ধলেশ্বরী নদী: ভাঙ্গন রোধে এলাকাবাসীর উদ্যোগে নদীতে বালুর বস্তা নিক্ষেপ

মো.ইউসুফ আলী, কেরাণীগঞ্জ থেকে >>  কেরাণীগঞ্জের কালিগঙ্গা ও ধলেশ্বরী নদীতে দেখা দিয়েছে সর্বনাশা ভাঙ্গনের ঢেউ। হুমকিতে পড়েছে বেশ কয়েকটি গ্রাম, স্কুল, মাদ্রাসা,মসজিদ, সেতু ও ফসলি জমি। বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে জনজীবন। এলাকাবাসী বলছেন, এখনই যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া না হলে বিলীন হয়ে যাবে বেশ কয়েকটি গ্রাম।

ভাঙ্গন রোধে ও নিজেদের বাড়িঘর রক্ষায় প্রাণপন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এলাকাবাসী। গঠন করা হয়েছে নদী ভাঙ্গন রক্ষা কমিটি। যার মাধ্যমে নদী ভাঙ্গন রোধে স্থানীয় যুব সমাজের উদ্যোগে গাছ কেটে ও নদীতে বস্তা ফেলে চেষ্টা করা হচ্ছে বাড়িঘর রক্ষার। তারই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার (২৭ আগস্ট) এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে কলাতিয়া ইউনিয়নের ভেনড্রিঘাট এলাকায় শতশত বালুর বস্তা ও গাছের ঢাল ফেলে নিজেদের বাড়িঘর রক্ষার চেষ্টা চালায় নদী ভাঙ্গন রক্ষা কমিটি।

এসময় তাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেন কলাতিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. তাহের আলী। উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, প্রতি বছরই নদীর এ অঞ্চলটি ভাঙ্গছে। এ বছরও প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা ভাঙ্গছে। ভাঙ্গন কবলিত এলাকার মানুষ এখন খড়-কুটোর উপড় ভরসা করে আছেন। কারণ যে হারে নদী ভাঙ্গছে তাতে আরো শত শত বাড়িঘর বিলিনের অপেক্ষায় রয়েছে। তাই কলাতিয়া ইউনিয়নের ৫ ও ৬নং ওয়ার্ডের মানুষের বাড়িঘর রক্ষায় এখনই স্থায়ী বেড়িবাধ নির্মানের দাবি তার।

নদী ভাঙ্গন রক্ষা কমিটির সভাপতি মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, প্রতি বছরই এই সময়ে বন্যা আতঙ্কে থাকতে হয় তাদের। এবছরও সারাদেশে বন্যা ও নদীতে অতিরিক্ত পানি প্রবাহের কারণে হুমকীর মুখে রয়েছে তাদের গ্রামের সহাস্রাধিক পরিবারের কয়েক হাজার মানুষ। তিনি বলেন, এবারের মত পানির এমন ক্ষিপ্রতা এর আগে আর কখনও দেখেনি তাদের গ্রামের মানুষ । তাই দ্রুত বেরিবাধ নির্মানের দাবি তার। নাহলে অচিরেই মানচিত্র পাল্টে যাবে এসব এলাকার এমন দাবি গ্রামবাসীদের।

সরকারি চাকরি থেকে সদ্য অবসর নেয়া ষাটোর্ধ মো.রমিজ উদ্দিন বলেন, বাড়িঘরসহ প্রায় আড়াই পাখি জমি নদীতে বিলিন হয়েছে তার। জীবনের সব উপার্জন এই বাড়িঘরের পেছনেই লাগিয়ে ছিলেন তিনি। তাই সব হারিয়ে এখন দু’চোখে শুধুই ধোয়াশা দেখছেন তিনি। স্থানীয়দের দাবি ড্রেজার দিয়ে অবৈধ ভাবে মাটি কেটে নেয়ার কারনেই ভাঙ্গনের কবলে তারা।

এসময় অন্যান্যের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন মো. আলা উদ্দিন, হাজী মো. ইব্রাহিম হাওলাদার, হাজী তাজুল ইসলাম,আব্দুর রহমান মেম্বর, মো. সেলিম, মো. জহিরুল ইসলাম জুয়েল প্রমুখ।

জানা যায়, গত দেড় মাসে নদীর প্রবল স্রােতের কারনে কলাতিয়া ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম নদীর তীব্র ভাঙ্গনের কবলে পড়ে। এতে শতশত বাড়ি-ঘর ও কৃষি জমি ভেঙ্গে নদী গর্ভে বিলিন হয়ে অনেক পরিবার নিঃশ্ব হয়ে যায়। ফলে ভাঙ্গন কবলিত কয়েকটি গ্রামের মানুষ একত্রিত হয়ে তাদের নিজ উদ্যোগে গঠন করে নদী ভাঙ্গন রক্ষা কমিটি। যার মাধ্যমে ধলেশ্বরী নদীর ভাঙ্গন প্রতিরোধে নিজেরাই ভেনড্রিঘাট এলাকায় নদীতে বালুর বস্তা, গাছের ঢাল ফেলে। পর্যায়ক্রমে তারা ওই গ্রামের আশেপাশের আরো কয়েকটি গ্রামের পাশেও বালুর বস্তা ও গাছের ঢাল ফেলে নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধের চেষ্টা অব্যাহত রাখবে বলে জানান তারা।


আরও পড়তে পারেন…..
নরসুন্দায় চলছে পরিচ্ছন্নতা অভিযান
‘নদ-নদী ও জলাশয় সংরক্ষণ: প্রেক্ষিত গাজীপুর’ বিশেষ ভার্চুয়াল গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত
রিভার বাংলা’র আয়োজনে অনলাইন বিতর্ক উৎসব শুরু

সংশ্লিষ্ট বিষয়