ঐতিহাসিক এক রায়ে হাইকোর্ট তুরাগ নদকে ‘লিগ্যাল পারসন’ বলে ঘোষণা করেছেন, যা দেশের সব নদ-নদীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।
উচ্চ আদালতের এমন সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে এবার দেশের নদ-নদীর কিছু আইনি অধিকার স্বীকৃত হবে বলে জানিয়েছেন রিটকারী আইনজীবী।
গত বুধবার (৩০ জানুয়ারি) তুরাগ নদ রক্ষা সংক্রান্ত রিট মামলার রায়ে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের হাইকোর্ট বেঞ্চ থেকে নদীর বিষয়ে এমন সিদ্ধান্ত আসে। আগামীকাল এ রায়ের বাকি অংশ ঘোষণা করবেন আদালত।
এর আগে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে করা এক রিটে তুরাগ নদের অবৈধ দখলদারদের নাম ও স্থাপনার তালিকা হাইকোর্টে দাখিল করেছিল বিচার বিভাগীয় একটি তদন্ত কমিটি। ওই তদন্ত কমিটির দেয়া তালিকায় আসা প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিরা পরে এ মামলায় পক্ষভুক্ত হন। পরে উভয় পক্ষের দীর্ঘ শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট মঙ্গলবার রায় ঘোষণা শুরু করেন।
রায়ের আজকের অংশে হাইকোর্ট বলেছেন: ‘অবৈধ দখলদারদের দ্বারা প্রতিনিয়তই দেশের কম-বেশি নদী দখল হচ্ছে। অবৈধ স্থাপনা তৈরি করায় সঙ্কুচিত হয়ে পড়ছে নদী। নাব্যতা ও বেদখলের হাত থেকে নদী রক্ষা করা না গেলে বাংলাদেশ তথা মানবজাতি সঙ্কটে পড়তে বাধ্য। এসব বিষয় বিবেচনা করে তুরাগ নদীকে লিগ্যাল/জুরিসটিক পারসন হিসেবে ঘোষণা করা হলো।’
আদালত আরো বলেছেন: ‘মানবজাতি টিকে থাকার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে নদী। বিভিন্ন দেশের সরকার আইন প্রণয়ন করে নদীকে বেদখলের হাত থেকে রক্ষার চেষ্টা করছে। ঢাকার আশপাশে বহমান চার নদী রক্ষায় ইতঃপূর্বে আদালত নানা গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছে। কিন্তু সেসব রায়ের নির্দেশনাগুলোর সঠিক বাস্তবায়নে বিবাদীরা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তা নেওয়া হলে তুরাগ নদী রক্ষায় হাইকোর্টে আরেকটি মামলা করার প্রয়োজন হত না। শুধু যে তুরাগ নদী আক্রান্ত তা নয়, গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা এবং বাংলাদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত ৪৫০টি নদী অবৈধ দখলদারদের দ্বারা আক্রান্ত।’
আজকের রায়ের বিষয়ে রিটকারী পক্ষের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন: ‘আদালত আজ রায়ে আমাদের দেশের নদীগুলোকে জীবন্ত সত্তা, জুরিসটিক পারসন বা লিগ্যাল পারসন হিসেবে ঘোষণা করেছেন। এর মধ্য দিয়ে মানুষের মত দেশের নদ নদীর কিছু আইনি অধিকার স্বীকৃত হবে।’
এ আইনজীবী আরো বলেন: আমাদের দেশের নদ-নদীগুলো যাতে জীবন্ত ও প্রবাহমান থাকতে পারে তা নিশ্চিতে এ রায়ের মাধ্যমে একটি বার্তা দিতে যাচ্ছে। যাতে করে ভবিষ্যতে আর কেউ যেন নদী দখল কিংবা দূষণের সাহস না করে।
সূত্র :