নদীর সাথে আমার প্রথম সখ্যতা গড়ে ওঠে তার দর্শনে নয় শ্রবণে। শুনতে অদ্ভুত লাগলে ও একেবারেই সত্যি। তখন আমার বয়স আড়াই। দার্জিলিং মেল ট্রেন এ উত্তরবঙ্গে মামাবাড়ি যাওয়ার পথে, ফারাক্কাব্রীজ পার হওয়ার সময় প্রচন্ড শব্দের মাঝে ও রাতের আঁধারে কান পেতে শুনতে পেয়েছিলাম লক গেট এর ভিতর দিয়ে গঙ্গার জল স্রোতের কলতান। ব্যাস ঐ শব্দ শুনেই নিজের অজান্তে ভালোবেসে ফেলি নদীকে। তারপর ওই যাতায়াতের পথে আমার কাছে সবচেয়ে আকর্ষনীয় হয়ে উঠেছিলো রাতের অন্ধকার ভেদ করে নদীকে দেখার ইচ্ছেটা। নদীকে প্রথম দেখি জলপাইগুড়িতে। তিস্তার সাদা বালুকায় বসে জলের ওঠা নামা দেখতে…
ও নদী বন্ধুয়ার খবর এনে-দে ।। বঙ্গ রাখাল
নদীর কথা মনে আসলেই প্রথমে বাবার কথা মনে পড়ে। বাবা বলতেন, তোর দাদাজান ছিল একজন মাছুড়েরে মুনি। যেখানেই মাছ মারার কথা শোনতেন তিনি সেখানেই চলে যেতেন। বাবার মুখেই শুনেছিলাম আমাদের গ্রামের তিনজন মানুষ এক বজ্রপাতেই মারা গিয়েছিল সেটাও ছিল কোন এক নদীতে মাছ মারতে যাওয়ার ঘটনা। আমার যতদূর মনে পড়ে, এটাই বুঝি নদীর সাথে পরিচিত হওয়ার প্রথম সূত্র। আবার যখন দ্বিতীয় কি তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ি তখন কবিতা পড়তাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের- আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে। যাক সে সব কথা। নদীর কথা শুনেছি এটাই…
আমার শৈশব নদী ।। হামিদ কায়সার
কোন্ নদীর সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হয়েছিল, কোন্ নদী ছিল আমার প্রথম প্রেমিকা? আমি খুঁজি, স্মৃতি হাতড়ে ফিরি, বিভ্রম তৈরি হয়, একবার যদি বুড়িগঙ্গার শেষ বিকেলের জল চলকে উঠে তো, আরেকবার চিরিক মেরে উঠে দুপুরের ঝলমলানো তুরাগ। বুড়িগঙ্গা আমার নানাবাড়ির আর তুরাগ দাদাবাড়ির। জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই এতোবার নানাবাড়ি আর দাদাবাড়ি করেছি যে, আমি আসলে প্রথম কাকে দেখেছিলাম, তুরাগ না বুড়িগঙ্গাকে, সাব্যস্ত করা সত্যি কঠিন হয়ে উঠে। শেষে দ্বারস্থ হই মায়ের, মা চোখ বন্ধ করে বলে দেন, বুড়িগঙ্গা! হ্যাঁ, বুড়িগঙ্গাই হবে। মায়ের এভাবে গভীর আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলার কারণটা হলো, ঢাকা…
হালদা নদীকে বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ ঘোষণা: যৌক্তিকতা ও বিশ্লেষণ
ড. মো. মনজুরুল কিবরীয়া ।। বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ- কথাটি কেবল আক্ষরিক অর্থেই নয়, সামগ্রিক অর্থেই সত্য। বাংলাদেশের মানচিত্র নদীর কল্যাণেই সৃষ্ট। ঐতিহাসিক কাল থেকেই বাংলা ভূখণ্ডের মাটি ও মানুষের সঙ্গে নদ-নদী ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত। সবুজ শ্যামল সৌন্দর্যের চাবিকাঠির একমাত্র বাহক ও নিয়ন্ত্রক। বাংলাদেশে সভ্যতার ক্রমবিকাশ, যোগাযোগ- অর্থনীতির মূল ভিত্তি রচিত হয়েছে নদীকে কেন্দ্র করে তেমনি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যেরও মূল ভিত্তি নদী নির্ভর। সাহিত্য, গান, নাটক, চলচ্চিত্রে নানাভাবে উঠে এসেছে নদীর প্রসঙ্গ। অথচ আমরা নদীকে নিয়ে কতটুকু ভাবি বা জানি। যে দেশ নদীর কল্যাণে গড়ে উঠেছে সেদেশেই নদী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত…
তদন্তেই সীমাবদ্ধ সব নৌ-দুর্ঘটনা : আর কত প্রাণ দিলে এর অবসান ঘটবে!
মো. ইউসুফ আলী ।। আবারো লঞ্চ ডুবি। আবারো প্রাণহানী। এবারতো একেবারে তীরে এসে তরী ডুবলো। ময়ূর-২ এর ধাক্কায় অর্ধশতাধিক যাত্রী নিয়ে ডুবে গেল মর্নিং বার্ড নামের ছোট একটি লঞ্চ। মুন্সিগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা লঞ্চটি একেবারে সদরঘাটের নিকটে এসেই ডুবলো। এতে শিশু ও নারীসহ অন্তত ৩৩ জনের প্রাণ গেলো। প্রতি বছরই এভাবে একের পর এক নৌ-দুর্ঘটনা ঘটেই চলছে। এ যেন কোন ভাবেই থামছে না। তাই দেশের সচেতন মানুষের কাছে এটা এখন প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে যে, নৌ-পথে আর কত প্রাণ দিলে এর অবসান ঘটবে। কারণ একের পর এক নৌ-দুর্ঘটনা যেমন ঘটেই…
মোট ৩৩ লাশ উদ্ধার : অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা
মো.ইউসুফ আলী, কেরাণীগঞ্জ থেকে>> অনেক জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে উদ্ধার হয়েয়ে ডুবে যাওয়া লঞ্চটি। মিলেছে আরো একজনের মরদেহ। এরই সাথে উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। উদ্ধারের পর লঞ্চটিকে কেরাণীগঞ্জের তৈলঘাট সংলগ্ন নদীতে ফেলে রাখা হয়েছে। যা পরবর্তীতে টেনে উপরে তোলা হবে। একই সাথে দুপুর আড়াইটার দিকে উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করেন উদ্ধারকারি ডুবুরি দল। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসাইন উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে লঞ্চডুবির ঘটনায় নিখোঁজদের সন্ধানে ফের উদ্ধার কাজ শুরু করে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল। অভিযানের একপর্যায়ে দুপুর পৌনে…
বুড়িগঙ্গায় লঞ্চ ডুবি : বিভিন্ন মহলের শোক
ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীতে লঞ্চডুবির ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের দুই নদী ও পরিবেশ কর্মী। মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩৩ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য নদী বাঁচাও কমিটির উদ্যোক্তা পরিবেশবাদী সংগঠনের সম্পাদক নব দত্ত জানান- এটা খুব দুর্ভাগ্যজনক ও দুঃখজনক ঘটনা।বাংলাদেশে লঞ্চ গুলি গুরুত্বপূর্ণ পরিবহনের মাধ্যম। সেখানে এত প্রাণহানি শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল।খোঁজ নেওয়া দরকার কেন এটা হল? দুই বাংলাই নদীমাতৃক।যাত্রী সুরক্ষা ও নদীর দিকে নজর দিতে হবে আরও বেশি করে। এই প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য নদী বাঁচাও কমিটির অন্যতম আহবায়ক তুহিন শুভ্র মন্ডল জানান – …
জলকাটার শব্দ শুনি ।। সত্যজিৎ রায় মজুমদার
মায়ের পরে খুব রাগ হচ্ছে। ভীষণ ঘুম পাচ্ছে কিন্তু ঘুমাতে পারছি না। মেঝেতে মাদুর বিছিয়ে শুয়ে আছি তবু মনে হচ্ছে নৌকায় শোয়া আর একটা দোলা লাগছে। মা, আমি ঘুমাতে পারছি না! ঢুল লাগছে। মা এটাকে উপেক্ষা করছে। এবার চিৎকার করে কান্না জড়ানো সুরে জানালাম। মা তবু হাসছে- ওরে পাগল, সারাদিন নৌকায় শুয়ে থেকে ঢুল লেগেছে। শুয়ে পড়, একটু পর ঠিক হয়ে যাবে। টাবুরে করে মামাবাড়ি থেকে বাড়ি এসেছি। বিকালে একটু শুয়েছিলাম। আমাদের বাড়ি মোংলা পোর্ট থেকে পূর্ব দিকে তিন কি.মি. কাইনমারী গ্রামে। মামাবাড়ি একই জেলা বাগেরহাটের রামপাল থানার মালীডাঙ্গা গ্রাম।…
শঙ্খ নদ : দ্যা রিগ্রাই খিয়াং ।। মুহাম্মদ মনির হোসেন
একটি বাঁক পেরিয়ে আরেকটি বাঁক মানেই নতুন সৌন্দর্যের সংজ্ঞা খোঁজা। যেন নদীর গতিপথ এখানেই শেষ, তবে সেটি নিছক মরীচিকা। আরেকটি বাঁক নিয়ে যাবে নিরুদ্দেশের দিকে। এটিই ‘শঙ্খ’ নদ। স্থানীয়রা একে ‘রিগ্রাই খিয়াং’ বা ‘স্বচ্ছ নদী’ নামে ডাকে। শঙ্খের সাথে আমার পরিচয় ২০১০ সনের শেষের দিকে। বান্দরবান থেকে রুমা যাওয়ার পথে মিলনছড়িতে তার সাথে প্রথম দেখা। পাহাড়ের উপর থেকে দেখা শঙ্খকে খুবই আকর্ষণীয় মনে হয়েছিল। দূর থেকে এক পলক দেখেই তার প্রতি ভাল লাগা শুরু। তারপর রুমা যাওয়ার পর আবার ভাল করে দেখা ও অনুভর করা। তাতেও মন ভরেনি। তাই নৌকা…
বুড়িগঙ্গায় লঞ্চ ডুবি : ৩২ মরদেহ উদ্ধার, বিভিন্ন মহলের শোক
মো.ইউসুফ আলী, কেরাণীগঞ্জ থেকে>> বুড়িগঙ্গা নদীর শ্যামবাজার ফরাশগঞ্জ এলাকায় অর্ধশতাধিক যাত্রী নিয়ে একটি লঞ্চ ডুবির ঘটনায় এ পর্যন্ত নারী ও শিশুসহ ৩২ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে উদ্ধার কর্মে নিয়োজিত ডুবুরিদল। বেশ কয়েকজন যাত্রী সাঁতরে উপরে উঠে গেছে বলেও জানিয়েছেন উদ্ধার কাজে নিয়োজিতরা। এছাড়া আর কোন যাত্রী নিখোঁজ রয়েছে, তা এখনও জানা যায়নি। উদ্ধারকৃতদের মধ্যে ৭ জন নারী ও ৩ জন শিশু ও ২২ জন বিভিন্ন বয়সের পুরুষ রয়েছে বলে জানিয়েছেন উদ্ধার কাজে নিয়োজিতরা। লাশ উদ্ধারের পর মিটফোর্ট হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছেন উদ্ধারকর্মীরা। সেখান থেকে স্বজনরা লাশ চিহ্নিত করে নিয়ে যাবেন…
বুড়িগঙ্গায় লঞ্চ ডুবি: ২৯ মরদেহ উদ্ধার
মো.ইউসুফ আলী, কেরাণীগঞ্জ থেকে >> বুড়িগঙ্গা নদীর শ্যামবাজার ফরাশগঞ্জ এলাকায় অর্ধশতাধিক যাত্রী নিয়ে একটি লঞ্চ ডুবির ঘটনা ঘটেছে। এতে এ পর্যন্ত নারী ও শিশুসহ ২৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে উদ্ধার কর্মে নিয়োজিত ডুবুরিদল। এছাড়া আরও অনেক নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গেছে। তাদের উদ্ধারে তৎপরতা চালাচ্ছেন কোষ্টগার্ড, নৌ-পুলিশ নৌবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল। জানা যায়, আজ ২৯জুন সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মুন্সিগঞ্জ কাঠপট্টি থেকে প্রায় অর্ধশতাধিক যাত্রী নিয়ে ঢাকায় আসছিলো এমভি মনির্ং বার্ড নামের একটি যাত্রীবাহিী লঞ্চ। লঞ্চটি ঢাকা সদর ঘাটের কাছাকাছি শ্যামবাজার বরাবর আসলে ফরাশগঞ্জ ঘাট সংলগ্ন কুমিল্লা…
আমার ছেলেবেলার বড়নদী ।। মু আ লতিফ
আমি যখন ছোট ছিলাম তখন আমার একটা বড়নদী ছিলো। এখন আমি বড় হয়েছি, এখন সেই নদী ছোট হতে হতে প্রায় মিলিয়ে গেছে। আমি কোনোভাবেই আমার ছেলেবেলার নদীর সাথে একে মিলাতে পারি না। আমার মন ভারাক্রান্ত হয়, আমি বড় কষ্ট পাই। আথচ ছেলেবেলায় এই নদীই ছিলো আমার ভালোবাসা। আমার শৈশব-কৈশর নদীর জল, জলের নিরবধি বয়েচলা, বর্ষায় টই-টম্বুর স্রােতধারার সাথে মিশে ছিলো। শুধু কী তাই- আমার শরীর-মন ও আমার চৈতন্যকে বিকশিত করেছিলো আমার প্রিয় ভালোবাসার এই নদী। আমার জন্মভিটা থেকে তিন’শ গজ দূরেই ছিলো সেই নদী। সেই নদীতে সাঁতার কাটা, বন্ধুদের নিয়ে…