কলকাতা (দক্ষিণ দিনাজপুর) থেকেঃ
নদী ও খাঁড়ির বহুমাত্রিক ব্যবহার ও ভূমিকার কথা আমরা সবাই জানি। বিভিন্ন জায়গার নদী ও খাঁড়ি দূষণের খবর যখন পাই বা প্রত্যক্ষ করি তখন বুঝতে পারি একটি অতি জরুরী বিষয়কে কতটা অবহেলা করছি আমরা। কিন্ত তার মধ্যেও কোন ভাবনা ও উদ্যোগ আমাদের আশা জাগায়।নতুন দিশা দেখায়। ইতিবাচক হতে বলে।
তেমনই একটা উদ্যোগ কাশিয়া খাঁড়ি সংস্কার। তেমনি একটা উদ্যোগ শ্রীমতি নদী সংস্কার। সমগ্র পৃথিবী জুড়েই নদী ও খাঁড়ি রক্ষার দাবী উঠেছে, উঠছে। সমগ্র পৃথিবীর নদী সুরক্ষা আন্দোলনের সম্পর্কে বলতে পারি উন্নত বিশ্বের দেশ ছাড়া উন্নয়নশীল বিশ্বের কোন দেশের সরকারী প্রশাসন প্রাকৃতিক সম্পদ সুরক্ষায় ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন এমনটা সচরাচর নজরে আসেনা। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা প্রশাসনের এই উদ্যোগ একটা দৃষ্টান্ত তো বটেই।
প্রথমেই আসি কাশিয়া খাঁড়ির কথায়। এই খাঁড়ি একসময় ভারতবর্ষের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার প্রধান দুই নদী আত্রেয়ী ও পুনর্ভবার সাথে সংযুক্ত ছিল। বালুরঘাট, তপন এবং গঙ্গারামপুর এই তিনটি সমষ্টির ছয়টি গ্রাম পঞ্চায়েত দিয়ে প্রবাহিত এই খাঁড়ি পরিবহনের অন্যতম মাধ্যম ছিল। কৃষি ও জলসেচে অপরিসীম গুরুত্ব ছিল এই খাঁড়ির। মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহের জন্যও এর ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। অর্থনীতির ক্ষেত্রেও এর প্রভাব ছিল প্রবল।
কিন্ত আজ সবই অতীত।খাঁড়ি টি মজে গিয়েছে। শুকিয়ে জল নেই।ফলে অবস্থা সহজেই অনুমেয়। তাই এর হৃত গৌরব ফিরিয়ে আনতে বদ্ধপরিকর দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা প্রশাসন। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষে ভূগোল, ইতিহাস ও পরিবেশ গবেষক দের সাহায্য চাওয়া হয়। ভূগোল ও পরিবেশ গবেষক প্রতিনিধি দল কাশিয়া খাঁড়ির বিস্তীর্ণ এলাকা পরিদর্শন করেন, জনসাধারণের সঙ্গে কথা বলেন ও সমীক্ষা করেন। তারপর জেলা প্রশাসনের সামনে তা উপস্থাপনও করা হয়। তারপরই কাশিয়া খাঁড়িকে পুনর্জীবন দেওয়ার উদ্যোগ শুরু হয়।
সরকারী প্রকল্পের অধীনে এই কাজে অংশ নেয় অসংখ্য মানুষ। অতিরিক্ত জেলাশাসক কৃত্তিবাস নায়েক জানান “কাশিয়া খাঁড়িকে পুনর্জীবন দিয়ে আমরা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে বদ্ধপরিকর।”
আরেকটি নদীকে কেন্দ্র করেও এই উদ্যোগ শুরু হয়েছে তা হল শ্রীমতি নদী। জেলার হরিরামপুর ও কুশমন্ডি সমষ্টি দিয়ে প্রবাহিত এই নদীরও জেলা কৃষি, অর্থনীতিতে গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা ছিল। তাকে পুনরায় ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন ।
অভিজ্ঞতা ও কাজের নিরিখে বলতে পারি এই নদীর অবস্থাও ভয়াবহ। তাকে ঘিরে এই উদ্যোগ গ্রহণ খুব প্রয়োজনীয় ও প্রশংসনীয়।
গঙ্গারামপুরের মহকুমাশাসক দেবাঞ্জন রায় জানান “শ্রীমতি নদী কে আমরা পুনরুদ্ধার করবোই।সরকারী প্রকল্পে প্রচুর মানুষ এতে যুক্ত হয়েছেন”
আর একটি বিষয়ও এখানে গুরুত্বপূর্ণ তা হলো পৃথিবীর অন্য অংশের মতো এই জেলাতেও জলসংকট একটা প্রবল আকার ধারণ করতে শুরু করেছে।কাশিয়া খাঁড়ি ও শ্রীমতী নদী সংস্কার করলে জলসংরক্ষণের ক্ষেত্রেও একটা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এখন খেয়াল রাখতে হবে যে কোনভাবেই যেন উদ্যোগ মাঝপথে থেমে না যায়। অন্যান্য নদী ও খাঁড়িকে ঘিরেও এই বাস্তবমুখী পরিকল্পনা কবে নেওয়া হয় সেদিকেই তাকিয়ে আছে জেলার মানুষ।আশা করি সেই উদ্যোগও কার্যকরী হবে।