এই মৃত নদী আমার তিস্তা না ।। শুভময় পাল

মৃত নদী

‘ছলাৎ ছল ছলাৎ ছল ছলাৎ ছল ঘাটের কাছে গল্প করে নদীর জল’ না, আমার তিস্তা এমন নদী না; গল্প সে করে, তবে সে গল্প নামনাজানা পাহাড়ি ঝরনার, সে গল্প প্রায় ভুলে যাওয়া আদিম জনজাতির। সে গল্প দুরন্ত, চঞ্চল, উচ্ছল। আমার তিস্তা অভিমানী, বেপরোয়া। শীতের বেলায় প্রায় মরা সোঁতা, বর্ষাকালে উপচে পড়া তাথৈথৈ। আমার বাড়ি তিস্তার পারে ছিল বললে খুব ভুল বলা হবে না। জলপাইগুড়ির হাকিমপাড়া, সরু একটেরে গলিতে প্রায় শেষে এক ভাড়া বাড়ি। বাঁশের ছেঁচার বেড়া, লঙ্কা জবার গাছ, এগোলে তপনদের খাটাল আর বিষ্ণুদা’দের বাড়ি। নীল অপরাজিতা ফুটে থরে থরে।…

আমার প্রিয় নদী : রাজর্ষি চৌধুরী

রাজর্ষি

জীবন-নদী চলছে আঁকেবাঁকে, প্রতিটি বাঁকেই যেন কোনো গল্প লুকিয়ে থাকে। নদী-গল্প শোনাবো তোমায় আজ জীবন স্রোতের সর্পিলাকার পথে- হ্যাঁ ঠিকই আজকের বিষয় আমার প্রিয় নদী। আসলে এই প্ৰিয় শব্দটির মধ্যে অদ্ভুত একটা আন্তরিকতা লুকিয়ে থাকে তাই বিষয় যখন প্রিয় নদী সেক্ষেত্রে যার স্রোতের আঁচলে-শাসনের দৃঢ়তায় ছোট থেকে বড় হয়েছি সেই নদীর থেকে প্রিয় আর কেই বা হতে পারে? ঠিক ধরেছেন আমি আমার শহর গঙ্গারামপুর এর ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া নদী পূর্ণভবার কথাই বলছি। আমার জন্ম এই জেলাতেই, নদীর প্রতিটা বাঁক, গভীরতা, প্রতিটা রূপ আমার জানা।বাড়ি থেকে নদীর দূরত্ব খুব জোর…

আমার নদী…তুই ডাকলেই সাড়া দেয় যারা ।। সুস্মিতা চক্রবর্তী

আমার নদী

প্রথম নদী চিনিয়েছিল আমায় সহজপাঠ। সে নদী ছিল আমারই দোসর যেন। কুল, করমচা, বাঁশঝাড়ে দৌড়ে বেড়ানো শিশুকালের মতোই সে চেনা চৌহদ্দির ছোট নদী। তাকে চেনে গাঁয়ের হাট, পাড়ার ঘাট। আমারই মত, তার দুনিয়াখানাও বুঝি দিব্যি এঁটে যায় একখানা পুতুলের বাক্সের মাপে। তার হাঁটুজলের পৃথিবীটিতে সে এঁকে দিতে দিতে চলে আঁকিবুঁকি খুশি। তারপর সহজপাঠ ফুরিয়ে আসে একদিন। আমার  মফস্বলের বড় হতে থাকা দিনগুলোয় নদী ছিল না কোন। কালেভদ্রে যাওয়া হত খানিক দূরের দক্ষিণেশ্বরে। সেখানে যে জলধারা আমার কাছে সে ছিল নিতান্তই ভূগোলের দাপুটে নদী। তার বুকে ভেসে যায় পুজোর মানত, পুণ্য…

স্মৃতির লোহালিয়ায় আজও ভাসে মন ।। মো.ইউসুফ আলী

স্মৃতির

নদী বিধৌত জেলা পটুয়াখালীতে আমার জন্ম হলেও আমাদের বাড়ির আশেপাশে কোনো নদী নেই। তবুও মনের দিক থেকে নদী ছিলো আমার অসম্ভব পছন্দের। শৈশব-কৈশোরে নদীকে ঘিরে অনেক স্বপ্নও ছিলো আমার। কিন্তু শৈশব-কৈশোরের সব স্বপ্নকী সবার পুরণ হয় ? সে যা-ই হোক অন্যদের কথা না-ইবা টানলাম। আমার সে সব স্বপ্ন আজও অধরাই পরে রইলো। তবে খাল-বিল, নদী কিংবা জল ও মাছের প্রতি অসম্ভব রকমের টান আজও আমার রয়েছে। কিন্তু কি আর করার শহরে বসবাস। আচ্ছা সেই শৈশবেই আবার ফিরে যাওয়া যাক। ঘুরে আসি কতক্ষণ সেই ছেলেবেলার কথকতা নিয়ে। যা বলছিলাম যে আমাদের…

নদী একটাই ।। রাজেশ ধর

রাজেশ

‘নদী’…কলকল, কলকল… ঢেউতোলা এই শব্দটা প্রথম কবে শুনেছিলাম ? কবে প্রথম ‘নদী’র ডাকে  বুকের রক্ত ছলকে উঠেছিল? প্রথমবার কবে জেনেছিলাম নদী আসলে জলের ধারা…সে জল শীতল, মিষ্টি আবার কখনও নোনা পানি!  সেদিন কি জেগেছিলাম? নাকি ছিলাম ঘুমিয়ে…স্বপ্নের মধ্যে? দুই কুল…দুপারকে বেঁধে রাখতে রাখতে এক নিমেষেই নদী… সব গিলে খেয়ে নিতে পারে!  নির্বিচারে মুছে যেতে পারে– ডাঙা, ফসল, গাছপালা,… সাতমহলা কীর্তির অহংকার। নদী নাকি সে নিয়তি? তারই বা জ্ঞান হল কবে? জানি না…বলতে পারব না। দুই.  জন্ম থেকে প্রায় বছর তিরিশ পর্যন্ত এক বিশাল ঘিঞ্জি শহরে বাস আমার। সে শহরের পশ্চিম…

কালনির স্নিগ্ধতায় আমার ছেলেবেলা ।। আলম মাহবুব

কালনির

কালনি! এই কালনি নামের সাথে মিশে আছে হাজার বছরের ইতিকথা। আমি বলছিলাম কিশোরগঞ্জ জেলার হাওর বেষ্টিত অষ্টগ্রামের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া মেঘনার শাখা কালনি নদীর কথা। আবহমান গ্রামবাংলার নদীর আত্মপ্রকাশে চিরচেনা এই ভাটির জনপদের কালনি নদীর তীরেই গড়ে উঠেছে বহু জনপদ, আছে অনেক রত্নগল্প। যা আজ কিছুটা তুলে ধরতে চেষ্টা করছি। কিশোরগঞ্জের সীমান্ত ঘেঁষে থাকা এই নদীটি কোন একসময় খরস্রোতা নব যৌবনায় ভরপুর ছিলো। বিস্তীর্ণ হাওরের বুকের প্রশস্ত সবুজে কৃষকের ক্লান্তি, হতাশার একমাত্র অবলম্বন এই কালনি। যার উৎপত্তি কিশোরগঞ্জ জেলা ও বি- বাড়িয়া জেলার সীমান্ত নির্ধারণকারী মেঘনার শেষ ভাগ হতে…

নদীর নাম মুজনাই ।। শৌভিক রায়

মুজনাই

নদী মানেই প্রবাহ। আর প্রবাহ মানে জীবন। তাই নদী বাদে জীবনকথা সম্পূর্ণ হতে পারে না। আবার, জীবনসঙ্গীত গায় কিন্তু তথাকথিত ব্রাত্যজনেরা। আবহমানকাল ধরে তারাই সচল রেখেছে জীবনের জয়যাত্রা। ঠিক একইভাবে, নামীদামী বৃহৎ নদ-নদীর পাশাপাশি, ছোট্ট ছোট্ট নদীরা ধরে রেখেছে সভ্যতার মূল চালিকাশক্তিকে। পশ্চিমবঙ্গের উত্তরদিকে,  জানা-অজানা অজস্র নদীর রুদ্ধকথা সেই শক্তিকেই বিবৃত করছে। ভুটান পাহাড়ের দক্ষিণ বনাঞ্চলে আট হাজার উচ্চতায় জন্ম নেওয়া ‘রঙ্গোরি’ নামের নদীটিও ঠিক এমনই। তবে উৎসমুখের নামে নয়, তার অধিক পরিচিতি ‘মুজনাই’ নামে এবং এই উৎস নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। কেননা উৎস থেকে যে প্রবাহ দেখা যায় তার খাত…

প্রিয় না হয়ে ওঠা একটি নদী ।। তাপস দাস

তাপস

রাস্তার নাম “করুণাময়ী ঘাট রোড”। ‘ঘাট’ কোন কালে ছিল?  সেই ঘাটের রাস্তায় কারা, কোথায়, কোথায় যাওয়া-আসা করতেন?  কী ছিল ঘাটের কড়ি?  সঙ্গে থাকতো কী?  জানা নেই। কে জানেন তাও জানা নেই। আমার ঐ পথ দিয়ে যাওয়া-আসা শুরু হয় ১৯৮৬-৮৭ সালে। তখনো করুণাময়ী ব্রীজ হয়নি। গাড়ী পথে কলকাতার সঙ্গে যোগাযোগ সিরিটি-ভাটিখানা-মহাবীরতলা হয়ে টালিগঞ্জ ব্রীজ পার পথে। সোদপুর বাজারে বাসের অপেক্ষায় দাঁড়ানো পথিককে কোথায় যাচ্ছো প্রশ্ন করলে উত্তর আসতো, “কলকাতা যাচ্ছি”। বেহালা মিউনিসিপালটি ‘এডেড এরিয়া’’রূপে কলকাতায় যুক্ত হলেও পুরনো অভ্যাস তখনো রয়ে গিয়েছে। আর হবে নাই বা কেন বড় বড় ইট ভাটার…

প্রিয় নদী ।। মনোনীতা চক্রবর্তী

প্রিয় নদী

জল উঁচু-নীচু হলে বড়ো মায়া পড়ে যায়। জল যখন খেয়ালে গান গায় এবং গাইতে-গাইতে যখন হঠাৎ তার ভয়েস-চোকড হয়ে যায়; যখন কান্নাগুলো পোশাক পরতে গিয়ে আসলে পোশাক খুলে ফেলে; দৃষ্টিলক্ষ্য যখন ভেঙে টুকরো-টুকরো হয়ে যায়, যখন লাজুক চাঁদের ধারালো চোখের ছায়া জলের ওপর পরে, যখন একটা উত্থিত দুপুর বিকেলের যৌথ-গান হয়ে ঝরে পড়ে আর চরাচর মুখর হয় সভ্যতা-গানে.. ঠিক তখন পরিকল্পনাহীন ছুটে যাই প্রিয় নদীটির কাছে। হ্যাঁ, খেয়ালে-আড়ালে; অভাবে-অভিমানে ধুমধাম প্রেমে ভিজলে শ্বাসের ওঠা-নামা যেমন করে হয়, ঠিক সেভাবেই আমি ছুটে যাই তার কাছে। প্রিয় নদীটির কাছে। ডক নদী; সে-নদীটির…

টাঙ্গন : আমার প্রিয় নদী ।। ড. অমর কুমার পাল

টাঙ্গন

টাঙ্গনের সঙ্গে আমার সম্পর্ক মায়ের সঙ্গে সন্তানের সম্পর্কের মতো। টাঙ্গন আমাকে শিখিয়েছে মানব জগতের সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত জীবজগৎকে ভালোবাসতে। টাঙ্গন আমার অন্তরের ক্ষুদ্রতাকে দুইহাতে সন্তর্পনে আলগোছে সরিয়েছে। মনের দৈন্যতা, সংকীর্ণতা, হীনমন্যতা ঝেড়ে ফেলে জীবনযুদ্ধে কীভাবে অনমনীয় মনোভাব নিয়ে মোহনার দিকে এগিয়ে যেতে হয় তার পাঠ আমি টাঙ্গনের কোলে বসে নিয়েছি। টাঙ্গন নামক অখ্যাত নদীটি তার সমস্ত সত্তা দিয়ে চেষ্টা করে যায় আজও রাইখোরের জোগান দিয়ে আমাদের রসনাকে আর মৎসজীবীদের আর্থিক দিককে তৃপ্ত করতে। দারিদ্র্যতা তার আলুথালু বেশ ও বারিহীন রুক্ষকেশ দেখে একনজরেই ঠাহর করা গেলেও তা নিয়ে তার নেই কোনও…

প্রিয় নদী ‘গঙ্গা’ ।। ডা. শর্মিষ্ঠা কর

প্রিয়নদী

অফুরান কথা আর প্রাণোচ্ছ্বলতা আমার স্বভাবসিদ্ধ বলে বাংলার মাষ্টারমশাই আমার নাম দিয়েছিলেন স্রোতস্বিনী। নদীর সম্পর্কে আমার প্রাথমিক আগ্রহ তৈরী হয়েছিলো বাবার দরাজ গলায় শোনা গান শুনে শুনে…. ও নদীরে একটি কথা-ই শুধাই শুধু তোমারে, আমায় ডুবাইলি রে আমায় ভাসাইলি রে, এ নদী এমন নদী, জল চাই একটু যদি দুহাত ভ’রে উষ্ণ বালুই দেয় আমাকে ! দুর্বোধ্যতার এক অদ্ভূত রহস্য ঘনীভূত হতো মনের মধ্যে নদীকে ঘিরে। শ্রদ্ধেয় সমরেশ মজুমদার লিখেছিলেন- “যে নদীর সঙ্গে শৈশব জড়িয়ে থাকে, যে নদীকে একসময় প্রায় বন্ধুর মতো মনে হয়, তার জন্যে যে ভালোবাসা তা আজন্ম থেকে…

নদীর নাম বলাকুট ।। মনির হোসেন

বলাকুট

সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক তাঁর ‘আমার পরিচয়’ কবিতায় লিখেছেন-‘তেরশত নদী শুধায় আমাকে কোথা থেকে তুমি এলে?’ নদীর কলকল ধ্বনির এমনই প্রশ্নে আমি বলবো, ‘আমি এসেছি বলাকুট নদীর তীর থেকে। আমার স্মৃতিময় বলাকুট। আমার শৈশব-কৈশোরের বলাকুট। কুশিয়ারা নদীর অববাহিকায় বহমান বলাকুট এর জলে আমার তৃষ্ণা মিটে। বলাকুট নদী নয়, বলাকুট আমার মা। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের ব্রহ্মপুত্রের তীরে আমার জন্ম। বাবার কর্মস্থলের সুবাদে ইটনা থানার জয়সিদ্ধিতে বসবাস। সুদীর্ঘসময়, আবাল্য, শৈশব-কৈশোর দুরন্তপনার সবগুলো অধ্যায় কেটেছে বলাকুটের তীরে শান্তির নীড়ে। নদীর উৎপত্তিস্থল সুনির্দিষ্ট না হলেও হবিগঞ্জ জেলার আজমেরীগঞ্জ এর নিকটে কুশিয়ারা বা কালনী…