ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) ও ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে সিলেটের রাতারগুলে ১৬-১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত তিন দিন ব্যাপী “টেকসই উন্নয়নে পরিবেশ রক্ষার গুরুত্ব” শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পরিবেশ ও নদী রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা পালনকারী সংগঠন ও মানুষের মধ্যে ভাতৃত্ববোধ বৃদ্ধি ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নে মাঠ পর্যায়ের সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
কর্মশালার প্রথমদিনে বিকাল তিনটায় সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের রাতারগুল গ্রাম সংলগ্ন মাঠে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনু্ষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে অনু্ষ্ঠানটি উদ্বোধন করেন ধরা’র উপদেষ্টা মন্ডলীর সভাপতি সুলতানা কামাল। এতে সভাপতিত্ব করেন মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন ধরা’র আহবায়ক কমিটির সদস্য আব্দুল করিম চৌধুরী কিম।
এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সুলতানা কামাল বলেন, এই ধরিত্রী রক্ষা করা সচেতন মানুষ হিসেবে আমাদের সকলের নৈতিক দায়িত্ব। পৃথিবীকে শুধু আমাদের জন্য নয় বরং পরবর্তী প্রজন্ম যেন সুস্থ এবং সুন্দরভাবে বেঁচে থাকতে পারে সে লক্ষ্যে পরিবেশ রক্ষায় আমাদের সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।
মোহাম্মদ জহিরুল হক বলেন, আমাদের এই তিনদিনের কর্মশালার মাধ্যমে আমরা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে আগত পরিবেশকর্মীদেরকে সাথে নিয়ে প্রয়োজনীয় কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে সামনের দিনগুলোতে দেশের পরিবেশ রক্ষায় যথোপযোক্ত পদক্ষেপ গ্রহণে সচেষ্ট হবো। জলবায়ু পরিবর্তন একটি সার্বজনীন সমস্যা তাই এর সমাধানও করতে হবে জরুরী ভিত্তিতে।
প্রধান বক্তা শরীফ জামিল তার বক্তব্যে বলেন, পরিবেশ রক্ষায় যতক্ষণ পর্যন্ত স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করা না যাবে ততক্ষণ পর্যন্ত পরিবেশ রক্ষার যে কোন প্রয়াসই অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। আমাদের এই তিন দিনের কর্মশালায় যারা অংশগ্রহণ করেছেন তারা প্রত্যেকেই নির্দিষ্ট কিছু পরিবেশ সংবেদনশীল এলাকায় স্থানীয়ভাবে সামাজিক নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। আমরা সবাই মিলে কৌশল নির্ধারণ করবো কিভাবে পরিবেশ রক্ষায় মানুষকে আরো বেশি সম্পৃক্ত করা যায়।
এছাড়াও উদ্ধোধনী আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, সিলেটর শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. নাজিয়া চৌধুরী, সিলেটের পরিবেশ সংগঠক জামিল আহমেদ ও মোস্তফা শাহজামান চৌধুরী বাহার, সিলেট বন বিভাগের সারি রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. সালাহ উদ্দিন, গোয়াইনঘাট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মো. মঞ্জুর আহমদ, গোয়াইনঘাট প্রেস ক্লাবের সভাপতি এম এ মতিন, সারি বাচাও আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল হাই আল হাদী, সিলেট বন বিভাগের প্রতিবেশ প্রকল্পের সাইট অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন, রাতারগুল বিশেষ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এলাকার সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মাহবুব আলম, সারি নদী বাঁচাও আন্দোলনের সদস্য আবু হানিফ ও রাতারগুল গ্রাম পরিচালনা কমিটির সভাপতি আরব আলীসহ অন্যান্য স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিনে প্লাস্টিক বর্জ্য জমা করার বিশেষ ব্যবস্থার উদ্বোধন, বিষয়ভিত্তিক আলোচনা, দলগত আলোচনা, মুক্ত আলোচনা, কুইজ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান (আদিবাসী গান ও নৃত্য, পরিবেশ বিষয়ক নাটক ও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন), হযরত শাহজালাল (র:) এর মাজার, ভাষা শহীদ মতিন উদ্দীন আহমদ জাদুঘর, খাদিমনগর চা বাগান ও রাতারগুল জলাবন সহ গুরুত্বপূর্ণ স্থান পরিদর্শন এবং দায়িত্বশীল টেকসই উন্নয়নে পরিবেশ রক্ষার গুরুত্ব বিষয়ে নানা কর্মসূচি পালিত হয়।
তিনদিন ব্যাপী কর্মশালার শেষদিনে সমাপনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ধরা’র আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব শরীফ জামিল।
এ পর্বের প্রধান অতিথি ধরা’র কেন্দ্রীয় সদস্য আনসার উদ্দিন খান পাঠান সমাপনী বক্তব্যে বলেন, আমরা দেখেছি ভালো কাজের পক্ষেই বেশিরভাগ মানুষ সুতরাং গণমানুষের এই মতামতকে আমাদের সম্মান জানাতে হবে। আমরা যদি আমাদের লক্ষ্যে অবিচল থেকে কাজ করি সেটাই হবে গণমানুষের প্রতি সম্মান জানানো। আমাদের প্রকৃতি এবং দেশকে রক্ষা করতে হবে। মানবজাতিকে রক্ষা করতে হবে। এসব কাজে প্রতিবন্ধকতা থাকবেই তাই এগুলো সাথে নিয়েই আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে। আপনারা হলেন এই প্রকৃতির পাহারাদার। আমি আশা করব আপনারা এই প্রকৃতি রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবেন।