পাপপুণ্যের বাস্তব অবাস্তবতায় ব্রম্মপুত্রের মাহাত্ম্য : রুখসানা কাজল

পাপপুণ্যের

মহামুনি শান্তনু। বুকের উষ্ণতায় দুহাতে জড়িয়ে নিয়েছেন সদ্য ভূমিষ্ঠ এক জাতককে। শ্রদ্ধা ভক্তি এবং অজানা এক শুভকামনায় উদ্বেল তার মন। ঈশ্বরের লীলা বোঝা বড় দায় ! তার স্ত্রী অমোঘার গর্ভে স্রষ্টা ব্রম্মার ঔরসে জন্ম হয়েছে এ সদ্য জাতকের। শিশুটি একটি জলপিন্ড।

শান্তুনু পরম মমতায় ব্রম্মার পুত্রকে নিয়ে চলে আসেন হিমালয়। কৈলাস, গন্ধমাদন, জারুধি ও সম্বর্তক নামে চারটি পর্বত। যেন চারজন মা ভূমিতলে মেলে দিয়েছেন তাদের নিরাপদ মাতৃক্রোড়। বড় পবিত্র আর পূণ্য এই ভূমিতল। আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হচ্ছে মঙ্গলবার্তা। শান্তুনু শিশু জলপিন্ডকে অত্যন্ত সযত্নে এদের মাঝখানে সৃষ্ট জলকুন্ডে রেখে ফিরে আসেন গৃহে। তিনি নিশ্চিত জানেন এখানেই ভাল থাকবেন ব্রম্মার পুত্র। লোকচক্ষুর অন্তরালে মা ধরিত্রীর মায়ায় ছায়ায় আর পিতা ব্রম্মার সস্নেহ আশির্ব্বাদে প্রকৃতির জলকুন্ডে বেড়ে উঠবে শিশু জলপিন্ডের জলেজ শরীর।

ত্রেতা যুগ। ঋষি জমদগ্নি যজ্ঞে বসবেন। তার পাঁচপুত্র। রুমণ্বান্, সুষেণ, বসু, বিশ্বাবসু ও রাম। কনিষ্ঠ পুত্র রাম কঠোর তপস্যা করে শিবের কাছ থেকে পরশু অর্থাৎ কুঠার লাভ করেছেন। তাই তিনি পরশুরাম। পুত্রদের মা রেণুকা স্বামির যজ্ঞের জন্যে জল আনতে গিয়েছেন নদীতে। নির্দিস্ট সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। অথচ তিনি ফিরে আসছেন না। এদিকে যজ্ঞের সময়ও বয়ে যাচ্ছে। ঋষি জমদগ্নি ধ্যানে বসলেন স্ত্রীর সুলুক জানতে।

ধ্যান যোগে তিনি দেখতে পেলেন, গন্ধর্ব রাজ্যের রাজা চিত্ররথ স্ত্রীদের নিয়ে জল বিহারে এসেছেন । রাজা চিত্ররথ কামপটু অতি সুদর্শন। তার গলায় দুলছে স্বর্ণপদ্মের মালা। চিত্ররথের দৈহিক সৌন্দর্য ও শারিরীক কামক্রীড়ার নৈপুণ্য শৈলীতে ক্ষণে ক্ষণে মুগ্ধ শিহরিত ও কামার্ত হয়ে উঠছেন তার স্ত্রী রেণুকা। স্বামীর যজ্ঞের কথা বেমালুম ভুলে গেছেন পাপিষ্ঠা রমণী !
তিনি ক্রুদ্ধ হয়ে উঠলেন। সতেজে ফোঁসে জ্বলে উঠলেন ঈর্ষায় । বিস্মৃত হয়ে গেলেন তার ঋষিতুল্য জ্ঞান প্রজ্ঞা ও বোধি। ধৈর্য্য সহ্য ক্ষমাকে জলাঞ্জলি দিয়ে তার মনে জেগে উঠল পৌরুষিক খুনের নেশা।

অনেক পরে রেনুকা ঘরে ফিরলে তিনি পুত্রদের আদেশ করলেন তাদের ভ্রষ্টা মাকে হত্যা করতে। প্রতিজ্ঞা করলেন, মাতৃহত্যার বিনিময়ে পুত্ররা যে যত বর চাইবে তিনি অকাতরে তাই পূর্ণ করবেন। তবু হত্যা করা চাই-ই চাই।
কিন্তু অগ্রজ পুত্র চতুষ্টয় যথেচ্ছ বর লাভের লোভ ত্যাগ করে গর্ভধারিনী মাকে হত্যা করতে পিতার আদেশকে অস্বীকার করে বসে। ক্রুদ্ধ জমদগ্নি তাদের অভিশাপ দিলেন। পুত্ররা মানবিক চেতনা রহিত পশুতে পরিণত হয়ে গেল। কনিষ্ঠপুত্র পরশুরাম পিতার আদেশ শিরোধার্য মেনে নিলেন। তিনি হাতের কুঠার বা পরশু দিয়ে নির্দ্বিধায় গর্ভধারিনী জননীর মাথায় আঘাত করলেন। পুত্রের হাতে খুন হয়ে গেলেন মাতা রেণুকা।

মুহুর্তে থমকে গেল ত্রেতা যুগ। স্বর্গ, মর্ত্য পাতাল জুড়ে ওঠল ঘৃণার রি রি আর্তি ও অভিশাপ, ধ্বিক ওরে মাতৃহন্তারক মহাপাপী। ধ্বিক তোকে। শত সহস্র ধ্বিক ধ্বিক মাতৃগর্ভের কলঙ্ক অভিশপ্ত পুত্র পরশুরামকে

স্ত্রীর শরীরের ভাষা বুঝতে অক্ষম ঈর্ষাকাতর ক্রোধ উন্মত্ত পিতার আদেশের দাসানুদাস পরশুরাম সে সময় ছিলেন সমস্ত যুক্তিতর্ক প্রশ্ন দ্বিধা ন্যায়বোধের বহু উর্ধে। নারীর সৌন্দর্যে পুরুষ যেমন কামনা কাতর হয়ে পড়ে তেমনি পুরুষের শৌর্য, বীর্য সৌন্দর্যে নারীর কামনা বাসনাও উদ্বেলিত হয়ে ওঠা অস্বাভাবিক কিছু ত নয়। কিন্তু পুত্র পরশুরাম সে মুহুর্তে নির্মম নিষ্ঠুর হয়ে উঠেছিলেন। পৌরুষের ঈর্ষা, ক্রোধ, হিংসা ও অহংকারের পরম্পরায় জ্বলে উঠেছিলেন পিতার প্রতি মান্যতার ছোঁয়াচে আগুনে।

স্ত্রীর মস্তক ভূলুণ্ঠিত হতেই জমদগ্নির ক্রোধের উপশম ঘটে। তিনি পুনরায় ঋষিবোধে স্থিত লাভ করেন। কিন্তু পরশুরাম ?
তার অন্তরাত্মা কেঁদে ওঠে মা ও ভাইদের জন্যে। এ ছাড়া শিব ঠাকুরের উপহার দেওয়া কুঠারটি তার হাতের সাথে চেপ্টে লেগে যায় চিরস্থায়ী ভাবে। কিছুতেই খোলা সম্ভব হয় না। তিনি বোঝেন মাতৃহত্যার কারণে তার পাপের শাস্তি হয়েছে। কুঠারলগ্ন হাতে তিনি পিতার কাছে বর চান, পিতা ফিরিয়ে দিন আমার মা ও ভাইদের। আর মায়ের স্মৃতিপট থেকে মুছে দিন আমার খুনি হন্তারক ঘৃণ্য চেহারা।
পিতা জমদগ্নি পরশুরামের মা ও ভাইদের মৃত্যুলোক থেকে ফিরিয়ে আনতে পারলেও কিছুতেই কুঠারটি খুলে ফেলতে পারলেন না। তিনি সন্দেশ দিলেন, দেশের প্রতিটি তীর্থস্থানে ঘুরে স্নান করতে। পূণ্য জলের শুদ্ধ স্পর্শে পরশুরাম ক্ষমা লাভ করতে পারলে তবেই হাত থেকে খসে পড়বে শিবপ্রদত্ত এই কুঠার ।

নানা তীর্থ ঘুরে ঘুরে পরশুরাম এসে পৌঁছলেন হিমালয়ের কৈলাস ধামে। চারটি পর্বতের কোলে ছোট্ট জলকুন্ডটি ততোদিনে বড় হয়ে ব্রুম্মকুন্ড হ্রদে পরিণত হয়ে উঠেছে। টলটল করছে অপাপ জলাধার। পূণ্যতোয়া স্রোতে ভাসছে ক্ষমা ও বিশুদ্ধতার আহবান। তারা জলের আল্পনা এঁকে অবিরাম ছড়িয়ে পড়ছে অজস্র শুভ বারতা নিয়ে।

পাপমোচনের আশা নিয়ে পরশুরাম ঝাঁপিয়ে পড়লেন, হে পূণ্যময় ব্রম্মপুত্র মাতৃহত্যার পাপ থেকে আমাকে ক্ষমা করো হে ক্ষমাময় জলধি। আমার সকল পাপ হরণ করে আমাকে শুদ্ধ করো হে জলদেব !

ব্রম্মকুন্ডের জল তাকে পূণ্যতা দিলো। হাতে আটকে থাকা কুঠারটি খসে পড়ল । আর অনুতাপে বিদীর্ণ তার আত্মা মাতৃহত্যার অপরাধ ও পাপ থেকে মুক্তি পেলো । তিনি সদ্যজাত মানব শিশুর মত পবিত্র হয়ে উঠলেন। চোখ থেকে খুলে গেল অন্ধবিশ্বাসের ঠুলি আর হৃদয় ভরে উঠলো মানুষের জন্যে সীমাহীন ভালোবাসায়। প্রতিদিন মানুষ বুঝে না বুঝে কতশত পাপ করে থাকে । আহা তারা যদি এ ব্রম্মকুন্ডের জলে ক্ষমা চেয়ে সিনান করে নিজেদের শুদ্ধ করে নিতে পারত !

কিন্তু তা কি করে সম্ভব ! ব্রম্মার পুত্র যে দুর্গম কৈলাস ধামে স্থিরতার আনন্দে ধৈবত গেয়ে চলেছে !
পরশুরামের বুক দুলে উঠলো। মানবিক মায়ায় স্নেহে ছায়াময় হয়ে উঠলো হৃদয়, ওহে মানুষ, আমি তোমাদের জন্যে সর্বপাপ হরণকারী এক জলের ধারা নিয়ে আসছি। আমার সমস্ত পাপ তাপ ধুয়ে মুছে আমাকে গ্লানিমুক্ত করেছে যে পবিত্র জলধারা তিনি স্রষ্টা ব্রম্মার পুত্র পবিত্র ব্রম্মপুত্র নদ। আমি তাকে তোমাদের মাঝে এনে দেওয়ার চেষ্টা করছি। তোমরা তাকে নৈবদ্য দিয়ে ক্ষমা ভিক্ষা করো হে মানুষ ।

তিনি কুঠারটিকে লাঙ্গলের ফলার মত করে ব্রুম্মকুন্ড থেকে ব্রম্মপুত্রকে বয়ে আনার জন্যে নালা টানতে শুরু করলেন। লাঙ্গলের ফলায় তৈরি সেই পথ বেয়ে সৃষ্টি হলো ব্রম্মপুত্র নদের। পাহাড়ি তিব্বত থেকে ভারতের আসাম, আসাম থেকে বঙ্গভূমির কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারির বন্দর ছুঁয়ে জামালপুর ময়মনসিংহ হয়ে নারায়ণগঞ্জের লাঙ্গলবন্দে এসে থেমে যান পরশুরাম। মূলত লাঙ্গলের ফলা এ স্থানটিতে থেমে যাওয়ার পর থেকেই এ স্থানের নাম হয়ে যায় ‘লাঙ্গলবন্ধ’। স্থানীয় জনসাধারণের উচ্চারণ বিবর্তনে যা হয়ে ওঠে ‘লাঙ্গলবন্দ।’

এই নালা উপচে নেমে আসে ব্রম্মপুত্র নদের পুণ্য জলের স্রোতধারা। উছল আনন্দে তারুণ্যের বাঁধা ভাঙ্গা সাহসে ব্রম্মার পুত্র ছড়িয়ে পড়ে দুকূল ছাপিয়ে।

হিমালয়ের ব্রম্মকুন্ডের জলে স্নান করে পাপমুক্তি ঘটেছিল মাতৃ হন্তারক পরশুরামের। শাস্তিস্বরূপ লেগে থাকা কুঠারটিও খসে পড়েছিল তার পাপী হাত থেকে। সেই বিশ্বাসে সর্বপাপ হরণকারী হিসেবে ছড়িয়ে পড়ে ব্রম্মপুত্র নদের মাহাত্ম্য। পরবর্তিতে কুড়িগ্রাম, জামালপুর, কিশোরগঞ্জ,ও শেরপুরসহ ব্রম্মপুত্র নদের তীরবর্তী অঞ্চলগুলোতে যথাযথ নৈবদ্য দিয়ে পূন্যের আশায় অষ্টমী স্নান উৎসব পালিত হয়ে আসছে।

হিন্দু শাস্ত্রমতে চৈত্র মাসের শুক্লাপক্ষের অষ্টমী তিথিতে ব্রম্মপুত্র নদ পবিত্র জলে পুণ্যবান হয়ে ওঠে। অইদিন স্রষ্টা ব্রম্মার আদেশে পৃথিবীর সবগুলো তীর্থস্থানের সমগ্র পবিত্রতা এসে মিলিত হয় ব্রম্মপুত্র নদে । পাপমোচনের জন্যে সৃষ্টি হয় দয়া, মায়া, ক্ষমা, অনুগ্রহ এবং পূণ্য ও আশির্বাদের এক মহামঙ্গল জলাধার । কথিত আছে দেবি পার্বতী ব্রম্মপুত্র নদে অষ্টমী স্নানে মর্ত্যের মানুষদের ভিড় দেখে স্বামী মহাদেবের কাছে পাপমুক্তির সত্যাসত্য সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন। মহাকালের দেবতা একটি রূপকের মাধ্যমে স্ত্রী পার্বতীকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, যত বড় পাপী হোক না কেন, অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ক্ষমা চাইলে সে মানুষ ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য।
প্রতি বছর চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিতে পাপ মোচনের আশায় ব্রহ্মপুত্র নদে স্নানের জন্য ছুটে আসে লক্ষ লক্ষ সনাতন ধর্মাবলম্বীরা । স্নান উপলক্ষে ব্রম্মপুত্র নদ সংলগ্ন বিভিন্ন ঘাট ভরে যায়। তারা নির্দিস্ট লগ্নের ভেতর নদের জলে নেমে স্নানমন্ত্র পাঠ করে নানাবিধ ফুলফল, বেলপাতা, ধানদূর্বা, হরিতকী, ডাব, আম্রপল্লব দিয়ে তর্পণ করে। পরশুরামের বিশ্বাসে্র উপর আস্থা রেখে তারাও বিশ্বাস করে, ব্রহ্মপুত্র নদ তাদের পাপমুক্ত করবে। তাই বছর জুড়ে করা যাবতীয় পাপের ক্ষমা চেয়ে নেয় পুন্যার্থীরা ।
বাংলাদেশে লাঙ্গলবন্দের পর অষ্টমী স্নানের বড় সমাগম হয় চিলমারির বন্দর সংলগ্ন উজানের ব্রম্মপুত্র নদে। আদিকাল থেকেই চিলমারি বন্দরের সাথে ব্রম্মপুত্র নদের এক অটুট সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশে ব্রম্মপুত্রের প্রবেশ দ্বার হচ্ছে কুড়িগ্রাম। আর এই কুড়িগ্রাম জেলার ঐতিহ্যবাহী বন্দর হচ্ছে ব্রম্মপুত্র পারে গড়ে ওঠা চিলমারির বন্দর । অখন্ড ভারত এবং পাকিস্তান আমলেও পাটের আমদানী রপ্তানীর জন্যে দেশি বিদেশি জাহাজ আর মালিক শ্রমিকদের কর্মকান্ডে সদা ব্যস্ত ছিল বন্দরটি । আসামের সাথে ছিল ফেরি যোগাযোগ। আত্মীয়তা, ভ্রমণ এবং স্নান উপলক্ষে ছিল নিত্য যাতায়াত। তবে পুরানো বন্দরগুলো ব্রম্মপুত্রের ভাঙ্গনে তলিয়ে গেলে নতুন করে চিলমারির বন্দর স্থাপন করা হয়। যদিও ব্রম্মপুত্রের এই ভাঙনের খেলা শত শত বছর ধরেই চলে আসছে। আর চিলমারি বন্দর ক্রমশঃ পিছু হটছে পূব থেকে উত্তর পশ্চিমে ।

অষ্টমী স্নানের কয়েকদিন আগে থেকে উত্তরবঙ্গের সনাতন ধর্মের বিভিন্ন বয়সের নারী পুরুষ এসে জমায়েত হয় ব্রম্মপুত্র নদের নানা ঘাটে । এদের সাথে যুক্ত হয় ভারত, নেপাল, ভুটানের ধর্মপ্রাণ মানুষ। ধারণা করা হয় অষ্টমীর পূণ্য স্নানে অংশ নিতে প্রতি বছর প্রায় লক্ষ লক্ষ দেশি বিদেশী সনাতন ধর্মের মানুষ এখানে চলে আসে।

স্নান উপলক্ষে ব্রম্মপুত্র নদের বালুতটে বসে বিশাল মেলা। সনাতনধর্মের মানুষদের সঙ্গে স্থানীয় এবং আশে পাশের অঞ্চলের অন্য ধর্মের মানুষরাও নিত্য প্রয়োজনীয় নানা জিনিস কিনতে মেলায় আসে। সৃষ্টি হয় অনিন্দিত এক অসাম্প্রদায়িক পরিবেশ।
তবে চিলমারি বন্দরের মেলার অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে বড় বড় মাছের বিকিকিনি আর উত্তরবঙ্গের স্বকীয় ভাওয়াইয়া গান। এ অঞ্চলের জেলেরা অষ্টমী মেলার অপেক্ষায় থাকে। মেলার আগের দিন থেকেই জেলেরা ব্রম্মপুত্র নদে মাছ ধরার তোড়জোড় শুরু করে। আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকেও বড় বড় মাছ আসে মেলায় বিক্রি করার জন্যে। স্নান এবং মেলার কারণে কয়েকটা দিন চিলমারির বন্দর সুরে গানে আনন্দ মথিত হয়ে থাকে। উত্তরবঙ্গের নিজস্ব স্বকীয়তায় ভাস্বর ভাওয়াইয়া গানের সুরের সাথে ব্রম্মপুত্রের পানি শুদ্ধতার সঙ্গত করে । পাশাপাশি থাকে নাম সংকীর্তনের আসর। বাঁশির সুর, খোল কর্তাল ঢোলের সংযোগে মেলায় আসা মানুষদের আনন্দিত উপস্থিতিতে মুখরিত হয়ে ওঠে বন্দর অঞ্চল ।

প্রাণঘাতী কভিড১৯ অসুখের জন্যে ২০২০ এবং ২০২১ সেভাবে ব্রম্মপুত্রের কাছে আসতে পারেনি মানুষ। তবু কেউ কেউ এসেছিলেন অষ্টমী স্নানের জন্যে। তারা ব্যক্তিগত পাপের মার্জনা চাওয়ার সঙ্গে দেশ এবং সমগ্র পৃথিবীকে করোনা মুক্ত করতে ব্রম্মপুত্র নদের কাছে প্রার্থনা করেছেন। ব্রম্মপুত্র নদের পানি পৃথিবীর সমস্ত পবিত্রতা নিয়ে একা একাই বয়ে গেছে। রেখে গেছে সজল চোখের আকুতি, ব্রম্মপুত্রকে বাঁচাও মানুষ । মরে যাচ্ছে তোমাদের পুণ্য জলের নদ। পৃথিবীর দীর্ঘতম নদের বুকে পলি জমে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। নাব্যতা হারিয়ে ফেলেছে। কোথাও কোথাও ব্রম্মপুত্রের বুকে চর জেগেছে। সশব্দে চলছে ট্রাক গাড়ি। অথচ ব্রম্মার পুত্র বলে খ্যাত ব্রম্মপুত্র প্রার্থনা করে যাচ্ছে মহাবিশ্বের মহাপ্রভুর কাছে, মানুষের সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দাও হে প্রভু। সমস্ত পাপ নির্মূল করে নির্মল করে ফিরিয়ে দাও মানুষের সেই সুন্দর পৃথিবী। মানুষ সুখী হোক।

——————————–

আরও পড়ুন….
‘ইয়ং রিভার চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২২ : পুরস্কার বিতরণ সম্পন্ন
রাজেশ ধর এর গল্প-  ‘জলমুক্তি জিন্দাবাদ’

সংশ্লিষ্ট বিষয়