ব্রহ্মপুত্র নদ না নদী? পার্থক্যওয়ালারা দাবি করেন, ‘নদীর শাখা আছে, নদের শাখা থাকে না।’ আরও বলেন, যে জলস্রোত কোনো পর্বত, হ্রদ, প্রস্রবণ ইত্যাদি হতে উৎপত্তি লাভ করে ও বিভিন্ন জনপদের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সমুদ্রে বা নদী বা হ্রদে পতিত হয়, তাকে নদী বলে। যেমন- ভারতের গঙ্গা, যমুনা, গোদাবরী, কাবেরী ; বাংলাদেশের মেঘনা ইত্যাদি।
তারা আরও বলেন, ‘যখন কোনো নদী হতে কোনো শাখা নদীর সৃষ্টি হয় না, তখন তাকে বলা হয় নদ। যেমন- ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অজয়, বাংলাদেশের কপোতাক্ষ ; ভারত – বাংলাদেশের ব্রহ্মপুত্র ; মিশরের নীল ইত্যাদি নদ।’
একটু খুঁজ নিলে দেখবেন, ‘জলধারার এই রকম লিঙ্গ বিভাজন পৃথিবীর অন্য কোনো অঞ্চলে সম্ভবত নেই। একমাত্র ভারতীয় উপমহাদেশের সংস্কৃতিতেই জলধারার লিঙ্গ বিভাজন রয়েছে। ভারতীয় চৈতন্যে ব্রহ্মপুত্র নদ, কিন্তু গঙ্গা নদী।’
‘তাহলে কী ব্রহ্মপুত্রের শাখা নেই? বাংলাদেশের শীতলক্ষ্যা, যমুনা এগুলো তাহলে কোনো নদীর শাখা? শীতলক্ষ্যা, যমুনা যদি ব্রহ্মপুত্রের শাখা নদী হয় তাহলে সংজ্ঞানুসারে ব্রহ্মপুত্র তো নদী হওয়ার কোথা, একে আমরা নদ বলি কেন? প্রকৃতপক্ষে নদ ও নদীর সঙ্গে শাখা থাকা না থাকার কোনো সম্পর্ক নেই।
নদ না নদী এই নিয়ে পড়ুন আরও একটি লেখা…
এই দুয়ের মাঝে যা পার্থক্য আছে তা হলো ব্যাকরণগত। বাংলা, হিন্দি ও ফার্সি ইত্যাদি ভাষার ক্ষেত্রে, পুরুষবাচক শব্দ সাধারণত অ-কারান্ত এবং নারীবাচক শব্দ আ-কারান্ত বা ই, ঈ-কারান্ত হয়। যেমন- পদ্মজ (অ-কারান্ত), পদ্মজা (আ-কারান্ত, নামের শেষে আ আছে), রজক (অ-কারান্ত), রজকী (ঈ-কারান্ত, নামের শেষে ঈ আছে)। তাই যে সকল নদীর নাম পুরুষবাচক অর্থাৎ অ-কারান্ত তারা নদ আর যে সকল নদীর নাম নারীবাচক অর্থাৎ আ-কারান্তবা ঈ, ই-কারান্ত তারা নদী।
এই কারণে বাংলাদেশের আড়িয়াল খাঁ, এটি পুরুষ নাম জ্ঞাপক হলেও যেহেতু শেষে আকার রয়েছে সে জন্য এটি নদ না হয়ে নদী। আবার মিশরের নীল স্ত্রী নাম জ্ঞাপক একটি প্রবাহ। কিন্তু এর শেষে আকার, একার কিছু নেই, সেই সূত্রে এটি নদ।’
সেই ব্যাকরণ বানিয়েছেন একদল ইতর ব্যাকরণবিদ। যারা লৈঙ্গিক রাজনীতিকে মানুষের মগজে ঢুকিয়েছেন। সাধারণের কাছে গাঙ। দরিয়া।
উদ্বৃতিসমূহ ভূগোলিকা’র।
এবার ব্রহ্মপুত্রের দুটি ছবি দেখুন। একটি স্যাটেলাইট ছবি অপরটি ব্রহ্মপুত্র বেসিনের স্কেচ। আরেকটি ছবি মোবাইলে তোলা।
এবার নিজেই সিদ্ধান্ত নিন, ব্রহ্মপুত্রকে নদ না কি নদী বলবেন? না কি গাঙ?
নোট: লেখকের ফেসবুক থেকে- সম্পাদক।
পড়ুন আবুল কালাম আল আজাদ এর আরও একটি লেখা