রিয় নদী ।। মনোনীতা চক্রবর্তী

প্রিয় নদী

জল উঁচু-নীচু হলে বড়ো মায়া পড়ে যায়। জল যখন খেয়ালে গান গায় এবং গাইতে-গাইতে যখন হঠাৎ তার ভয়েস-চোকড হয়ে যায়; যখন কান্নাগুলো পোশাক পরতে গিয়ে আসলে পোশাক খুলে ফেলে; দৃষ্টিলক্ষ্য যখন ভেঙে টুকরো-টুকরো হয়ে যায়, যখন লাজুক চাঁদের ধারালো চোখের ছায়া জলের ওপর পরে, যখন একটা উত্থিত দুপুর বিকেলের যৌথ-গান হয়ে ঝরে পড়ে আর চরাচর মুখর হয় সভ্যতা-গানে.. ঠিক তখন পরিকল্পনাহীন ছুটে যাই প্রিয় নদীটির কাছে। হ্যাঁ, খেয়ালে-আড়ালে; অভাবে-অভিমানে ধুমধাম প্রেমে ভিজলে শ্বাসের ওঠা-নামা যেমন করে হয়, ঠিক সেভাবেই আমি ছুটে যাই তার কাছে। প্রিয় নদীটির কাছে। ডক নদী; সে-নদীটির…

টাঙ্গন : আমার প্রিয় নদী ।। ড. অমর কুমার পাল

টাঙ্গন

টাঙ্গনের সঙ্গে আমার সম্পর্ক মায়ের সঙ্গে সন্তানের সম্পর্কের মতো। টাঙ্গন আমাকে শিখিয়েছে মানব জগতের সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত জীবজগৎকে ভালোবাসতে। টাঙ্গন আমার অন্তরের ক্ষুদ্রতাকে দুইহাতে সন্তর্পনে আলগোছে সরিয়েছে। মনের দৈন্যতা, সংকীর্ণতা, হীনমন্যতা ঝেড়ে ফেলে জীবনযুদ্ধে কীভাবে অনমনীয় মনোভাব নিয়ে মোহনার দিকে এগিয়ে যেতে হয় তার পাঠ আমি টাঙ্গনের কোলে বসে নিয়েছি। টাঙ্গন নামক অখ্যাত নদীটি তার সমস্ত সত্তা দিয়ে চেষ্টা করে যায় আজও রাইখোরের জোগান দিয়ে আমাদের রসনাকে আর মৎসজীবীদের আর্থিক দিককে তৃপ্ত করতে। দারিদ্র্যতা তার আলুথালু বেশ ও বারিহীন রুক্ষকেশ দেখে একনজরেই ঠাহর করা গেলেও তা নিয়ে তার নেই কোনও…

প্রিয় নদী ‘গঙ্গা’ ।। ডা. শর্মিষ্ঠা কর

প্রিয়নদী

অফুরান কথা আর প্রাণোচ্ছ্বলতা আমার স্বভাবসিদ্ধ বলে বাংলার মাষ্টারমশাই আমার নাম দিয়েছিলেন স্রোতস্বিনী। নদীর সম্পর্কে আমার প্রাথমিক আগ্রহ তৈরী হয়েছিলো বাবার দরাজ গলায় শোনা গান শুনে শুনে…. ও নদীরে একটি কথা-ই শুধাই শুধু তোমারে, আমায় ডুবাইলি রে আমায় ভাসাইলি রে, এ নদী এমন নদী, জল চাই একটু যদি দুহাত ভ’রে উষ্ণ বালুই দেয় আমাকে ! দুর্বোধ্যতার এক অদ্ভূত রহস্য ঘনীভূত হতো মনের মধ্যে নদীকে ঘিরে। শ্রদ্ধেয় সমরেশ মজুমদার লিখেছিলেন- “যে নদীর সঙ্গে শৈশব জড়িয়ে থাকে, যে নদীকে একসময় প্রায় বন্ধুর মতো মনে হয়, তার জন্যে যে ভালোবাসা তা আজন্ম থেকে…

নদীর নাম বলাকুট ।। মনির হোসেন

বলাকুট

সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক তাঁর ‘আমার পরিচয়’ কবিতায় লিখেছেন-‘তেরশত নদী শুধায় আমাকে কোথা থেকে তুমি এলে?’ নদীর কলকল ধ্বনির এমনই প্রশ্নে আমি বলবো, ‘আমি এসেছি বলাকুট নদীর তীর থেকে। আমার স্মৃতিময় বলাকুট। আমার শৈশব-কৈশোরের বলাকুট। কুশিয়ারা নদীর অববাহিকায় বহমান বলাকুট এর জলে আমার তৃষ্ণা মিটে। বলাকুট নদী নয়, বলাকুট আমার মা। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের ব্রহ্মপুত্রের তীরে আমার জন্ম। বাবার কর্মস্থলের সুবাদে ইটনা থানার জয়সিদ্ধিতে বসবাস। সুদীর্ঘসময়, আবাল্য, শৈশব-কৈশোর দুরন্তপনার সবগুলো অধ্যায় কেটেছে বলাকুটের তীরে শান্তির নীড়ে। নদীর উৎপত্তিস্থল সুনির্দিষ্ট না হলেও হবিগঞ্জ জেলার আজমেরীগঞ্জ এর নিকটে কুশিয়ারা বা কালনী…

সুন্দরী সোমেশ্বরী ।। আব্দুস সামাদ নয়ন

সোমেশ্বরী

নদ-নদী এদেশের সৌন্দর্যের অন্যতম এক অনুষঙ্গ। তেমনি অপার্থিব সৌন্দর্যের রাণী নেত্রকোণা জেলার সোমেশ্বরী নদী। এ নদীকে স্মরণ করতে গেলে শ্রদ্ধাবনত চিত্তে শুরুতেই স্মরণ করতে হয় টঙ্ক আন্দোলনের বিপ্লবী নেত্রী হাজং বিদ্রোহে সর্বোচ্চ শ্রদ্ধেয় স্বজন, যিনি হাজংদের কাছে আজও হাজং মাতা সেই শহীদ রাশিমনি হাজং সহ শঙ্খমণি, রেবতী, নীলমণি, পদ্মমণি ও আরো অনেক শহীদদের নাম। যারা সোমেশ্বরী নদীর ধারে টঙ্ক আন্দোলনের জন্য শহীদ হন। এ ছাড়া স্মরণ করতে হয় টঙ্ক আন্দোলনের প্রয়াত বিপ্লবী সর্বজন শ্রদ্ধেয় কমরেড মনি সিং কে। যিনি এই সোমেশ্বরীকে ভালোবেসে বড় হয়েছিলেন। এক অসাধারণ মায়াবী সুন্দরী নদী সোমেশ্বরীর…

যে নদীকে কেবল ভাসিয়ে দেওয়া গেল ।। সুপ্রতিম কর্মকার

সুপ্রতিম

লেখা শব্দগুলো ভেসে বেড়াচ্ছে। নৌকার খোলের মত করে। জলের ওপর বা পানির ওপর। ঠিক এখনো জানি না, জলের ওপর পানি! না পানির ওপর জল! শুধু এটাই জানি, ওই দুটো গ্যাসীয় পদার্থ একে অন্যের সঙ্গে মিলে মিশে তৈরি করে একটা তরল পদার্থ। জীবন বাঁচাতে ঐ রঙহীন তরলের মতন আর বিকল্প তরলের জন্ম হল না, এই বিশ্ব চরাচরে। আর সেই না হওয়ার কারণেই জলের মতন সহজ আর জলের মত দামীও কেউ হল না। জীবনকে প্রজাপতির মত রঙ্গিন দেখতেই পছন্দ করে সবাই। কিন্তু জল তার কোন রঙ নেই। কোন গন্ধ নেই। কোন স্বাদ…

সে এক মায়াবী নদী ।। সৈয়দ কামরুল হাসান

মায়াবী

ফুলের গন্ধটা তীব্র হয়ে নাকে লাগে। হু হু করে যখন বাতাস বইতে শুরু করল ঠিক তখন ঘুম ভেঙ্গে যায় আমার। কিন্তু এই নৌকায় ফুলের গন্ধটা  কোত্থেকে আসবে বুঝতে পারিনা প্রথমে। পরে কারণটা ধরতে পারি ধীরে সুস্থে। আসলে আমি মায়ের কোলে শুয়ে ছিলাম। মায়ের কোলে শুয়ে আশৈশব পেয়েছি এই ফুলের ঘ্রাণ। বড় হয়ে যখন কারণটা বুঝতে পেরেছি, ততদিনে মা আমাদের মায়া ত্যাগ করে পরপাড়ে পাড়ি জমিয়েছেন। মায়ের পছন্দ ছিল জবাকুসুম তেল, বরাবর বাবা তাই বাড়ি এনে দিয়েছেন, মা সেই তেল মাখতেন চুলে। কিন্তু, কারণ সনাক্ত হবার আগেই সেই যে অবুঝ শিশুর…

প্রাণের দোসর কালীগঙ্গা ।। সন্তোষ কুমার শীল

কালীগঙ্গা

জীবনের দৈনন্দিনতাটুকু আড়াল হলেই কল্পনায় শুনতে পাই দশদিক কাঁপিয়ে স্টীমারের ভোঁ বেজে উঠছে। অসংখ্য যাত্রীর ওঠানামায় কলমুখর হয়ে উঠেছে কালীগঙ্গার তীর। দারুণ নস্টালজিয়া ভর করে। ছুটে যাই নদীর তীরে। দেখি বিশ্বকবি একটা চেয়ার টেনে জানালার ধারে বসে আনমনে লিখে চলছেন। দখিনা বাতাসে তাঁর আলখেল্লা উড়ছে, শুভ্র দাড়ি-চুল বিপর্যস্ত। কোনদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই তাঁর, ধ্যান-মৌন ঋষি সৃষ্টিশীলতায় মগ্ন। তাঁকে ঘিরে রয়েছে একটা উজ্জ্বল জ্যোতি। হ্যাঁ, সেদিনের খরস্রােতা কালীগঙ্গার বুকের ওপর দিয়ে তুমুল আলোড়ন তুলে চলত কোলকাতা থেকে বরিশালগামী স্টীমার “সরোজিনী”। রবীন্দ্রনাথের মেজদা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর বিলেতি কোম্পানীর সাথে পাল্লা দিয়ে এই জাহাজের ব্যবসায়…

নদীর আঁচল ।। আলিফ আলম 

আঁচল

‘নদ- নদী’ শব্দ দুটি  অনেকটা পুরুষ  আর নারী বাচকতা শব্দের সঙ্গে অবলীলায় মিলে যায়। তাদের গতি-প্রকৃতিও বেশ খানিকটা নর-নারীর মতই। মানুষের মতই তাদের রয়েছে শৈশব, যৌবন, মাঝবয়স আর বৃদ্ধকাল। উৎস থেকে  উৎপত্তি  হয়ে প্রাকৃতিক সৃষ্ট এই জলধারা একদিন সাগর, মহাসাগর কিংবা হ্রদে মিশে যায়। এই  মিশে যাওয়া ব্যাপারটা  তাদের সহজাত। কানাডার কুইবেক প্রভিন্সের মন্ট্রিয়াল শহরের গা ঘেঁষে যে নদী বয়ে গেছে তার নাম ‘সেন্ট লরেন্স’  Saint Lawrence River । আগে এর নাম ‘Magtogoek’ ছিল পরে যা পরিবর্তন করা হয়েছে। নদীটির দৈর্ঘ্য- ১১৯৭ কিমি. এবং যার উৎপত্তির স্থল অন্টারিও হ্রদ। কুইবেকের …

আড়িয়াল খাঁ নদ- স্মৃতি ও বাস্তবতায় ।। হাসান মাহবুব

আড়িয়াল

জীবনের অনেকটা সময় কেটেছে যে নদীর কাছে, নদীর নাম মনে এলে যে ছবিটা ভেসে ওঠে প্রথমে, সে আমার শৈশবে একদিন হাঁটতে হাঁটতে নিজ থেকে খুঁজে পাওয়া নানাবাড়ির কাছের নদীটা। অনেকটা শীত বসন্ত গ্রীষ্মে প্রকৃতি বদলেছে তার রূপ, নদীটাও সেই সাথে তাল মিলিয়ে নানাভাবে দেখিয়েছে তার যৌবনদৃপ্ত খেলা, কখনো ম্রিয়মান হয়ে নিরবে বয়ে গেছে, বুক পেতে জায়গা করে দিয়েছে অনেক স্মৃতির, জন্ম দিয়েছে নানান বাস্তব-অবাস্তব গল্পের। যে নদীর কথা বলছি সেটা ঠিক নদী নয়, নদ, আড়িয়াল খাঁ নদ। সাধারনত প্রাত্যহিক নানা প্রসঙ্গে এর কথা এলে- নদী বলেই ডাকা হয়। যাইহোক, এই…

আমাদের ছোটো নদী ।। গৌতম অধিকারী

আমাদের

সেই কবে রবি ঠাকুর লিখেছিলেন, আর শৈশববেলায় মন্ত্রের মতো আউড়ে গেছি আমরা, নদীস্রোতের মতোই খলবল করে উঠতে গোটা ক্লাসরুম, আমাদের ছোটো নদী চলে বাঁকে বাঁকে, বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে। পার হয়ে যায় গরু, পাড় হয় গাড়ি, দুই ধার উঁচু তার ঢালু তার পাড়ি। আমি অবশ্য জন্মেছি এমন একটি ছোট্ট নদীর পাড়ে, ততোধিক ছোট্ট গ্রামে। কিন্তু নদীর সঙ্গে সখ্য গড়ে-ওঠার মে স্বাধীনতা দরকার, তা তো ছিল না শৈশবের কালে। সেই স্বাধীনতা কিঞ্চিৎ মিলল কিশোরবেলায়। এক নদীকে পেলাম, নাম তার ছোটো ভৈরব। মুর্শিদাবাদ জেলার হরিহরপাড়া আর ডোমকল ব্লকের বিভাজন-রেখা ছোটো…