চাঁদপুরের নদী, প্রকৃতি ও ইলিশ ।। সৌম্য সালেক

ইলিশ
‘নদীমাতৃক একটি ভূগোল
ঘুরতে ঘুরতে আমি ঘুরে এলাম
উড়তে উড়তে আমি উড়ে এলাম
না কোনো রহস্য ছিল না
না কোন চমক ছিল না
কেবল একঘেয়ে এক ক্লান্তি
দেখতে দেখতে আমি হয়ে উঠি যুগলতা
আমি দেখতে দেখতে খসিয়েছিলাম শরীরের তাবৎ ক্লান্তি
ওম শান্তি, ওম শান্তি’
কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা

আমরা নদীমাতৃক ভূ-ভাগের অধিবাসী। নদীর প্রভাবে আমরা নানাভাবে প্রতীকায়িত হয়েছি। নদীর বাঁধাহীন ছুটে চলার সাথে মিল রয়েছে মানব জীবনের প্রবাহমানতার। নদীর ইতিহাসও মানুষের ইতিহাসের মতোই প্রাচীন এবং বৈচিত্রপূর্ণ। বাংলাদেশের পুরো ভূগোলজুড়ে জালের মতো ছড়িয়ে বিছিয়ে রয়েছে অনেক নদী। শাখা-প্রশাখাসহ প্রায় ৮০০ নদ-নদীর বিপুল জলরাশি এদেশের মধ্য দিয়ে ধেয়ে গেছে বঙ্গসাগরের দিকে। বাংলাদেশে নদীর সাথে জীবন বাস্তবতায় যেমন নিবিড় সম্পৃক্তি রয়েছে, তেমনি আমাদের শিল্প-সাহিত্য-সাংস্কৃতিকেও নদীপ্রসঙ্গ শক্ত-সম্পন্নভাবে যুক্ত রয়েছে।

বাংলার নদী প্রকৃতির নিপুণসব বর্ণনা আমরা খুঁজে পাই কবি রবীন্দ্রনাথের গল্পে গানে ও ছিন্নপত্রের পাতায় পাতায়, আমরা মুগ্ধতার সাথে সেসব পাঠ নিই বাস্তবে- ভাবে ও কল্পনায়। আমরা জীবনানন্দের কবিতার মধ্যে নদীকে পাই প্রশান্ত এবং জীবনের সরল সৌন্দর্যের আকর হিসেবে। বাংলার সকল কবি-সাহিত্যিকের রচনার মধ্যেই নদীর কথা কোন না কোনভাবে এসেছে। মঙ্গলকাব্য থেকে আরম্ভ করে আমাদের গল্প-উপন্যাস-কবিতায়, সংস্কৃতির প্রতিটি অনুষঙ্গে, সংগীতের মধ্যে ভাটিয়ালী, ভাওয়াইয়া, পল্লী, লোক ও ছড়াগানের পুরোভাগ জুড়ে রয়েছে নদীর কথকতা। আধুনিক সাহিত্য ও সংগীতে নদীর আগমন ও অবস্থান বেশ সংহত। প্রকৃতির অতীব গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ও অংশ হিসেবে, বিশেষত বাংলাদেশের মতো নদী-নির্ভর দেশে স্বাভাবিক অনিবার্যতার সাথেই সর্বত্র নদীর কথা চলে আসে। ভারতীয় উপ-মহাদেশের প্রাচীন সাহিত্যের মধ্যেও অনেক নদীর স্বাক্ষাত, বৃত্তান্ত ও ভূমিকা পাওয়া যায়।

বিংশ শতাব্দিতে এসে নদী এবং নদী নির্ভর জীবন-চিত্র আমাদের সাহিত্যে আরও ঘনিষ্ঠভাবে ওঠে এসেছে। এখানে প্রসঙ্গত, নদী নির্ভর আখ্যান বর্ণনায় রচিত উল্লেখযোগ্য কয়েকটি উপন্যাসের শীর্ষনাম উপস্থাপন করছি- পদ্মা নদীর মাঝি : মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়; তিতাস একটি নদীর নাম : অদ্বৈত মল্লবর্মণ; বেদে: অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত; কাশবনের কন্যা : শামসুদদীন আবুল কালাম; ইছামতি: বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়; নদী ও নারী: হুমায়ুন কবির; কাঁদো নদী কাঁদো: সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ; কর্ণফুলী: আলাউদ্দিন আল আজাদ; সারেং বৌ : শহীদুল্লাহ কায়সার; চরকাশেম : অমরেন্দ্র ঘোষ; নদী বক্ষে : কাজী আবদুল ওদুদ; হাঁসুলী বাঁকের উপকথা এবং কালিন্দী : তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়; গঙ্গা : সমরেশ বসু; চর ভাঙা চর : কাজী আফসারউদ্দীন আহমদ; অন্তর্জলী যাত্রা : কমলকুমার মজুমদার এবং জলপুত্র : হরিশঙ্কর জলদাস।

শস্য উৎপাদন, মৎস্য আহরণ, যাতায়াত মাধ্যম, পানি সরবরাহ এবং পর্যটনসহ বহু ইতিবাচক ভূমিকার জন্য আমরা নদীর কাছে ঋণী। নদী এদেশের আন্দোলন সংগ্রামের উপলক্ষ্য হিসেবেও এসেছে বারবার কারণ এখানে জীবন-জীবিকা নির্বাহের ক্ষেত্রেও নদী অত্যন্ত তাৎপর্যবহ। নদীকে নিয়ে বা নদী পাড়ের মানুষের জীবনকথা নিয়ে এ যাবৎ কী পরিমান সংগীত, সাহিত্য এবং শিল্পানুষঙ্গের সৃষ্টি হয়েছে তা নিরূপন ও চিহ্নিতকরণ এক বিরাট গবেষণার বিষয়। তবে গবেষণার ফল যে আমাদের ভাবনাকে হার মানবে এটা নিশ্চিত করে বলা যায়।

নদীমাতৃক বাংলাদেশের নদীকেন্দ্রিক সৌন্দর্যের অন্যতম লীলাভূমি চাঁদপুর। চাঁদপুর শহরে অবস্থিত ত্রিনদীর সঙ্গমস্থলে রয়েছে সমুদ্রতীরে সূর্যাস্ত দেখার মতো আনন্দলাভের দারুন এক পটভূমি। ১৭০৪ বর্গ কি. মি. আয়তনের এ জেলার উপর দিয়ে বয়ে গেছে মেঘনা, পদ্মা, ডাকাতিয়া এবং ধনাগোদা নদী। নদীর বিস্তৃত জলসীমায় মাঝে মাঝে চর পড়েছে; ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে পাল্টে যায় চরের প্রকৃতি; অনাবিল রূপ-লাবণ্যে এই সৌন্দর্য্য পিয়াসুদের হাতছানি দিয়ে ডাকে। চাঁদপুরের উপর দিয়ে দেশের ৯০ ভাগ নদ-নদীর পানি বঙ্গপোসাগরে প্রবাহিত হয়।

জাতীয় মাছ ইলিশের প্রাণকেন্দ্র চাঁদপুর; এছাড়াও এখানে উৎপাদিত হয় প্রচুর খাদ্য শস্য, ফল-ফলাদি। প্রকৃতির এই মনোমুগ্ধকর পরিবেশে সাহিত্য-সংস্কৃতির আবাহন চলছে বহুকাল ধরে। ‘মনসামঙ্গল’ কাব্যে বর্ণিত ‘উজ্জয়িনী’ সম্ভবত এ জেলারই কচুয়া উপজেলার ‘উজানী’। আর এই উজানী গ্রামেই জন্মেছিলেন মধ্যযুগের কবি দোনাগাজী; যিনি আলাওলের পূর্বেই ‘সয়ফুলমূলক বদিউজ্জামান’ কাব্য রচনা করেন। বাংলা সাহিত্যের বিকাশে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী পত্রিকা ‘সওগাত’-এর সম্পাদক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন চাঁদপুরেরই কৃতীসন্তান। কবিগুরুর এক সময়ের গৃহশিক্ষক পণ্ডিত সুরেশ চন্দ্র চক্রবর্তী, বিশ্ব ভারতীর এক সময়ের সহ-অধ্যক্ষ পণ্ডিত হীরেণ দত্ত, ক্বারী ইব্রাহিম (রহ.), স্বামী স্বরূপানন্দ, সাগরময় ঘোষ, বোরহান উদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, বেগম এর সম্পাদিকা নূরজাহান বেগম, শিল্পী হাশেম খান এবং শিল্পী মনিরুল ইসলামসহ অসংখ্য গুণীব্যক্তিত্ব এ জেলাকে আলোকিত করেছেন।

শিল্প-সংস্কৃতির একটি উর্বর জনপদ হিসেবে চাঁদপুরের খ্যাতি রয়েছে। সংগীত, নৃত্য, চারুকলা, আবৃত্তি, নাট্য ও সাহিত্যসহ এখানে প্রায় অর্ধশতাধিক সংগঠন সক্রিয়ভাবে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। জেলার বৃহৎ সাংস্কৃতিক কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- সাংস্কৃতিক মাস উদযাপন, মুক্তিযুদ্ধের বিজয়মেলা, চতুরঙ্গের সপ্তাহব্যাপী ইলিশ উৎসব এবং থিয়েটার ফোরামের সপ্তাহব্যপী নাট্যোৎসব। এছাড়া জাতীয় দিবসসহ ঋতুভিত্তিক নানা আয়োজনে সারাবছর মুখরিত থাকে জেলা শিল্পকলা একাডেমি। চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমিতে মাসের শেষ বুধবার বসে মাসিক সাহিত্য আসর। চাঁদপুর জেলার প্রত্ন-স্থাপনার মধ্যে রয়েছে ফরিদগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত লোহাগড়া মঠ, সাহেবগঞ্জ পর্তুগীজ দূর্গ ও রূপসা জমিদার বাড়ী। কচুয়া উপজেলায় রয়েছে ঐতিহাসিক বক্তার খাঁ মসজিদ (১৭৮২); সাচারের রথ এবং মনসা মুড়া। শাহরাস্তি উপজেলায় রয়েছে মেহের কালী বাড়ী এবং হযরত রাস্তি শাহের মাজার (তিনি ১৩৫১ সালে ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে এদেশে আসেন)। হাজীগঞ্জ উপজেলায় রয়েছে অলিপুর শাহী মসজিদ(আলমগীরি মসজিদ ও শাহসুজা মসজিদ), হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদ এবং নাসিরকোর্ট স্মৃতিসৌধ।

বিখ্যাত ঔপন্যাসিক মানিক বঙ্গোপাধ্যায় তাঁর পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাসের এক জায়গায় নদীর সৌন্দর্য প্রকাশ করতে গিয়ে লিখেছেন- ‘নদীকে সে বড় ভালবাসে; নদীর বুকে ভাসিয়া চলার মত সুখ আর নাই।’ আমরা উপন্যাসটিতে বেশ কয়েক জায়গায় চাঁদপুরের কথা খুঁজে পাই। পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাসটির গভীর পাঠ করলে ধরণা করা যায়-এর পটভূমি আসলে পদ্মা নদীর তীরবর্তী চাঁদপুরের পার্শ্ববর্তী জেলা- বিক্রমপুর বা ফরিদপুর হবার সম্ভাবনা খুব বেশি। সেটি নিয়ে গবেষণায় যেতে চাই না বরং নদীর শোভা কীর্তণে আসি।

নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে শহর-নগর; নদীর সাথে উৎপাদন, বাণিজ্য, কৃষি ও পরিসম্পদের সখ্য যে সুপ্রাচীন তার সম্পর্কে আমরা সকলেই বিদিত। এর বাইরেও নদীর আরও এক আকর্ষণীয় মাত্রা রয়েছে যাকে ঘিরে পৃথিবীর বহু স্থানে পর্যটন শিল্প গড়ে ওঠেছে। বাংলাদেশ নদী ব্যষ্টিত- প্রবাহিত পৃথিবীর অভিনব এক ব-দ্বীপ। নানা কারণে বাংলাদেশে নদীর প্রবাহন কমে গেলেও, যেখানে এলে আজও নদীকে নিবিড় স্বাক্ষাতে অবলোকন করা যায় সে স্থান চাঁদপুর। নদী চাঁদপুরে এসে এলিয়ে পড়েছে, বিস্তৃত জলসীমায় এখানে নদী তার বিচ্ছিন্নতাকে অন্তরাল করছে; এ যেন সাগর সঙ্গমে মিলনের পূর্বরাগ। অস্তরাগে দিনমনি যখন লালের আবাহনী করে স্বরূপ গোটাতে চলে, জলের- জলসায় থেকে থেকে সেই দৃশ্য অপূর্ব স্তবগান তোলে। চাঁদপুরের মোলহেড তথা ত্রিনদীর সঙ্গমস্থলে গোধূলির সেই মনোময় দৃশ্যের যেন তুলনা হয় না। চাঁদপুর দিয়ে পদ্মা ও মেঘনার একযোগে ছুটে চলার পথে অনেক চর পড়েছে। কিছু চরে বসতি হয়েছে বহুদিন, আর কিছু চর অল্পকাল হলো গড়ে ওঠেছে। নদীর সৌন্দর্যকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে তোলেছে চরের প্রকৃতি। চরে যেন ঋতু-অঋতু নেই, সর্বদাই নিবিড় প্রাকৃতি এখানে তার আপনমতো সংসার পেতেছে। একটি মাঝি’নাও নিয়ে চরের পাশে পাশে বয়ে চলার বাধাহীন সুখের কথা বর্ণনায় শেষ হবে না। চাঁদপুরে নদীকে পাওয়া যায় তার পূর্বকালীন রূপে; কৃত্রিমতা, নগরায়ন ও আধুনিকতার নষ্ট আয়োজন এখনো এখানে জোর হানা দিতে পারেনি। তাই চাঁদপুরে নদীর প্রকৃতি আছে, প্রকৃতির নিজস্বতায়; আসুন, একদিন বেড়িয়ে যান…।

দুই.
ইলিশ চাঁদপুরবাসীর গর্বের প্রধান অনুষঙ্গ। ইলিশকে ঘিরে চাঁদপুরবাসীর আশা-আকাক্সক্ষা, উত্তেজনা ও স্বপ্নের ইতিহাস সুপ্রাচীন। ইলিশ নদীমাতৃক বাংলাদেশেরও স্বর্ণসম্পদ। সম্প্রতি জামদানির পর ‘ইলিশ’ বাংলাদেশের ভৌগলিক নির্দেশক পণ্য (জিআইপি) হিসেবে স্বীকৃতি পাবার পর এই তাৎপর্য আরও সংহত হয়েছে। কেবল চাঁদপুরেই ইলিশ উৎপাদন হয় না বরং ভোলা-বরিশাল ও চট্টগ্রামে ইলিশের আহরণ আরও বেশি কিন্তু ইলিশের বাজারজাতকরণসহ স্বাদ-গুণ-ঘ্রাণের অভিনবত্বে চাঁদপুরের ইলিশ দেশের অন্য সব স্থানকে ছাড়িয়েছে। এজন্য ইলিশ ও চাঁদপুর, এ শব্দদুটো আমাদের কাছে একযোগে চলে আসে। এ শব্দদুটি বহুদিন থেকে যথাশব্দরূপে দেশব্যাপী প্রচলিত রয়েছে।

বিদেশে ইলিশ মাছ রপ্তানি করে বাংলাদেশ প্রতি বছর প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে থাকে আর অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিদেশী বাজারে বাংলাদেশের ইলিশ উপস্থাপিত হয় ‘চাঁদপুর ব্র্যান্ড’ হিসেবে। আপনি নিউ-ইয়র্কের বড় বড় ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলোতে- ইন্দো-পাক সুপার মার্কেট, খামার বাড়ি সুপার মার্কেট, তাজমহল সুপার মার্কেট, ফুডল্যান্ড সুপার সপ, স্বদেশ গ্রোসারি-এসব বৃহৎ সুপার সপের ফ্রিজের দিকে তাকালে বিভিন্ন মাছের সাথে ইলিশ মাছও পাবেন এবং দেখবেন সেখানে লেখা আছে ‘চাঁদপুরের ইলিশ’। চাঁদপুরের নদী-অঞ্চল ইলিশের অন্যতম বিচরণ কেন্দ্র। চাঁদপুরের মিঠা পানিতে এসে ইলিশ অভিনব এক স্বাদ-ঘ্রাণ ধারণ করে, যা চাঁদপুরের ইলিশকে অন্য জায়গায় উৎপাদিত ইলিশের সাথে পার্থক্য গড়ে দেয়।

ইলিশকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি জেলাকে ব্র্যান্ডিং করার ফলে মেঘনা-পদ্মা-ডাকাতিয়া বিধৌত চাঁদপুর আজ ‘ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর’ নামে দেশব্যাপী-বিশ্বব্যাপী আরও ব্যাপকভাবে প্রচারিত-প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ইলিশকে কেন্দ্র করে ব্র্যান্ডিং কর্মসূচিতে জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে জাটকা নিধন রোধ, মা ইলিশ রক্ষাসহ ব্যাপক কর্মকা- বাস্তবায়িত হয়েছে যার ফলে দেশের উত্তরাঞ্চল রাজশাহী পর্যন্ত দীর্ঘদিন পর ইলিশ পৌঁছে গেছে; এমনকি ইলিশের মোট উৎপাদনেও ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটেছে। এই কর্মযজ্ঞে সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ জেলা প্রশাসকসহ মোট ছয়জন কর্মকর্তা জনপ্রশাসন পদক-২০১৭ অর্জন করে। যা একই সাথে জেলার নিবাসীগণের জন্যেও গৌরব বয়ে আনে।

ইলিশকে কেবল মাছ হিসেবে বিবেচনা করলেই যথেষ্ট নয়, এটিকে দেশের জাতীয় সম্পদ রূপেও আখ্যা দেয়া যায়। ইলিশ-সম্পদের সাথে অনেক পক্ষ সংশ্লিষ্ট থাকে এজন্য; জেলে-মেছো, নৌ-মালিক, মৎস্য ব্যবসায়ীসহ ভোক্তা সাধারণ পর্যন্ত সকলের কাছেই এ সম্পদ রক্ষার প্রয়োজনীয় বার্তা থাকতে হবে এবং সেসব তথ্য ও বার্তা মোতাবেক কার্যক্রম চালিত হলেই কেবল আমরা দেশের জন্য এবং নিজেদের জন্য এ সম্পদের উপযোগিতা ও উপকারকে সর্বোচ্চভাবে কাজে লাগাতে পারবো।

চাঁদপুরে নদীর সৌন্দর্য আছে, আছে জাতীয় সম্পদ ইলিশ মাছ। পরিকল্পনা মোতাবেক এ দুটো সম্পদের ব্যবস্থাপনা আরও সুশৃঙ্খল ও নাবায়িত করা গেলে চাঁদপুর হবে বাংলাদেশের এক অভিনব পর্যটন কেন্দ্র। আমরা সেই সুন্দর পরিকল্পনা ও এর বাস্তবায়নের অপেক্ষায় আছি। আজ যেমন দেশ-বিদেশে ইলিশের মাধ্যমে পৌঁছে যাচ্ছে চাঁদপুরের মিঠা পানির গন্ধ, একদিন যেন সেই সুন্দরের সান্নিধ্য নিতে সবাই একান্ত-পর্যটনে চাঁদপুরকে সর্বাগ্রে বিবেচনা করে; সেই সার্বিক সুন্দরে বিশ্বব্যাপী নন্দিত হোক চাঁদপুর। দিকে দিকে পৌঁছে যাক্ কবি ইদ্রিস মজুমদারের জল-মাটির গান-

‘চাঁদপুর ভরপুর জলে-স্থলে
মাটির মানুষ আর সোনা-ফলে।’

সৌম্য সালেক : কবি ও লেখক।


আরও পড়তে পারেন…..
ভয়ংকর রূপে ফুঁসে উঠেছে তিস্তা নদী
নদীস্নানের পর কিছু একলা মুহূর্ত ।। হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
ও নদী বন্ধুয়ার খবর এনে-দে ।। বঙ্গ রাখাল
আমার শৈশব নদী ।। হামিদ কায়সার

সংশ্লিষ্ট বিষয়