এই সময়ের বুড়িগঙ্গা: বাড়ছে পানি, বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রশস্ততা

প্রশস্ততা

মো.ইউসুফ আলী>> বুড়িগঙ্গা একটি নদী। একটি জীবন্ত ইতিহাস। একটি দেশের রাজধানী রক্ষার মূল নৌ-পথ। এ নদীটি এখন মৃতপ্রায়। কিন্তু এখন গ্রীস্মের মাঝামাঝি সময়েই পাল্টে যেতে শুরু করেছে বুড়িগঙ্গা। রূপ আর রংয়ে বদলে যায় নদীটি। বদলে যায় বুড়িগঙ্গার পানি। তাইতো দেশের আর সব নদীর মতই বুড়িগঙ্গার পানির রং এখন ফিরে পেয়েছে স্বচ্ছতা। আস্তে আস্তে কমতে শুরু করেছে পচা পানির দুর্গন্ধ। দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যা চলমান থাকায় স্বাভাবিকতার চেয়ে অতিমাত্রায় বেড়েছে বুড়িগঙ্গার পানি। সাথে সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে নদীর প্রশস্ততাও। অর্থাৎ প্রাণ ফিরেছে বুড়িগঙ্গায়। নদীর পানি বৃদ্ধিপেয়ে এটাকে এখন ঠিক নদীর মতই মনে…

আমার শৈশবের তুরাগ এখন অর্ধমৃত! ।। মোহাম্মাদ এজাজ

তুরাগ

দেশের অনেক নদীই আজ তার ঐতিহাসিক নাম হারিয়ে যেন এক নামে উপনীত হয়েছে- সেটি হলো ‘মরা নদী!’ একটি নদী মরে গেলে শুধু নদীই মরে না, তাকে ঘিরে গড়ে ওঠা জনসংস্কৃতিও মরে যায়! জনসাধারণের জীবিকা নির্বাহের প্রতিবন্ধকতা, নদীমাতৃক এলাকায় মরুকরণ, জীববৈচিত্র্যের বিপন্নতাসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়। দেশের সেই সব মরণাপন্ন নদীর একটি তুরাগ। দখল, ভরাট আর দূষণে ‘নিখোঁজ’ হতে চলেছে তুরাগ নামের এই নদটি। এটিই  আমার শৈশব ও কৈশোরের কহর দরিয়া। শৈশবে এই তুরাগই আমার উচ্ছলতা ও চঞ্চলতার নেপথ্যে ছিল। এটিই আমার ভালবাসার নদ। প্রিয় তুরাগ, আদালতের রায়ে জীবন্তসত্তা তুরাগ।  আমার…

বানের পানি চোখের জল একাকার!

নৌ-দুর্ঘটনা

মো.ইউসুফ আলী ।। দেশে একদিকে করোনা আরেক দিকে বন্যা। আবার এসেছে ঈদ। সাধারন খেটে খাওয়া মানুষের কাজকর্ম স্থবির। কি করবে মানুষ! কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? কোথায় মিলবে ঠাঁই? এসব হিসেব মিলাতে দিশেহারা আজ দেশবাসী। করোনা আক্রান্তে কাপঁছে দেশ। প্রতিদিন হাসপাতাল গুলেতে বাড়ছে করোনা রোগির সংখ্যা। এ মহামারি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার। হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালগুলো। অতিরিক্ত রোগিতে কাহিল ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীরাও। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী আজ পর্যন্ত সারাদেশে আক্রান্ত রোগীর সংখ্য একলক্ষ একাশি হাজার একশ উনত্রিশ জন। মৃত্যু হয়েছে অন্তত দুই হাজার তিনশ পাঁচ জনের। তবে সরকারি হিসেব এমনটা হলেও সারাদেশে বাসাবাড়িতে…

বাড়ির পাশে সিঙ্গুয়া নদী ।। এম জে এইচ বাতেন

সিঙ্গুয়া

ছোটকাল থেকে শুনে আসছি নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশ। এদেশের মানুষের জীবনও নদীকেন্দ্রিক। নদীর সাথে মানুষের সম্পর্ক মায়ের মতো। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এসব নদ-নদীর ভূমিকা অপরিসীম। এদেশে নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠেছে সর্বাধিক জনবসতি। নদীর সঙ্গে মানুষের জীবন-জীবিকা, সুখ-দুঃখ, আবেগ-ভালোবাসা জড়িত রয়েছে। হাজার বছরের গ্রামীণ ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিতেও রয়েছে নদ-নদীর প্রভাব। নির্বাচনের সময় নদীও রাজনৈতিক অঙ্গনে নদীর দুই পাড়ের মানুষের মধ্যে এক ধরনের বিভাজন তৈরি করে। নদীর এপার ও ওপারের বিষয়-আশয় নিয়ে চায়ের দোকানে চলে নানান যুক্তি-তর্কের ঝড়। মনে হয় যেন নদী ও মানুষ মিলেমিশে একাকার। তেরোশত নদীর দেশ বাংলাদেশ। যার মধ্যে…

যে জলে জীবন জ্বলে ।। রেজাউল করিম

জীবন

ছেলেবেলা থেকেই নদী ও প্রকৃতির সাথে আমার জীবন জড়িয়ে আছে আষ্টেপৃষ্ঠে। নদী ও প্রকৃতির শান্ত-সৌম্য-স্নিগ্ধ রূপ মাধুর্য দেখে যেমন মুগ্ধ ও বিমোহিত হয়েছি তেমনি এর রুদ্র রূপ, ঝঞ্জা-বিক্ষুব্দ ভয়ংকর নিষ্ঠুরতা দেখে হয়েছি অস্থির, কখনোবা বেদনায় নীল। প্রবল ঢেউ ও ঝরো হাওয়ায় কখনো বা বিপন্নবোধ করেছি মেঘনা, পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার মাঝনদীতে। উত্তাল ঝড়ো হাওয়ায় ডুবে মরার হাত থেকেও দু’একবার প্রাণে বেঁচে ফিরেছি! আমার বেড়ে ওঠা খাল-বিল-নদী-নালা বিধৌত গ্রামীণ জনপদে। আশৈশব বিচরণ করেছি অনাবিল ও স্নিগ্ধ প্রকৃতির মাঝে। নানা ধরনের দেশীয় নৌকা, লঞ্চ, স্পীডবোট, স্টীমারসহ নানান ধরনের জলযানে চড়ে নদীপথে ভ্রমণ করেছি…

চাঁদপুরের নদী, প্রকৃতি ও ইলিশ ।। সৌম্য সালেক

ইলিশ

‘নদীমাতৃক একটি ভূগোল ঘুরতে ঘুরতে আমি ঘুরে এলাম উড়তে উড়তে আমি উড়ে এলাম না কোনো রহস্য ছিল না না কোন চমক ছিল না কেবল একঘেয়ে এক ক্লান্তি দেখতে দেখতে আমি হয়ে উঠি যুগলতা আমি দেখতে দেখতে খসিয়েছিলাম শরীরের তাবৎ ক্লান্তি ওম শান্তি, ওম শান্তি’ –কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা আমরা নদীমাতৃক ভূ-ভাগের অধিবাসী। নদীর প্রভাবে আমরা নানাভাবে প্রতীকায়িত হয়েছি। নদীর বাঁধাহীন ছুটে চলার সাথে মিল রয়েছে মানব জীবনের প্রবাহমানতার। নদীর ইতিহাসও মানুষের ইতিহাসের মতোই প্রাচীন এবং বৈচিত্রপূর্ণ। বাংলাদেশের পুরো ভূগোলজুড়ে জালের মতো ছড়িয়ে বিছিয়ে রয়েছে অনেক নদী। শাখা-প্রশাখাসহ প্রায় ৮০০ নদ-নদীর…

ভয়ংকর রূপে ফুঁসে উঠেছে তিস্তা নদী

তিস্তার

ফের  ভয়ংকর রূপে ফুঁসে উঠেছে তিস্তা নদী। উজানের পাহাড় ও সমতলে একটানা বৃষ্টি ও গজলডোবা হতে প্রচুর পানি ছেড়ে দেয়ার জেরে পানি বৃদ্ধি পেয়ে ফুঁসে উঠেছে তিস্তা। শুক্রবার (১০ জুলাই) সকাল ৬টার পর হতে ১২ ঘন্টায় নদীর পানি ৪০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে সন্ধ্যা ৬টায় বিপদসীমার (৫২.৬০) ২৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। অথচ এ দিন সকাল ৬টায় তিস্তার পানি বিপদসীমার ১২ সেন্টিমিটার নিচে ছিল। সেই সঙ্গে ঢলের পানি দ্রুতগতিতে অব্যাহতভাবে বেড়েই চলেছে।সূত্র: দৈনিক জনকন্ঠ। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নীলফামারীর ডালিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, পরিস্থিতি সামাল দিতে তিস্তা…

আনন্দাশ্রু ফুলেশ্বরী

ফুলেশ্বরী

নব্বইয়ের দশকের শুরুতে প্রাইমারি শেষ করে সবে হাইস্কুলের চৌকাঠে পা রাখছি। বন্ধুদের সাথে সকাল বিকাল নদীতে ডুবসাঁতার মলাই খেলা আর স্কুলে যাওয়া আসা। খেলাধুলা মন ও মগজ অষ্টপ্রহর। স্কুলের তোতাপাখির মুখস্ত বিদ্যা ছাড়া মেধা ও মনন বিকাশের বয়স হয়নি। খেলাধুলার ফাঁকে গ্রামে যেসব সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড হতো তা হলো পালাগান, মহরমের জারি, ছায়াবানি দস্তর আলীর প্রেমকাহিনীর পুঁথিপাঠের আসর, বাউল সন্ধ্যা এইসব। রহিম বাদশা ও রূপবানের পালাগান ও ঝুমুর যাত্রানাট্যে মাঝিদের গান ও অভিনয় আজো মনে দাগ কাটে। এসবের বাহিরে আপডেট সাংস্কৃতিক মাধ্যম ছিলো বিটিভিতে মাসে একটি বাংলা সিনেমা ও ভাড়ায় চালিত…

নদীস্নানের পর কিছু একলা মুহূর্ত ।। হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

নদীস্নানের

মুক্তগদ্য >> বৃষ্টিদিনে আমার একটা নদীর কথা মনে পড়ে। আমার নদী। আমার বাড়ির উঠোনের এক নদী। অনেকবার তাকে নাম দিতে গেছি। সে মুখ নামিয়ে নিয়েছে। ঠিক যেন মনে হবে নাম বুঝি মুখে পরিয়ে দেওয়া হয়। মুখ নামিয়ে নেওয়ার মানে কি?  আমি আর নদী কি এক স্কুলে পড়তাম? সকলের চোখের আড়ালে গিয়ে আমি তো তাকে আমার প্রিয় কোনো নাম দিতে চাই নি। নাম প্রিয় হয় বুঝি? নাকি মানুষটা প্রিয় হয় আর নাম উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে তার সেই মুখটা ভেসে ওঠে। যখন বলি নামটা প্রিয় ততক্ষণে চোখের সামনে ভেসে ওঠা মুখটায় অনেকবার…

আমার প্রিয় নদী সুবর্ণরেখা ।। সুকন্যা দত্ত

সুবর্ণরেখা

নদীর সাথে আমার প্রথম সখ্যতা গড়ে ওঠে তার দর্শনে নয় শ্রবণে। শুনতে অদ্ভুত লাগলে ও একেবারেই সত্যি। তখন আমার বয়স আড়াই। দার্জিলিং মেল ট্রেন এ  উত্তরবঙ্গে মামাবাড়ি যাওয়ার পথে, ফারাক্কাব্রীজ পার হওয়ার সময় প্রচন্ড শব্দের মাঝে ও রাতের আঁধারে কান পেতে শুনতে পেয়েছিলাম লক গেট এর ভিতর দিয়ে গঙ্গার জল স্রোতের কলতান। ব্যাস ঐ শব্দ শুনেই নিজের অজান্তে ভালোবেসে ফেলি নদীকে। তারপর ওই যাতায়াতের পথে আমার কাছে সবচেয়ে আকর্ষনীয় হয়ে উঠেছিলো রাতের অন্ধকার ভেদ করে নদীকে দেখার  ইচ্ছেটা। নদীকে প্রথম দেখি জলপাইগুড়িতে। তিস্তার সাদা বালুকায় বসে জলের ওঠা নামা দেখতে…

ও নদী বন্ধুয়ার খবর এনে-দে ।। বঙ্গ রাখাল

বন্ধুয়ার

নদীর কথা মনে আসলেই প্রথমে বাবার কথা মনে পড়ে। বাবা বলতেন, তোর দাদাজান ছিল একজন মাছুড়েরে মুনি। যেখানেই মাছ মারার কথা শোনতেন তিনি সেখানেই চলে যেতেন। বাবার মুখেই শুনেছিলাম আমাদের গ্রামের তিনজন মানুষ এক বজ্রপাতেই মারা গিয়েছিল সেটাও ছিল কোন এক নদীতে মাছ মারতে যাওয়ার ঘটনা। আমার যতদূর মনে পড়ে, এটাই বুঝি নদীর সাথে পরিচিত হওয়ার প্রথম সূত্র। আবার যখন দ্বিতীয় কি তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ি তখন কবিতা পড়তাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের- আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে। যাক সে সব কথা। নদীর কথা শুনেছি এটাই…

আমার শৈশব নদী ।। হামিদ কায়সার

আমার

কোন্ নদীর সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হয়েছিল, কোন্ নদী ছিল আমার প্রথম প্রেমিকা? আমি খুঁজি, স্মৃতি হাতড়ে ফিরি, বিভ্রম তৈরি হয়, একবার যদি বুড়িগঙ্গার শেষ বিকেলের জল চলকে উঠে তো, আরেকবার চিরিক মেরে উঠে দুপুরের ঝলমলানো তুরাগ। বুড়িগঙ্গা আমার নানাবাড়ির আর তুরাগ দাদাবাড়ির। জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই এতোবার নানাবাড়ি আর দাদাবাড়ি করেছি যে, আমি আসলে প্রথম কাকে দেখেছিলাম, তুরাগ না বুড়িগঙ্গাকে, সাব্যস্ত করা সত্যি কঠিন হয়ে উঠে। শেষে দ্বারস্থ হই মায়ের, মা চোখ বন্ধ করে বলে দেন, বুড়িগঙ্গা! হ্যাঁ, বুড়িগঙ্গাই হবে। মায়ের এভাবে গভীর আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলার কারণটা হলো, ঢাকা…