বাঁওড়
…………..
ইছামতী পাশ দিলে রোদেজলে ঝিলমিল বাঁওড়ের বুক
শুনেছি নদীর না কি মৃত্যুদিন হয়
শোকসভা, ফুলমালা ধূপগন্ধে স্মৃতি
দু-মিনিট নীরবতা, মৃদু কাশি, ব্যস, ঠিক আছে!
মানুষ পাশ দিলে, মন অমরায়,
পবিত্র ঘণ্টাধ্বনি মৃদুতর সুর
নিয়ত বাজতে থাকে, স্মৃতির জীবন
দীর্ঘ হয়, দীর্ঘতর অবহেলা ঘরে, ধূলির বসন!
নদী তার ছেড়ে যাওয়া জলচলে রাখে আপনার কীর্তিকথা,
সুখ শোক হাসি, আনন্দ হতাশার চূর্ণকুন্তল…
স্মৃতি বড় অসহায়, অমরতা নিয়ে,
এ ডালে সে ডালে বসে, শাপগ্রস্ত ফিঙে!
………………………………………………………
মোহনিয়া
……………….
স্বপ্নে এক নদী আসে কেন? ভৈরবী ভোরে?
অহেতুক জলছুঁই খেলাধুলা শেষে
ও মোর বালকদিন এসো আঙ্গিনায়
দু-দন্ড গল্প করি, কাগজের নৌকো গড়ি,
হেলেদুলে যাক, ও পাড়া এ পাড়া ঘুরে
ভাটিয়ালি সই….
অবসানে ছেড়ে যায় মুঠোটান সুখ
চলে যাওয়া এতটাই মোহনিয়া বুঝি?
যতটা দূরে গেলে পূর্ণ যাওয়া হয়
সেখানেই রাত জাগে ভালবাসা পাখি
ও মোর বালকদিন, এসো আঙ্গিনায়
দু-দন্ড গল্প করি, নৌকো গড়ি,
পাল তুলে দাও….. ভৈরবী সুরে গাও বদর বদর…..
……………………………………………………
ফিরে আসে প্রেম
……………………
যত দুর দেখা যায় ঠিক তার পরে
যে লোকটা বসে থাকে, অবরে সবরে
তার কথা শুনে নিতে কান পাতো যদি,
হাঁটুজলে স্নান সারে, বৈশাখী নদী
বেহুলা-বাতাসে ভাসে বিষাদের সুর
ভাঁজ করে তুলে রাখা বালিকা নুপুর
তাল ঠোকে ছমছম, মেঘমল্লারে
যুগলমূর্তি আঁকে প্রবীণ সেতারে
সময় থমকে থাকে উদাসীন যেন
কতটা চিনলে পরে তুমি তাকে চেনো?
মিশে যায় ধুলো হয়ে মানিনীর মান
সরগমে পড়ে থাকে অগোছালো তান—
তবু প্রেম ফিরে আসে, ফিরে ফিরে আসে,
আলুথালু ওড়ে চুল দখিনা বাতাসে
…………………………………………………………..
উতলহাওয়া নদী
…………………………..
রোদপথে বৃক্ষছায়া ছিল
ঘরের দাওয়ায় ছিল শীতল মাদুর,
তবু বাজে আড়বাঁশি মেঘের পরতে,
আলুথালু চুলের বাঁধন…..
এখানে পাথরে নাচে তিস্তাবালিকা
রুমঝুম জলের নুপুর
ভেসে যায় ধ্যানের আড়াল
ভেসে যায় যাপন-জীবন
আজ বড় উন্মনা রাত
চাঁদ-জলে ভালবাসাবাসি
আড়ালে একলা ডেকে চলে
চুপিসারে, ঘরভাঙ্গা পাখি
কতটা নিলাজ হলে পরে
আদিগন্ত নষ্ট হওয়া যায়?
ও নদী, উতলহাওয়া নদী,
অনাবিল ভাসো, স্পর্ধায়!
…………………………………………….
রাত কথা-৭
…………………….
ডিঙি নৌকোর গলুই-এ বসেছো কখনো? রাতের বিদ্যাধরী নদী কেটে চলা নৌকোয়? তৃতীয়ার ঘোলাটে আলোয় ছায়া পড়ে জলে, তোমার ছায়া! একান্ত অনুগত, বিশ্বস্ত! লেপটে যায় জলে, টুকরো হয়, জ্যামিতি-বহির্ভূত ছাঁচে ভেঙে যায়, ভেসে যায় ছায়া, তোমার গতির বিপরীতে, তোমাকে অগ্রাহ্য করে…তুমি ভালো থাকো, ভালো থাকো নদী হয়ে, তৃতীয়ার চাঁদ হয়ে,
নদীর নিচে আর একটা নদী থাকে, মনের নিচে আর একটা মন…বয়ে যায়, অনন্তের দিকে… কোনো কোনো রাত নদী হয়, অন্তঃসলিলা…কোনো কোনো মন রাতচরা হয়, ঘুমহীন, ক্লান্তিহীন…বয়ে চলে, নদীর পাশে পাশে, ছুঁয়ে ছুঁয়ে,
চরায় গেলে বৈকল্য আসে, মনে হয় শুধু বসে থাকা, শুধু চেয়ে থাকাকেই বোধহয় জীবন বলে, তাই নদীচর আত্মহননের ডাক দেয়, চর নিজেও বোধহয় অপেক্ষায় থাকে, ডুবে যাওয়া ভবিতব্য জেনে অপেক্ষায় থাকে, চুপে, তৃতীয়ার চাঁদ তাকে নিয়ে চলে অন্তিমের দিকে…
পূর্ণ যতি!
……………………………………………………….
আরো পড়তে পারেন…..
……………………………………………………
পুনর্ভবা নদীর জলেই আছে ফ্লোরাইড সমস্যার সমাধান!
আফজল হোসেন আজম এর কবিতা “নদীকথা”
কবি মীরন রশীদ এর কবিতা “আমি নরসুন্দা বলছি”
কবি ও লেখক। কলকাতার কলোনি অঞ্চল নেতাজীনগরে আজন্ম বাস তাঁর। বিজ্ঞানে স্নাতক। লিখছেন আশির দশক থেকে।প্রধানত লিটল ম্যাগাজিনেই লেখেন। যুগ্মভাবে প্রকাশ করেছেন ছোট পত্রিকা ‘অয়শ্চক্র’। কবিতার সংবেদনশীলতা ও ভাষা নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে তাঁর ভাল লাগে। কবিতা লেখা ছাড়া নাটক দেখা ও বেড়াতে পছন্দ করেন তিনি।