সুরাইয়া খানমের কবিতা : ও ঘূর্ণি ও জলোচ্ছ্বাস

ও ঘূর্ণি, ও জলোচ্ছ্বাস, নদীকে আহত তুমি কোরো না, কোরো না! কত যে লাঞ্ছনা, ক্লেদ, বুকে নিয়ে নীরবে বইছে নদী নদী তো সতিন নয় কারো, তুমি ফিরে ফিরে কেন ছুরি মার? ও ঘূর্ণি, ও জলোচ্ছ্বাস, ও দাপট, ওই ত্রাস নদীকে দিও না তুমি, নদীকে বইতে দাও একাকী মেখলা ‘পরে হেঁটে যেতে দাও। বুকে তার দুলে থাক পালতোলা জলতরুদল, ওকে আর ছিনিয়ে নিও না ঘূর্ণি, নদীকে আহত তুমি কোরো না, কোরো না! কচুরিপানা ও দাম, শ্যাওলা সবুজ ঘাম রাখতে দাও, থাকতে দাও ওর নিজ পায়ে, ওর বুকে খেলে যাক জলসাপ, শুশুক…

নদী সরে গেলে ।। ইন্দ্রনীল সুমন

ইন্দ্রনীল

নদী সরে গেলে ।। ইন্দ্রনীল সুমন একটানা বৃষ্টির শব্দে ঘোর লেগে গেলে অনুভব হয় নদী সরে গেছে নদী সরে গেছে, অভিমানে, আপন সন্তান ছেড়ে বাস্তু ছেড়ে আশা-আকাঙ্ক্ষা, স্নেহের আদর ছেড়ে সরে গেছে নদী পদচিহ্ন রেখে গেছে বাওরের বুকে হা-হুতাশ রেখে গেছে জলজ উদ্ভিদের গোপন ডেরায় বর্ণান্ধ কিশোরের আসমানী চোখে এঁকে দিয়ে গেছে সাতনরী হার, পাকা হাতে লিখে দিয়ে গেছে উপকথা-গান জুড়ে দিয়ে গেছে সুরে সুর বিষণ্ণ নুপুরের তালে নদী সরে গেলে কান্না সরে যায় প্রেম সরে যায় মানুষ সরে যায় একলা কিশোর শুধু বসে থাকে আসার আশায় নদী সরে গেলে…

নদী বিষয়ক কবিতা “আত্মীয়”- ফারুক মাহমুদ

কবিতা: আত্মীয় ১. আমি ঠিক এসে যাবো। নদী, তুমি কিন্তু অপেক্ষা করো না জানই তো সময়ের স্বেচ্ছাচার আঁট করে আছে রাত্রিগুলো ঢুকে যাচ্ছে অঘুমের দীর্ঘ কোলাহলে দিনের ব্যস্ততা থেকে ঝরে পড়ে মূল্যশূন্য ধূলো এর মধ্যে জারি হয় রোদনের খিন্ন প্রজ্ঞাপন কিছু কান্না জমে গেছে। নদী, বলো, কার কাছে কাঁদি আমার চোখের জল তুমি ছাড়া আর কেউ বোঝ!? ২. জলের নিঃশ্বাস থেকে পাওয়া যায় ছন্দশুদ্ধ গান স্বভাবে বাউল বটে, যেতে যেতে বহুদূর যায় কান্নার বিচিত্র শ্রেণি। নৈশব্দ ও শব্দপ্রকরণে অক্লান্ত জাগিয়ে রাখে বিষাদের নানারং আলো নদীকে আত্মীয় মানি। ওর ভাষা সর্বজনভাষা…

এক নদী গল্প- মুহাম্মাদ মিজানুর রশীদ শুভ্র

এক নদী গল্প- মুহাম্মাদ মিজানুর রশীদ শুভ্র

কবিতা: এক নদী গল্প না, আমি পুর্ব পরিকল্পিত প্রেম করিনি সে নদী ছিল কান্নার মতো স্বতস্ফূর্ত পার ভাঙা ছিল তার উচ্ছ্বাস না, কোন পরিকল্পনা করে নদী পাড় ভাঙেনি নদী গুলো খুব আহ্লাদ করে সবুজ গ্রামের গা ঘেষে থাকে তবুও তোমরা নদীতে বাঁধ দাও তোমরা পরিকল্পনা করে বাঁধ দাও আমি, আগে থেকেই সব ঠিক করে রাখিনি তোমাদের মনে বিশ্বাস ছিল না হয় তো শুধু মাটি জানে, যে মাটির কসম খেয়ে নদী চলে কতো শত বর্ষাকাল শুষে নি মাটি নদী কে শুষে না সে, অথচ তোমরা বাঁধ দিলে পরিকল্পনা করে যে বাঁধ…

গাঙ নিহন্তা ।। কপোতাক্ষী নূপুরমা সিঞ্চি

কপোতাক্ষী

কবিতা গাঙ নিহন্তা ।। কপোতাক্ষী নূপুরমা সিঞ্চি সঙ্গীর টানে গাঙচিল হইলো দেশান্তরি দিন গেলো তার মন অসুখে নদী মারে ছাড়ি যার পেটের মাছ ভক্ষণে গেলো কৈশোরকাল তার জলের স্মৃতি নাচে স্বপ্নে হাহাকার। ধবল ডানা মেইল্যা ধরে যাবে মায়ের কোল জলে স্নানে অস্ত যাবে দুঃখ নদীর অতল আৎকা ডরে ঝটকা লাগে ডানার গতি শ্লথ জল শুকায়্যা ঘুইরা বেড়ায় অজগরের রথ। গাঙ মইরা নিদাঘে জাগে মাতৃছাতি ফাটা চর পক্ষীর চোখে নদীর আঁকার বিশাল অজগর জলের গলায় ফাঁস লাগাইলো বাহারি পলিথিন এই কারবার মানুষের না ‘এক যে ছিলো জ্বীন।’ স্মৃতির গাঙে জলকেলি হিরক…

সব নদী গাছ ।। হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

কবিতা সব নদী গাছ ।। হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় সবুজ দুপুরের পাশ দিয়ে যত নদী বয়ে গেছে কোনো পান্থশালা থেকে তাদের ডাক আসে নি বাসস্ট্যান্ড থেকে চেনা পথের বন্ধু হাতনাড়া দিয়ে ঝড়ের পথে কথা বলে নি যত উপনদী শাখানদী সব এক একটা গাছ বাড়ির পাশ দিয়ে এলেও এখন হাতের নাগালের বাইরে শাসকের ভোঁতা বইয়ে নদীর সংজ্ঞায় আগামীর সারা মন আর্দ্র হয়ে উঠতে দেখে পাঠ থেকে নদীনাম উঠে গেছে সব ভুলে গেল প্রতি পথে জল দিয়ে মুখ দেখেছিল সে জলের ভুল নামতায় মাটি তো মরুভূমি নদীপথে ছাড়া বৃষ্টির গান কোথায়? এখনও কেউ কেউ…

তিনি ছিলেন নদীর সন্তান 

সন্তান 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আজ তাঁর জন্মদিন। আজ আরও একবার অনুভব করলাম প্রবল ভাবে যে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন আক্ষরিক অর্থেই নদীর সন্তান। তাই লেখার তাগিদ অনুভব করলাম।যদিও এটা খন্ডাংশ বলাই শ্রেয়। নদীর সন্তান না হলে কেউ এভাবে নদীকে তাঁর চিন্তা- চেতনা-ভাবনা- লেখায় জড়িয়ে নিতে পারেন?!  অথচ কি আশ্চর্য! তাঁর জীবনের প্রথম ভাগে নদীর সাথে তার সংযোগ আমরা সেই অর্থে পাইনা। নদী প্রবাহিত হয় সর্পিল গতিতে, আঁকাবাঁকা পথে। আমাদের জীবনের পথও কি তেমন নয়? বিচিত্র সব ইতিহাস যেন লুকিয়ে আছে নদীর সব বাঁকে বাঁকে। একটু যদি দৃষ্টি প্রসারিত করি তাহলে দেখবো যে দুই…

বরাকের স্মৃতির ঊর্মি : মো. আজাদ বারী শিপু 

বরাকের স্মৃতির ঊর্মি ।। মো. আজাদ বারী শিপু ।। তব যৌবনের সেই ঊর্মি জাগায় স্মৃতি হৃদয়ে সতত তব ভ্রমি। তব জলধারা পাহার হতে করতো আগমন, তব শীতল জলে কিশোরমনে পেতাম দরশন। আজ তুমি মৃত্যু মুখে।। হে স্নেহময়ী বরাক! তব উপর শোষণে মুই নির্বাক ভূ’তে আমি যে দুর্বল একজন যদি সাথে থাকিতো কতজন, বাঁচাতাম তোমায়। ওরা আপনা স্বার্থপর খাবে গাছ, ডাল, পল্লব রাখবে না তো জর, চলছে তব উপর জুলুম অত্যাচার কতক ভ্রান্তি, কবিতা লিখে দিতে পারবো কি শান্তি? শান্তি নাইবা পাও, লিখবো কবিতা তব অধিকার মূলে, ভাসিয়ে দিবো কচি হস্তে…

ইন্দ্রনীল সুমন এর একগুচ্ছ কবিতা

কবি ইন্দ্রনীল সুমন এর একগুচ্ছ কবিতা

নদীর গান ……………………………………. নদীর কাছে হাত পেতেছি, নদী বলল এসো, চরায় বোসো, খানিক গল্প করি, চাইলে ঘর বাঁধতে পারো, জোয়ার এলে পা ভিজিয়ো আলতো করে, কলঙ্ক নয় রাখবো আমি চোখের আড়াল, তোমার বুকে তখন চাঁদের কাঞ্জিভরম, আখতারীবাই বসত করে কান্না জুড়ে পান্না চুনী তোমার চোখে, লাব-ডুব-লাব লাব-ডুব-লাব, শব্দটুকু ঝরতে থাকে, ঝরতে থাকে, দিগন্তে ঐ রাত্রিজুড়ে…… যাপন ……………………………………… লাল জামাটা উড়িয়ে দিলাম চৈতি মেঘে যা উড়ে যা যেমন তেমন ভীষণ বেগে সমুদ্রসাত চৌদ্দ নদী তোর সাথে যাক শুনছি নাকি তোর এখনও দারুণ দেমাক! অযুত পাখি রাত জোনাকি আঁকছে ছবি পলাশফুলে আবির…

কবি ইন্দ্রনীল সুমন এর একগুচ্ছ কবিতা

কবি ইন্দ্রনীল সুমন এর একগুচ্ছ কবিতা

বাঁওড় ………….. ইছামতী পাশ দিলে রোদেজলে ঝিলমিল বাঁওড়ের বুক শুনেছি নদীর না কি মৃত্যুদিন হয় শোকসভা, ফুলমালা ধূপগন্ধে স্মৃতি দু-মিনিট নীরবতা, মৃদু কাশি, ব্যস, ঠিক আছে! মানুষ পাশ দিলে, মন অমরায়, পবিত্র ঘণ্টাধ্বনি মৃদুতর সুর নিয়ত বাজতে থাকে, স্মৃতির জীবন দীর্ঘ হয়, দীর্ঘতর অবহেলা ঘরে, ধূলির বসন! নদী তার ছেড়ে যাওয়া জলচলে রাখে আপনার কীর্তিকথা, সুখ শোক হাসি, আনন্দ হতাশার চূর্ণকুন্তল… স্মৃতি বড় অসহায়, অমরতা নিয়ে, এ ডালে সে ডালে বসে, শাপগ্রস্ত ফিঙে! ……………………………………………………… মোহনিয়া ………………. স্বপ্নে এক নদী আসে কেন? ভৈরবী ভোরে? অহেতুক জলছুঁই খেলাধুলা শেষে ও মোর বালকদিন…

কবিতা : শাখা বরাকের আর্তনাদ- মো. আজাদ বারী শিপু

কুশিয়ারায় জন্ম নিয়ে ছিলাম আমি সুখে, ভরা যৌবন জোয়ার ছিল আমার দেহে। বুকে ছিল হাজার প্রজাতির মাছের আনাগোনা, মাছ ধরিয়া উদরপূর্তি করতো মানুষজনা। জল ছিল মোর কানায় কানায় ডেউ ছিল মোর বুকে, মোর জলে শ্বস্য ফলায়ে পারের মানুষ থাকতো মহা সুখে। উজান থেকে ভাটির দিকে অবাধ ছিল যাওয়া আসা,  স্বাধীন যাত্রায় বাধ সাজিলো কিছু মানুষ নামের সর্বনাশা। বুকে আমার বাঁধ বাঁধিল করলো দালান ঘর, যৌবন জুয়ার থামিয়ে দিল মানব নামের লোভী স্বার্থপর। বাঁচাও আমায় ওহে মানব বাঁচতে বড় স্বাদ, ভেঙ্গে ফেলো দালানকোঠা তুলে ফেলো বাঁধ। তবেই হারানো যৌবন আসবে আবার…

কবি মীরন রশীদ এর কবিতা “আমি নরসুন্দা বলছি”

আমি নরসুন্দা বলছি – মীরন রশীদ ব্রক্ষ্রপূত্রে জন্মেছিলাম শত জনম আগে ধনুর সাথে মিশেছিলাম প্রেমের অনূরাগে। আমার কোলে জন্মেছিলো ফুলেশ্বরী সূতী দু’কন্যাও মরছে আজ যেন অতীত স্মৃতি। আমার নামটি জানে কিন্তু বিজ্ঞ সভাসদ আমিতো সেই প্রিয় তোমার নরসুন্দা নদ। শতশত গ্রাম ও পাড়া দু’তীরেতেই আছে তীর দখলে মারছে আমায় কিছু অ’মানুষে। ভাটীর দিকে আজও আমি প্রানে বেঁচে আছি উজান গাঁয়ে মারছে ক্রমে কেমনে বলো বাঁচি? ফিরিয়ে দাও আমার বুকে অবারিত জল অহর্নিশি চাতক সম আঁখিযে ছলছল! অবহেলায় আর মেরোনা বাঁচাও দয়া করে জেনো তোমার জনম আমার তোমাদেরই তরে। বাঁচাও হে…