মরা নদীর গল্প ।। অনিন্দ্য আাসিফ

আাসিফ

সাপে তার ভয় ছিল না কখনও। এখনও নাই। লেজ ধরে মাথার উপর চড়কির মতো ঘুরিয়ে প্রথমে হঠাৎ শূন্যে ছুঁড়ে মারা, তারপর অদৃশ্য করে দেওয়া ছিল তার বাম হাতের খেলা। সামুদ্রিক জেলেদের মতো। জালে-পড়া বিষাক্ত সাপ খেলাচ্ছলে ছুঁড়ে ফেলে তারা। কখনও কখনও জানেই না, কী ভয়ানক খেলা অনায়াসে খেলে ফেলল। কিন্তু এটা সাপ না। শুকনো কচুরিপানায় যে শব্দ, সেটা ইঁদুর হতে পারে। উৎকট একটা গন্ধে এবার মনে হয়, এটা আসলে একটা চিকা। বয়স তার দৃষ্টি আর শ্রবণশক্তির কিছুটা হরণ করেছে, কিন্তু অনুপাতে কমই। তার সামনে – অদূরে কাঁচা কচুরিপানা আর নদীর…

আলী আকবরের নস্টালজিয়া : সৈয়দ কামরুল হাসান

আলী

      নিজের দেশ, জন্মভূমি বিশেষত: ফেলে-আসা সময় নিয়ে আলী আকবরের কোন বাড়তি আবেগ নাই। অন্ত:ত দীর্ঘকালের প্রবাস জীবনে নিজের সাথে সে যে একটা রফা করতে পেরেছে অর্থ্যাৎ আর সব প্রবাসীর মত রুটিন মাফিক স্মৃতিচারণা আর দেশপ্রেমের মড়া কান্নায় যে সে শামিল হয়নি এ-নিয়ে প্রচ্ছন্ন একটা গর্বও আছে তার। কিন্তু এই বার এই মফস্বল শহরটিতে তার জন্মভিটায় এসে সে যেন কিছুটা খেই হারিয়ে ফেলে। আলী আকবর নিজেই নিজের কাছে একটু যেন লজ্জিত ও বিব্রতও বোধ করে অতীত স্মৃতিচারণায় তার কৌতুহল ও আগ্রহের বাড়াবাড়ি দেখে। অবশ্যি একদিক থেকে দেখলে এই…

গল্প : পদ্মার সাথে বিনিদ্র বাসর

গল্প

উচ্চ মাধ্যমিক পেরিয়ে স্নাতকের করিডোরে পা রাখলো অমিত। স্কুল-কলেজের সেরা ছাত্র সে। এরইমধ্যে প্রাচ্যের একটি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার জুনিয়র অফিসার হিসেবে চাকরির দরখাস্ত করেছিল। কলমের জোরে নিয়োগপত্র ও দ্রুত চলে আসে। যৌথ পরিবারের সবাই খুশি। এতো ভাল চাকুরী সহজে মিলে না। অমিত নিয়োগপ্রাপ্ত হয় ধান নদী খাল এই তিনে বরিশাল জেলায়। ২০০৩ সালে তখন বরিশাল জেলা ছিলো। ছামান গোছগাছ করে নিয়োগপত্র সংঙ্গে করে নরসুন্দাপাড়ের অমিত পাড়ি দিলো ধানসিঁড়ির উদ্দেশ্যে। ঢাকার সদরঘাট থেকে বুড়িগঙ্গা হয়ে পদ্মার উপর দিয়ে সারারাত লঞ্চে বরিশাল। নভেম্বরের মাঝামাঝি শীতল পদ্মার বুকে পারাবত-১ নামক লঞ্চটির ছুটে চলা…

তরুণ কবি সৌমেন মন্ডল এর কবিতা “এক যে ছিল নদী”

এক যে ছিল নদী ছলাৎ ছলাৎ ঢেউ তুলত রোজ পানসি নৌকা ভাসিয়ে দূরের যাত্রী হতা‌ম জলে কান পাতলেই শোনা যেত মাছেদের কথোপকথন কত নিঃসঙ্গ বিকেলে মন খারাপের পর্দা খসে হু হু করে ঢুকেছে বসন্ত বাতাস অতঃপর উন্নয়নের ধ্বজাধারী ধর্ষকদের গলায় শোনা যায়—মাইকটেস্টিং, হ‍্যালো…হ‍্যালো চিৎকার, শোরগোল চলে ক্রুশকাঠে প্রথম পেরেক সাঁটা এখন ঘ‍্যোৎ ঘ‍্যোৎ শব্দে স্তনবৃন্তে যান্ত্রিক ক্লিপ লাগিয়ে শুষে নিচ্ছে বুকের সব রক্ত গর্ভবতী নদীর সমস্ত শরীর জুড়ে চলছে সারি সারি কংক্রিটের থাম গাঁথা অতীতের ছাল ছাড়িয়ে নদীর পাড়ে দাঁড়ালেই দেখি— চাপ চাপ রক্তে ভিজে গেছে চেনা উঠোন। ধূলো ঝেড়ে…

কবিতা : শাখা বরাকের আর্তনাদ- মো. আজাদ বারী শিপু

কুশিয়ারায় জন্ম নিয়ে ছিলাম আমি সুখে, ভরা যৌবন জোয়ার ছিল আমার দেহে। বুকে ছিল হাজার প্রজাতির মাছের আনাগোনা, মাছ ধরিয়া উদরপূর্তি করতো মানুষজনা। জল ছিল মোর কানায় কানায় ডেউ ছিল মোর বুকে, মোর জলে শ্বস্য ফলায়ে পারের মানুষ থাকতো মহা সুখে। উজান থেকে ভাটির দিকে অবাধ ছিল যাওয়া আসা,  স্বাধীন যাত্রায় বাধ সাজিলো কিছু মানুষ নামের সর্বনাশা। বুকে আমার বাঁধ বাঁধিল করলো দালান ঘর, যৌবন জুয়ার থামিয়ে দিল মানব নামের লোভী স্বার্থপর। বাঁচাও আমায় ওহে মানব বাঁচতে বড় স্বাদ, ভেঙ্গে ফেলো দালানকোঠা তুলে ফেলো বাঁধ। তবেই হারানো যৌবন আসবে আবার…

কবি মীরন রশীদ এর কবিতা “আমি নরসুন্দা বলছি”

আমি নরসুন্দা বলছি – মীরন রশীদ ব্রক্ষ্রপূত্রে জন্মেছিলাম শত জনম আগে ধনুর সাথে মিশেছিলাম প্রেমের অনূরাগে। আমার কোলে জন্মেছিলো ফুলেশ্বরী সূতী দু’কন্যাও মরছে আজ যেন অতীত স্মৃতি। আমার নামটি জানে কিন্তু বিজ্ঞ সভাসদ আমিতো সেই প্রিয় তোমার নরসুন্দা নদ। শতশত গ্রাম ও পাড়া দু’তীরেতেই আছে তীর দখলে মারছে আমায় কিছু অ’মানুষে। ভাটীর দিকে আজও আমি প্রানে বেঁচে আছি উজান গাঁয়ে মারছে ক্রমে কেমনে বলো বাঁচি? ফিরিয়ে দাও আমার বুকে অবারিত জল অহর্নিশি চাতক সম আঁখিযে ছলছল! অবহেলায় আর মেরোনা বাঁচাও দয়া করে জেনো তোমার জনম আমার তোমাদেরই তরে। বাঁচাও হে…

রাজেশ ধর এর গল্প- “চুপিকথা”

রাজেশ ধর ।। এখানে একটা নদী আছে, নাম চুপি।  চুপিতে এখনো জোয়ারভাটা খেলে। জোয়ারভাটা তো নদীতে খেলবেই। কিন্তু মল্লিকদাদু…আমাকে দেখলেই ডাকে। তারপর বলে, “ কীরে মধুর নাতি, দাদু কেমন আছে? নদীতে যেতে পারে এখনো মাছটাছ ধরতে?  ছোটবেলায় নদীতে, বিলে  ডোঙা নিয়ে একসঙ্গে কত মাছ ধরেছি…” মল্লিকদাদু নদীর দিকে তাকিয়ে থাকে, আমিও তাকাই চুপির দিকে। হয়তো সকালের মেঘলা আকাশের রঙে চুপিকে তখন সবজে দেখাচ্ছে, ভাটির টানে  কচুরিপানাগুলো ফিরে যাচ্ছে তাদের পুরোনো জায়গায় যেখান থেকে আবার জোয়ারের টানে তারা ফিরে আসবে। নয়তো বিকেলের লাল আলো নিভে যাওয়া ছাই ছাই আকাশ আর একটু হলেই  নেমে আসবে চুপির বুকে। মল্লিকদাদু সকাল-বিকেল নদীর ঘাটে আসে। কলকাতার কোন বড় কলেজে নাকি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূগোল পড়াত মল্লিকদাদু। আমাকে প্রায়ই…