বরেণ্য চিত্রকর কাইয়ুম চৌধুরী’র এই লেখাটি গত ০৮-১০-২০১০ তারিখ দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এরপর লেখাটি সাহিত্য, শিল্প ও সংস্কৃতি বিষয়ক মাসিক পত্রিকা কালি ও কলম পুন:প্রকাশ করে। কৃতজ্ঞতা পত্রিকা দুটির প্রতি। লেখাটি প্রাসঙ্গিক মনে হওয়ায় রিভার বাংলার বিশেষ আয়োজন “আমার প্রিয় নদী” সংখ্যায় প্রকাশ করা হল, একইসাথে প্রয়াত এই চিত্রশিল্পীর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি- সম্পাদক। নদী আমাকে হাতছানি দেয়, ডাকে আমি প্রলুব্ধ যৌবনবতীর আহ্বানে, ভেসে যাই তার দুকূল প্লাবিত যৌবনের টানে। আমি অবগাহন করি— দুহাতে উন্মোচিত করি তার উদ্দাম বক্ষদেশ, কি উচ্ছল উচ্ছ্বাসে— কি সুখের আলিঙ্গনে যাই ভেসে।…
মহানন্দার ডাকে ।। হামিদ কায়সার
গায়ের মধ্যে সইসষার তেল মাখতে দেখেই বুকের ভেতরটা দাড়াস করে কেঁপে উঠল আকলিমার। শোয়া থেকে লাফিয়ে উঠে ও ফয়জুরের সামনে দাঁড়াল, ‘তোমা যান কই?’ দুই ঠ্যাঙের আঙুলের গলিঘুপ্চি দিয়ে তেল পাচার করে, ফয়জুরের হাত ডান পা ডলতে ডলতে উপরের দিকে উঠে আসছিল। পাছার আগে পিছে মাখা শেষ করে ওর তৈলাক্ত হাত আবার নেমে যাচ্ছিল বাম নিতম্ব হয়ে নিচের দিকে। ওর চোখের সামনেই পায়ের পর্ব শেষ করে এবার হাতের তালুয় তেল মেখে বুকে-পিঠে তেলের ছোপ মারতে লাগল ফয়জুর। আকলিমাকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকতে দেখে তাড়া দিয়ে উঠল, ‘কী দেহো?…
নদী ও পরিবেশের জন্য আশির্বাদ হয়ে এসেছে করোনা ভাইরাস ।। নদীপুত্র সুমন শামস
করোনাকালে অঘোষিত লকডাউনে দীর্ঘদিন নদীতে লঞ্চ-স্টিমার চলাচল বন্ধ থাকার কারণে বুড়িগঙ্গা নদীসহ দেশের প্রায় সকল নদ-নদীর পানির গুণগত মান বেড়েছে। পণ্যবাহী জাহাজ ছাড়া দীর্ঘ দুইমাস নদীতে চলেনি যাত্রীবাহী কোন ধরণের লঞ্চ-স্টিমার। ইঞ্জিনের ভট ভট বা ভোঁ ভোঁ শব্দ ছিলো না। একই সময়ে নদীর তীরের কলকারখানাও বন্ধ ছিল। পানিতে মিশতে পারেনি কল-কারখানার দূষিত বর্জ্য। তাই শান্ত নদীর বুকে এখন শুধু মৃদু ঢেউয়ের কলকল ধ্বনি। ঢাকার প্রধান নদী বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু, শীতলক্ষ্যা নদীর পানি এখন আগের চেয়ে অনেক বেশী স্বচ্ছ। এই রকম পরিস্কার পানির বুড়িগঙ্গা নদী বাঁচাতে কলকারখানার বর্জ্য শোধনাগার পরিবেশসম্মত করতে…
এই সময়ের বুড়িগঙ্গা: বাড়ছে পানি, বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রশস্ততা
মো.ইউসুফ আলী>> বুড়িগঙ্গা একটি নদী। একটি জীবন্ত ইতিহাস। একটি দেশের রাজধানী রক্ষার মূল নৌ-পথ। এ নদীটি এখন মৃতপ্রায়। কিন্তু এখন গ্রীস্মের মাঝামাঝি সময়েই পাল্টে যেতে শুরু করেছে বুড়িগঙ্গা। রূপ আর রংয়ে বদলে যায় নদীটি। বদলে যায় বুড়িগঙ্গার পানি। তাইতো দেশের আর সব নদীর মতই বুড়িগঙ্গার পানির রং এখন ফিরে পেয়েছে স্বচ্ছতা। আস্তে আস্তে কমতে শুরু করেছে পচা পানির দুর্গন্ধ। দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যা চলমান থাকায় স্বাভাবিকতার চেয়ে অতিমাত্রায় বেড়েছে বুড়িগঙ্গার পানি। সাথে সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে নদীর প্রশস্ততাও। অর্থাৎ প্রাণ ফিরেছে বুড়িগঙ্গায়। নদীর পানি বৃদ্ধিপেয়ে এটাকে এখন ঠিক নদীর মতই মনে…
আমার শৈশবের তুরাগ এখন অর্ধমৃত! ।। মোহাম্মাদ এজাজ
দেশের অনেক নদীই আজ তার ঐতিহাসিক নাম হারিয়ে যেন এক নামে উপনীত হয়েছে- সেটি হলো ‘মরা নদী!’ একটি নদী মরে গেলে শুধু নদীই মরে না, তাকে ঘিরে গড়ে ওঠা জনসংস্কৃতিও মরে যায়! জনসাধারণের জীবিকা নির্বাহের প্রতিবন্ধকতা, নদীমাতৃক এলাকায় মরুকরণ, জীববৈচিত্র্যের বিপন্নতাসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়। দেশের সেই সব মরণাপন্ন নদীর একটি তুরাগ। দখল, ভরাট আর দূষণে ‘নিখোঁজ’ হতে চলেছে তুরাগ নামের এই নদটি। এটিই আমার শৈশব ও কৈশোরের কহর দরিয়া। শৈশবে এই তুরাগই আমার উচ্ছলতা ও চঞ্চলতার নেপথ্যে ছিল। এটিই আমার ভালবাসার নদ। প্রিয় তুরাগ, আদালতের রায়ে জীবন্তসত্তা তুরাগ। আমার…
বানের পানি চোখের জল একাকার!
মো.ইউসুফ আলী ।। দেশে একদিকে করোনা আরেক দিকে বন্যা। আবার এসেছে ঈদ। সাধারন খেটে খাওয়া মানুষের কাজকর্ম স্থবির। কি করবে মানুষ! কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? কোথায় মিলবে ঠাঁই? এসব হিসেব মিলাতে দিশেহারা আজ দেশবাসী। করোনা আক্রান্তে কাপঁছে দেশ। প্রতিদিন হাসপাতাল গুলেতে বাড়ছে করোনা রোগির সংখ্যা। এ মহামারি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার। হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালগুলো। অতিরিক্ত রোগিতে কাহিল ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীরাও। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী আজ পর্যন্ত সারাদেশে আক্রান্ত রোগীর সংখ্য একলক্ষ একাশি হাজার একশ উনত্রিশ জন। মৃত্যু হয়েছে অন্তত দুই হাজার তিনশ পাঁচ জনের। তবে সরকারি হিসেব এমনটা হলেও সারাদেশে বাসাবাড়িতে…
বাড়ির পাশে সিঙ্গুয়া নদী ।। এম জে এইচ বাতেন
ছোটকাল থেকে শুনে আসছি নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশ। এদেশের মানুষের জীবনও নদীকেন্দ্রিক। নদীর সাথে মানুষের সম্পর্ক মায়ের মতো। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এসব নদ-নদীর ভূমিকা অপরিসীম। এদেশে নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠেছে সর্বাধিক জনবসতি। নদীর সঙ্গে মানুষের জীবন-জীবিকা, সুখ-দুঃখ, আবেগ-ভালোবাসা জড়িত রয়েছে। হাজার বছরের গ্রামীণ ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিতেও রয়েছে নদ-নদীর প্রভাব। নির্বাচনের সময় নদীও রাজনৈতিক অঙ্গনে নদীর দুই পাড়ের মানুষের মধ্যে এক ধরনের বিভাজন তৈরি করে। নদীর এপার ও ওপারের বিষয়-আশয় নিয়ে চায়ের দোকানে চলে নানান যুক্তি-তর্কের ঝড়। মনে হয় যেন নদী ও মানুষ মিলেমিশে একাকার। তেরোশত নদীর দেশ বাংলাদেশ। যার মধ্যে…
যে জলে জীবন জ্বলে ।। রেজাউল করিম
ছেলেবেলা থেকেই নদী ও প্রকৃতির সাথে আমার জীবন জড়িয়ে আছে আষ্টেপৃষ্ঠে। নদী ও প্রকৃতির শান্ত-সৌম্য-স্নিগ্ধ রূপ মাধুর্য দেখে যেমন মুগ্ধ ও বিমোহিত হয়েছি তেমনি এর রুদ্র রূপ, ঝঞ্জা-বিক্ষুব্দ ভয়ংকর নিষ্ঠুরতা দেখে হয়েছি অস্থির, কখনোবা বেদনায় নীল। প্রবল ঢেউ ও ঝরো হাওয়ায় কখনো বা বিপন্নবোধ করেছি মেঘনা, পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার মাঝনদীতে। উত্তাল ঝড়ো হাওয়ায় ডুবে মরার হাত থেকেও দু’একবার প্রাণে বেঁচে ফিরেছি! আমার বেড়ে ওঠা খাল-বিল-নদী-নালা বিধৌত গ্রামীণ জনপদে। আশৈশব বিচরণ করেছি অনাবিল ও স্নিগ্ধ প্রকৃতির মাঝে। নানা ধরনের দেশীয় নৌকা, লঞ্চ, স্পীডবোট, স্টীমারসহ নানান ধরনের জলযানে চড়ে নদীপথে ভ্রমণ করেছি…
চাঁদপুরের নদী, প্রকৃতি ও ইলিশ ।। সৌম্য সালেক
‘নদীমাতৃক একটি ভূগোল ঘুরতে ঘুরতে আমি ঘুরে এলাম উড়তে উড়তে আমি উড়ে এলাম না কোনো রহস্য ছিল না না কোন চমক ছিল না কেবল একঘেয়ে এক ক্লান্তি দেখতে দেখতে আমি হয়ে উঠি যুগলতা আমি দেখতে দেখতে খসিয়েছিলাম শরীরের তাবৎ ক্লান্তি ওম শান্তি, ওম শান্তি’ –কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা আমরা নদীমাতৃক ভূ-ভাগের অধিবাসী। নদীর প্রভাবে আমরা নানাভাবে প্রতীকায়িত হয়েছি। নদীর বাঁধাহীন ছুটে চলার সাথে মিল রয়েছে মানব জীবনের প্রবাহমানতার। নদীর ইতিহাসও মানুষের ইতিহাসের মতোই প্রাচীন এবং বৈচিত্রপূর্ণ। বাংলাদেশের পুরো ভূগোলজুড়ে জালের মতো ছড়িয়ে বিছিয়ে রয়েছে অনেক নদী। শাখা-প্রশাখাসহ প্রায় ৮০০ নদ-নদীর…
ভয়ংকর রূপে ফুঁসে উঠেছে তিস্তা নদী
ফের ভয়ংকর রূপে ফুঁসে উঠেছে তিস্তা নদী। উজানের পাহাড় ও সমতলে একটানা বৃষ্টি ও গজলডোবা হতে প্রচুর পানি ছেড়ে দেয়ার জেরে পানি বৃদ্ধি পেয়ে ফুঁসে উঠেছে তিস্তা। শুক্রবার (১০ জুলাই) সকাল ৬টার পর হতে ১২ ঘন্টায় নদীর পানি ৪০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে সন্ধ্যা ৬টায় বিপদসীমার (৫২.৬০) ২৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। অথচ এ দিন সকাল ৬টায় তিস্তার পানি বিপদসীমার ১২ সেন্টিমিটার নিচে ছিল। সেই সঙ্গে ঢলের পানি দ্রুতগতিতে অব্যাহতভাবে বেড়েই চলেছে।সূত্র: দৈনিক জনকন্ঠ। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নীলফামারীর ডালিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, পরিস্থিতি সামাল দিতে তিস্তা…
আনন্দাশ্রু ফুলেশ্বরী
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে প্রাইমারি শেষ করে সবে হাইস্কুলের চৌকাঠে পা রাখছি। বন্ধুদের সাথে সকাল বিকাল নদীতে ডুবসাঁতার মলাই খেলা আর স্কুলে যাওয়া আসা। খেলাধুলা মন ও মগজ অষ্টপ্রহর। স্কুলের তোতাপাখির মুখস্ত বিদ্যা ছাড়া মেধা ও মনন বিকাশের বয়স হয়নি। খেলাধুলার ফাঁকে গ্রামে যেসব সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড হতো তা হলো পালাগান, মহরমের জারি, ছায়াবানি দস্তর আলীর প্রেমকাহিনীর পুঁথিপাঠের আসর, বাউল সন্ধ্যা এইসব। রহিম বাদশা ও রূপবানের পালাগান ও ঝুমুর যাত্রানাট্যে মাঝিদের গান ও অভিনয় আজো মনে দাগ কাটে। এসবের বাহিরে আপডেট সাংস্কৃতিক মাধ্যম ছিলো বিটিভিতে মাসে একটি বাংলা সিনেমা ও ভাড়ায় চালিত…
নদীস্নানের পর কিছু একলা মুহূর্ত ।। হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
মুক্তগদ্য >> বৃষ্টিদিনে আমার একটা নদীর কথা মনে পড়ে। আমার নদী। আমার বাড়ির উঠোনের এক নদী। অনেকবার তাকে নাম দিতে গেছি। সে মুখ নামিয়ে নিয়েছে। ঠিক যেন মনে হবে নাম বুঝি মুখে পরিয়ে দেওয়া হয়। মুখ নামিয়ে নেওয়ার মানে কি? আমি আর নদী কি এক স্কুলে পড়তাম? সকলের চোখের আড়ালে গিয়ে আমি তো তাকে আমার প্রিয় কোনো নাম দিতে চাই নি। নাম প্রিয় হয় বুঝি? নাকি মানুষটা প্রিয় হয় আর নাম উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে তার সেই মুখটা ভেসে ওঠে। যখন বলি নামটা প্রিয় ততক্ষণে চোখের সামনে ভেসে ওঠা মুখটায় অনেকবার…