খরস্রোতা সময়, তবু সরস্বতী নদীর প্রাসঙ্গিকতা : সাতকর্ণী ঘোষ

কিংবদন্তীর নদীরা কবিরা নদীকে বলেছেন জীবন, আবার জীবনকে নদী। কবিরা নদীকে বলেছেন নারী, আবার নারীকে নদী। আসলে নদী মানে তো আমাদের সুপ্রাচীন ঐতিহ্য। আমাদের ভৌগোলিক ভুবনে আলাপ-আলাপনের এক আশ্রয়। নৌকোর সঙ্গে ‘পরকীয়া’। কবেকার সেই বনলতা সেনের মতো। তার জন্যে আমাদের হাজার বছর ধরে হাঁটা। নদী ছিল তখন ব্রহ্মার কাছে। সগর বংশের পুত্রদের বাঁচানোর জন্য ভগীরথের তপস্যায় নদী মর্ত্যে নমে এল। মধ্যে নদীর তীব্র বেগ মহাদেব তাঁর মস্তকের জটাজুট জালে ধারণ করলেন। ভগীরথের তপস্যায় মর্ত্যে নামার পথে ঘটল এক বিপত্তি। যাত্রাপথের মাঝে তপস্যারত জহ্নু মুনির আশ্রমের প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ভেসে গেল নদীর…

চাঁদপুরের নদী, প্রকৃতি ও ইলিশ ।। সৌম্য সালেক

ইলিশ

‘নদীমাতৃক একটি ভূগোল ঘুরতে ঘুরতে আমি ঘুরে এলাম উড়তে উড়তে আমি উড়ে এলাম না কোনো রহস্য ছিল না না কোন চমক ছিল না কেবল একঘেয়ে এক ক্লান্তি দেখতে দেখতে আমি হয়ে উঠি যুগলতা আমি দেখতে দেখতে খসিয়েছিলাম শরীরের তাবৎ ক্লান্তি ওম শান্তি, ওম শান্তি’ –কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা আমরা নদীমাতৃক ভূ-ভাগের অধিবাসী। নদীর প্রভাবে আমরা নানাভাবে প্রতীকায়িত হয়েছি। নদীর বাঁধাহীন ছুটে চলার সাথে মিল রয়েছে মানব জীবনের প্রবাহমানতার। নদীর ইতিহাসও মানুষের ইতিহাসের মতোই প্রাচীন এবং বৈচিত্রপূর্ণ। বাংলাদেশের পুরো ভূগোলজুড়ে জালের মতো ছড়িয়ে বিছিয়ে রয়েছে অনেক নদী। শাখা-প্রশাখাসহ প্রায় ৮০০ নদ-নদীর…

গল্প : পদ্মার সাথে বিনিদ্র বাসর

গল্প

উচ্চ মাধ্যমিক পেরিয়ে স্নাতকের করিডোরে পা রাখলো অমিত। স্কুল-কলেজের সেরা ছাত্র সে। এরইমধ্যে প্রাচ্যের একটি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার জুনিয়র অফিসার হিসেবে চাকরির দরখাস্ত করেছিল। কলমের জোরে নিয়োগপত্র ও দ্রুত চলে আসে। যৌথ পরিবারের সবাই খুশি। এতো ভাল চাকুরী সহজে মিলে না। অমিত নিয়োগপ্রাপ্ত হয় ধান নদী খাল এই তিনে বরিশাল জেলায়। ২০০৩ সালে তখন বরিশাল জেলা ছিলো। ছামান গোছগাছ করে নিয়োগপত্র সংঙ্গে করে নরসুন্দাপাড়ের অমিত পাড়ি দিলো ধানসিঁড়ির উদ্দেশ্যে। ঢাকার সদরঘাট থেকে বুড়িগঙ্গা হয়ে পদ্মার উপর দিয়ে সারারাত লঞ্চে বরিশাল। নভেম্বরের মাঝামাঝি শীতল পদ্মার বুকে পারাবত-১ নামক লঞ্চটির ছুটে চলা…

নদী ও নারী: এ যে নিজের সাথে নিজের কথোপকথন 

হুমায়ুন কবীর এর ‘নদী ও নারী’ উপন্যাসের কথা মনে আছে? যা নদীর চরের মানুষের জীবনালেখ্য।কিংবা কবি প্রতীপ চন্দ্র বসুর ভালোবাসা নদী? যেখানে তিনি বলছেন নদীকে দেখিনি।জলের কিনারে গিয়ে দেখেছি তোমার মুখ।তোমাকে পাবার জন্য এভাবেই বারবার নদীকে দেখেছি। মহাকবি কালিদাস আবার নদীকে রমণীসদৃশ ব্যাখ্যা করেছেন।এসব থেকে একটা বিষয় বোঝা যায় যে নদী ও নারীর একটা মিল আছে।আত্মীয়তা আছে।আপনতা আছে।প্রকৃতিগত ভাবেই তারা সম্পৃক্ত ।এই ভাবনাটি হঠাৎ করেই মাথায় এলো । নদী যে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় প্রবাহিত হয়।নারীও তো তাই।এক সংসার থেকে অন্য সংসারে তার চলন।এবং সে চলন ক্রমাগত।এসব কথা মনে…

দর্শনে নদীর নিত্যতা

Afzal H. Azam

যে ছেলে নদীর পাড়ে বসে কবিতা লিখে সে ছেলে কখনও গাঁজা খাবে না। যে মানুষ নদীর তীরে বাস করে তারা কখনও অলস হয় না। প্রকৃতির বৈরিতার সাথে যুদ্ধ করে সরল জীবনযাপন করবে।হাজার হাজার বছর ধরে আবহমান বাংলার জীবনযাত্রা সংস্কৃতি, সাহিত্য, সমাজ, শিল্প সবকিছু গড়ে উঠেছে নদী কেন্দ্রিক। আজ নদ- নদীগুলোর যৌবন হারানো মানে বাংলা মায়ের বন্ধ্যাত্ব নেমে আসা। ফুলে, ফলে, ফসলে, সোনার বাংলা আজ নেই। রাসায়নিক নির্ভর কৃষি। হৃদ্যতার ভাটা পড়েছে মানব সমাজে। নদীর কলকলানির মতো সহায়ক সমাজ ব্যবস্হা নেই। একটি ঊর্মি আরেকটি ঊর্মিকে নিয়ে সহাবস্হানের খেলা আর দূর্বার ছুটে…

একটি নদী ও নারীর আত্মাহুতি :  আফজল হোসেন আজম

।। রিভার বাংলা ডট কম ।। আমার স্বচক্ষে দেখা ও বয়োজ্যেষ্ঠদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যমতে প্রাচীনকালে নরসুন্দা নদ থেকে সৃষ্ঠ ফুলেশ্বরী একটি খরস্রোতা বৃহৎ নদী ছিল। কিশোরগঞ্জ সদরের নীলগঞ্জ হতে এটি নরসুন্দার শাখা নদী হিসেবে তাড়াইলের তালজাংগা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম হয়ে রাউতি ইউনিয়নে আসে।রাউতির কুরপাড় হয়ে চেংগুরিয়া, কৌলি, হরিগাতী, কারংকা,বানাইল,দাউদপুর, নওগাঁ হয়ে কেন্দুয়া উপজেলার গগডার পাশ দিয়ে সেকান্দরনগর গ্রাম বেধ করে বোরগাঁও দিয়ে তারাইলের সূতী নদীর সাথে মিলিত হয়।যা এখন পথে পথে বাকরুদ্ধ মৃতপ্রায়। বাংলা সাহিত্যের প্রথম মহিলাকবি ও বাংলা মঙ্গল কাব্যের প্রথম সংকলক( আত্মীয়সূত্রে প্রাপ্ত কবি নারায়ন দেবের) চন্দ্রাবতীর…

সাহিত্যের প্রাণপ্রবাহে নদী : মিল্টন বিশ্বাস

‘মানবজীবন সে তো/ গঙ্গায় ভাসন্ত বাছাড়ির নাও।/ ফুটো থাকলেই টানতে থাকে তলানিতে/ আবার—/ মানবজীবন সে তো/ বর্ষার জোয়ার ভাটা/ জলেঙ্গার জল।/ দু দণ্ড জোয়ার তো চার দণ্ড ভাটা/ চার দণ্ড সুখ তো আট দণ্ড দুঃখ।/ তবে অবাক হবার কিছু নেই।’ মানবজীবন ও নদীর সাদৃশ্য এভাবে উত্থান-পতন, ভাঙা-গড়ার রূপকে চিরকাল চিত্রিত হয়েছে। আর এভাবেই বিশ্বের সব ভাষায় লিখিত সাহিত্যের রূপকল্পে নদীর বহুমাত্রিক চিত্র আত্মপ্রকাশ করেছে। আদি মহাকাব্য মহাভারত-রামায়ণ কিংবা হোমারের ইলিয়াড-ওডিসি’র কাহিনি ব্যাপ্ত হয়েছে স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল জুড়ে। আর মর্ত্যের নদী সেখানে বিশাল অংশ দখল করে আছে। ধ্রুপদী সাহিত্যে তা ভারতীয় কালিদাস কিংবা…