আমাদের ছোটো নদী ।। গৌতম অধিকারী

আমাদের

সেই কবে রবি ঠাকুর লিখেছিলেন, আর শৈশববেলায় মন্ত্রের মতো আউড়ে গেছি আমরা, নদীস্রোতের মতোই খলবল করে উঠতে গোটা ক্লাসরুম, আমাদের ছোটো নদী চলে বাঁকে বাঁকে, বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে। পার হয়ে যায় গরু, পাড় হয় গাড়ি, দুই ধার উঁচু তার ঢালু তার পাড়ি। আমি অবশ্য জন্মেছি এমন একটি ছোট্ট নদীর পাড়ে, ততোধিক ছোট্ট গ্রামে। কিন্তু নদীর সঙ্গে সখ্য গড়ে-ওঠার মে স্বাধীনতা দরকার, তা তো ছিল না শৈশবের কালে। সেই স্বাধীনতা কিঞ্চিৎ মিলল কিশোরবেলায়। এক নদীকে পেলাম, নাম তার ছোটো ভৈরব। মুর্শিদাবাদ জেলার হরিহরপাড়া আর ডোমকল ব্লকের বিভাজন-রেখা ছোটো…

তিনি ছিলেন নদীর সন্তান 

সন্তান 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আজ তাঁর জন্মদিন। আজ আরও একবার অনুভব করলাম প্রবল ভাবে যে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন আক্ষরিক অর্থেই নদীর সন্তান। তাই লেখার তাগিদ অনুভব করলাম।যদিও এটা খন্ডাংশ বলাই শ্রেয়। নদীর সন্তান না হলে কেউ এভাবে নদীকে তাঁর চিন্তা- চেতনা-ভাবনা- লেখায় জড়িয়ে নিতে পারেন?!  অথচ কি আশ্চর্য! তাঁর জীবনের প্রথম ভাগে নদীর সাথে তার সংযোগ আমরা সেই অর্থে পাইনা। নদী প্রবাহিত হয় সর্পিল গতিতে, আঁকাবাঁকা পথে। আমাদের জীবনের পথও কি তেমন নয়? বিচিত্র সব ইতিহাস যেন লুকিয়ে আছে নদীর সব বাঁকে বাঁকে। একটু যদি দৃষ্টি প্রসারিত করি তাহলে দেখবো যে দুই…

দেশ পত্রিকার ‘মাতস্তব জলমহিমা’, বিপন্ন গঙ্গার দলিলচিত্র

দেশ পত্রিকার 'মাতস্তব জলমহিমা', বিপন্ন গঙ্গার দলিলচিত্র

দেশ পত্রিকার (এ বি পি প্রকাশনা) দোসরা এপ্রিল সংখ্যা বর্তমানের একটি অতি জরুরী বিষয়কে সামনে তুলে এনেছে।এর জন্য প্রথমেই দেশ পত্রিকার সম্পাদক সুমন সেনগুপ্তকে নদীমাতৃক সবুজ অভিনন্দন জানাই। গঙ্গা নদীকে কেন্দ্র করে যেন নদীর বিষয় টাই উঠে এসেছে।গঙ্গা তো শুধু নদী নয়।ভারতীয়দের জীবন ও সংস্কৃতি। ভারতবর্ষের অর্থনীতি। দেশের অগ্রগতির দ্যোতক। কিন্ত সেই নদীর বর্তমান হাল বেহাল। বিবিধ উপায়ে গঙ্গাকে মেরে ফেলা হচ্ছে। সেই জীবনরেখাকে বাঁচাতে নানান সময়ে বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, কিন্ত গঙ্গার হাল ফিরেছি কি? এখন তো আবার গঙ্গাকে রক্ষার নাগরিক দের দাবীর কথা শুনতেও পাচ্ছেনা…

নদী সুরক্ষার দাবিতে কলকাতার রাজপথে হাজারো মানুষ 

নদী সুরক্ষার দাবিতে কলকাতার রাজপথে হাজারো মানুষ 

কুড়ি ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক দিন। নদী ও পরিবেশ আন্দোলনের ইতিহাসে এক অধ্যায় হিসাবে চিহ্নিত হয়ে থাকলো।যেদিন বাংলার বিভিন্ন প্রান্তের নদী বাঁচানোর কথা উঠে এল রাস্তায়। স্লোগান উঠল জাল যার জল তার।বাতাস ধ্বনিত হলো নদী বাঁচলে বাঁচবে রাজ্য/ বাঁচবে দেশ। কলকাতার রাজপথে মহাজাতি সদন থেকে সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার পর্যন্ত নেমে এল হাজার মানুষ।মাছ ধরার খ্যাপলা জাল, মাছ রাখার ডেকচি নিয়ে পথ হাঁটলো মৎস্যজীবীরা, মহিলা, কৃষিজীবী,নদী ও পরিবেশ কর্মী,নদী ও পরিবেশবান্ধব সংগঠন একটা দৃষ্টান্ত তৈরি করলো। আয়োজক ছিল সবুজ মঞ্চ রাজ্য বাঁচাও কমিটি।নদীর জন্য পদযাত্রার আগে মহাজাতি সদনে আয়োজিত বাংলার…

নদী আমাদের সম্পদ, তাকে রক্ষার দায় কার?

উৎসবে নদী দূষণের পরিমাণ বেড়ে যায়, দূষণ মোকাবিলায় করনীয় কি?

নদীমাতৃক বা নদীবিধৌত  ভারতবর্ষের সম্পদ নদী।নদীকে কেন্দ্র করেই গড়ে ওঠা জীবন-যাপন- জীবিকা- সংস্কৃতি।অথচ ভারতবর্ষে নদী বাঁচাতে অনশন করতে হচ্ছে।কিছুদিন আগে একজন অনশনকারী মৃত্যুবরণ করলেন।পাঠক বুঝতেই পারছেন জি.ডি.আগরওয়ালের কথা বলছি।এর থেকে লজ্জার কিছু আছে?আর পশ্চিমবঙ্গে কেমন আছে নদী?বর্তমান পরিস্থিতি যা তাতে নদী কি আর থাকবে আমাদের রাজ্যে? পার্শ্ববর্তী দেশের দিকে তাকাই।আমাদের প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ।কি অবস্থা সেখানে?গত আগস্ট মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণের পর অতি সম্প্রতি বাংলাদেশের শান্ত সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটাতে অ্যাকশন এইড আয়োজিত চতুর্থ আন্তর্জাতিক জল সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে সেখানকার নদীভিত্তিক পরিস্থিতি খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হলো।নদীমাতৃক বলতে যা…

রাজ্য নদী বাঁচাও কমিটি গঠিত হল পশ্চিমবঙ্গে 

রাজ্য নদী বাঁচাও কমিটি গঠিত হল পশ্চিমবঙ্গে 

নদীকে রক্ষা করবার চেতনা সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে কাজ করছে কিছু নিবেদিতপ্রাণ নদীকর্মী। এবার তাঁরা মিলে সবুজ মঞ্চের উদ্যোগে কলকাতায় গঠন করলেন “রাজ্য নদী বাঁচাও কমিটি”। গঙ্গা, আত্রেয়ী, মাথাভাঙা, ইছামতী, চূর্ণী, মহানন্দা, তিস্তা, তোর্সা, কালজানি, সরস্বতী ইত্যাদি নদীর ভয়াবহ পরিস্থিতি তুলে ধরতে চন্দননগরে কমিটি গঠিত হয় গেল শনিবারে। পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত, পরিবেশ বিশেষজ্ঞ বিশ্বজিত মুখার্জি, সবুজ মঞ্চের সম্পাদক নব দত্ত, পরিবেশ চিন্তক জয়ন্ত বসু, তাপস ঘটক, বিবর্তন ভট্টাচার্যসহ বিভিন্ন নদী ও পরিবেশকর্মী দের নিয়ে এ কমিটি গঠিত হয়। সেদিনের সভায় সিদ্ধান্ত হয় রাজ্য সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রীর কাছে নদীর বেহাল অবস্থা…

নদীয়ার গোরাগাঙনি : খাল নয়, নদী

গোরাগাঙনি

গোরাগাঙনি একটি নদীর নাম। তার উৎসমুখ লুঠ হয়ে গেছে। চূর্ণীর যে স্থান থেকে তার সূচনা, সেখানে এখন আবাদী ফসলের মাঠ। কিন্তু কথায় বলে না, ‘নদী শুকিয়ে গেলেও খাত বেঁচে থাকে’। ফলে নদীয়া জেলার হাঁসখালি ব্লকের বেড় হাঁসখালি ও পাড়বাটিকামারী দুটো গ্রামের ভৌগোলিক সীমানাবিভাজন রেখার মতো এখানে এখনও বেঁচে আছে নদীখাত। দীর্ঘ চোদ্দো কিলোমিটার পথ- কোথাও অতিপ্রশস্ত নদীর মতো জলধারা, আবার কোথাও সেই ধারা ক্ষীণ বটে। মাঝে মাঝে ভেড়ি বেঁধে চলছে মাছের চাষ। আবার কোথাও বা নদীপাড়ের বড়ো বড়ো বাড়ি থাবা বসিয়েছে নদীর জলকর অংশে। এই সব আগ্রাসনেই হারিয়ে গেছে গোরাগাঙনির…

আত্রেয়ী নদীপাড়ে নদীকথা

নিজস্ব প্রতিবেদক (বালুরঘাট, ২৯ অক্টোবর), ভারত>> দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার’দিশারী সংকল্প’-এর আয়োজনে আত্রেয়ী নদীপাড়ে এক বিকল্প সাংস্কৃতিক আড্ডা অনুষ্ঠিত হয় গত ২৬ অক্টোবর। শহরের ঔপন্যাসিক মৃণাল চক্রবর্তী, গল্পকার শুভ্রদীপ চৌধুরী,বরুন তালুকদার,কবি অতনু গাঙ্গুলি,শুভাশীষ গোস্বামী,পত্রিকা সম্পাদক কৌশিক রঞ্জন খাঁ,শিক্ষিকা অনন্যা সরকার, বিশ্বদীপ নন্দী , পরিবেশ ও নদী আন্দোলনের কর্মী তুহিনশুভ্র মণ্ডল ছাড়াও অনেকে এই আড্ডায় উপস্থিত ছিলেন । এছাড়াও ছিলেন কলকাতার ‘গল্পদেশ’ পত্রিকার সম্পাদক গৌতম অধিকারী এবং কবি সঞ্জয় মৌলিক। এদিনের আড্ডায় মূল আলোচ‍্য বিষয় ছিল নদী রক্ষা, কবি ও সাহিত্যিকদের ভাবনা ও সৃজনে নদীর আবেগ ও বাস্তবতা প্রভৃতি। আড্ডায় অংশগ্রহণকারী প্রায়…

চূর্ণীকথা : একটি নদীপ্রবাহের উৎসের খোঁজে – গৌতম অধিকারী

রবীন্দ্রনাথের ‘কথা’ কাব‍্যের ‘দেবতার গ্রাস’ কবিতায় ‘গ্রামে গ্রামে সেই বার্তা’ রটে যাবার সূত্রে আমরা জেনেছিলাম, ‘মৈত্র মহাশয় যাবে সাগরসঙ্গমে/ তীর্থস্নান লাগি।’ মৈত্র মহাশয়ের এই ‘গ্রাম’ কিংবা সংবাদ রটে যাওয়া গ্রামগুলো যে চূর্ণী নদীতীরেরই সব সাধারণ পল্লি, সে বিষয়ে আমাদের কোনো সন্দেহ থাকে না। বিশেষ করে এই কবিতাটিতেই যখন তিনি সাগর-তীর্থে শুভযাত্রাকালীন বর্ণনা দিতে গিয়ে লেখেন, শুভক্ষণে দুর্গা স্মরি নৌকা দিল ছাড়ি/ দাঁড়িয়ে রহিল ঘাটে যত কূলনারী/ অশ্রুচোখে। হেমন্তের প্রভাত শিশিরে/ ছলছল করে গ্রাম চূর্ণীনদীতীরে। ‘দেবতার গ্রাস’ কবিতার সমাপনী কাহিনিটি বড়োই করুণ। সাগরতীর্থ থেকে ফেরার পথে বিধবা মোক্ষদার শিশুপুত্র রাখালকে বিসর্জন…