রিভার বাংলা ডট কম >>
নদী (River)- নদী যে অঞ্চলে উৎপত্তি লাভ করে তাকে নদীর উৎস এবং যে স্থানে সমুদ্রে বা হ্রদে মিলিত হয় সেই স্থানকে মোহনা বলে। নদীর চলার পথে কখনও কখনও ছোট ছোট নদী বা জলধারা এসে মিলিত হয়ে প্রবাহ দান করে- এগুলো উপনদী নামে পরিচিত। একটি নদী এবং এর উপনদীগুলো একত্রে একটি নদী প্রণালি বা নদী ব্যবস্থা (river system)) গঠন করে। ভূ-পৃষ্ঠ কখনও পুরোপুরি সমতল নয়। ফলে বর্ষণসৃষ্ট জলধারা ঢালুতম পথে ভূ-পৃষ্ঠের একাধিক ঢাল পরিচ্ছেদনের ফলে সৃষ্ট অবতল-নিচু অংশে প্রবাহিত হওয়ার প্রবণতা প্রদর্শন করে। নদী গঠনের জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত আয়তন ও গতিবেগসম্পন্ন একাধিক প্রবাহের মিলিত ধারা, যা অন্তঃস্থ ভূমি ও শিলাকে ক্ষয় করে খাতের সৃষ্টি করে এগিয়ে যেতে পারে। নদীর একটি উৎস আধার (source reservoir) থাকে, যা নদীকে নিয়মিত প্রবাহ জোগান দেয়। যেমন- গঙ্গা নদীর উৎস গঙ্গোত্রী নামক হিমবাহ এবং ব্রহ্মপুত্র নদের উৎস মানস সরোবর।
উৎস থেকে ভিত্তিতলে প্রবাহিত গতিপথে নদী সব ধরনের বাধা ও অসমতা এড়িয়ে সুষম ও মসৃণ গতিমাত্রা অনুসরণ করে থাকে। সমতল ভিত্তিতে পৌঁছার পর নদীর তলদেশের ক্ষয় অপেক্ষা পার্শ্বক্ষয়ের পরিমাণ বাড়ে। ফলে নদীর তলদেশ এবং উপত্যকা প্রশস্ত হতে থাকে। এ সময় গতিবেগ হ্রাস পাওয়ায় নদী আঁকাবাঁকা সর্পিল পথে প্রবাহিত হয় এবং নদীতে অসংখ্য বাঁকের সৃষ্টি হয়। বক্র গতিপথে নদীর সর্পিল বাঁকের মুখ দুটি ক্ষয়ক্রিয়ার ফলে কাছাকাছি চলে এলে একপর্যায়ে নদী-ছেদনের ফলে বাঁকা পথ পরিত্যাগ করে নদী অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ সৃষ্টি করে নতুন সোজা পথে প্রবাহিত হয়।
নদীর গতিবেগ নদী কর্তৃক পরিবাহিত পলল ও শিলাখণ্ডের আকৃতি নির্ণয় করে থাকে। ঢালের পরিবর্তন অথবা কোনো জলরাশি কিংবা সাগর বা হ্রদের সঙ্গে মিলনের ফলে নদীর গতিবেগ বাধাপ্রাপ্ত হলে অথবা নদীর জলরাশি দুকূল ছাপিয়ে প্রবাহিত হলে নদী কর্তৃক পরিবাহিত ভার বা বস্তুকণার অংশবিশেষ নদী তলদেশে অথবা নদী খাতের দুই পাড়ে সঞ্চিত হয়। এভাবেই নদীর সঞ্চয়কার্যের ফলে ব-দ্বীপ, পল্গাবনভূমি, চর এবং পলিজ পাখা (alluvial fan) ও পলিজ কোন (alluvial cone) প্রভৃতি ভূমিরূপ গড়ে ওঠে। বাংলাদেশের অধিকাংশ নদ-নদীই বার্ধক্য পর্যায়ে পৌঁছে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে।
অারো পড়ুন……
দখল-দূষণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে কুড়িগ্রামের বুড়ি তিস্তা নদী
বাংলাদেশের প্রায় সব প্রধান শহর, নগর ও বাণিজ্যকেন্দ্রগুলো বিভিন্ন নদীর তীরে গড়ে উঠেছে; যেমন- বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে ঢাকা মহানগরী, শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে নারায়ণগঞ্জ শহর ও বন্দর, কর্ণফুলী নদীর তীরে চট্টগ্রাম, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে ময়মনসিংহ শহর গড়ে উঠেছে। পর্যাপ্ত প্রবাহ, গতিবেগ এবং নতিমাত্রাবিশিষ্ট নদী থেকে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। কাপ্তাই নামক স্থানে কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ দিয়ে জলবিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হচ্ছে। এটি বাংলাদেশের একমাত্র জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র।
বাংলাদেশের নদীমালা এর গর্ব। এখানে প্রায় ৭০০টি নদী-উপনদী সমন্বয়ে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ নদীব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশের নদ-নদীর মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ২৪ হাজার ১৪০ কিলোমিটার। ছোট ছোট পাহাড়ি ছড়া, আঁকাবাঁকা মৌসুমি খাড়ি, কর্দমপূর্ণ খালবিল, যথার্থ দৃষ্টিনন্দন নদ-নদী ও এদের উপ-নদী এবং শাখা নদী সমন্বয়ে বাংলাদেশের বিশাল নদীব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। কিছু কিছু স্থানে যেমন- পটুয়াখালী, বরিশাল এবং সুন্দরবন অঞ্চলে নদীনালা এত বেশি যে, সে অঞ্চলে প্রকৃতই নদীজালিকার সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের নদী-নালাগুলো স্বাভাবিকভাবেই দেশের সর্বত্র সমভাবে বণ্টিত নয়। দেশের উত্তরভাগের উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ক্রমান্বয়ে দক্ষিণভাগের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে নদ-নদীর সংখ্যা এবং আকার দুই-ই বৃদ্ধি পেতে থাকে। নদীব্যবস্থার দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশের নদীমালাকে চারটি প্রধান নদীব্যবস্থা বা নদী প্রণালিতে বিভক্ত করা যেতে পারে : ১. ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদী প্রণালি, ২. গঙ্গা-পদ্মা নদী প্রণালি, ৩. সুরমা-মেঘনা নদী প্রণালি এবং ৪. চট্টগ্রাম অঞ্চলের নদ-নদীগুলো। বাংলাদেশের নদীমালার মধ্যে দৈর্ঘ্যের দিক থেকে ব্রহ্মপুত্র নদ বিশ্বের ২২তম (২ হাজার ৮৫০ কিলোমিটার) এবং গঙ্গা নদী ৩০তম (২ হাজার ৫১০ কিলোমিটার) স্থানের অধিকারী।
সূত্র : বাংলাপিডিয়া ও সমকাল।