মনে ও মগজে প্রায়ই নদীর চলাচল টের পাই। সেই নদীর, যে নদীতে আমরা কাটিয়েছিলাম জীবনের হলুদ এক বিকেল। নাম জানি না সে নদীর, রূপ জানি! বাংলার প্রায় ২৪,১৪০ কিলোমিটার জুড়েই তো সেই রূপ, সুরের ধারা। আমার সেই বিকেল সুখই হয়ত নদীর কাছে চিরঋণী করে রাখে আমাকে। তাই নদীর কথা ভাবি।
আমরা জলের মানুষ, আমাদের সকল কিছুই নদীকেন্দ্রিক। নদী গানের জন্ম দেয়, নদী কবিতার জন্ম দেয়। আনন্দ-বিরহের-ভালোবাসার সাক্ষী নদী। নদীর তীরেই গড়ে ওঠে যান্ত্রিক জীবন, শিল্প কারখানা, এসব শিল্প কারখানা আবার আমাদের অর্থের জোগান দেয়। বলা চলে, নদী বাঁচলে দেশ বাঁচে। কিন্তু কি করছি আমরা! কিভাবে শোধ করছি নদীর ঋণ? আমরা কাজ করছি বহমান নদী প্রকৃ্তির বিরুদ্ধে।
এমন তো কখন হয়নি যে কোন বিদেশী ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান বাঁধ ভাঙ্গার জন্য আমাদের সহায়তা করেছে! আসলে সবই তাদের বাণিজ্যিক লাভের কৌশল মাত্র। উদাহরণ সেই বিল ডাকাতিয়া। শুনতে ডাকাতিয়া নদীর নামের মত সুন্দর শোনালেও বিল ডাকাতিয়ার ইতিহাস বলে অন্য কথা। খুলনা জেলার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ বিলটি আশির দশকে স্থানীয় মানুষের জন্য অভিশাপ হিসেবে দেখা দেয়।
কেননা ষাটের দশকে উপকূলীয় অঞ্চল জুড়ে যে পোল্ডার তৈরি করা হয়েছিল তার অভ্যন্তরে সৃষ্টি হতে থাকে জলাবদ্ধতা। পানি নিষ্কাশনের কোনো জায়গা না থাকায় জলাবদ্ধ হয়ে পরে বিল সংলগ্ন হাজার হাজার মানুষ। পানির তলে হারিয়ে যায় ধান, কৃষি পণ্যসব সবকিছুই। এ অবস্থায় মানুষের জীবন-জীবিকা প্রায় অচল হয়ে পড়ে। বিল ডাকাতিয়া তখন ছিল এক বিচ্ছিন্ন জনপদের নাম।
হিসেব তো সহজ! যখন আমরা প্রকৃতির বিরুদ্ধে দাঁড়াই প্রকৃতি ধীরে ধীরে তার প্রতিশোধ নিতে শুরু করে। প্রকৃতির বিরুদ্ধে যান্ত্রিকতা কি খুব বেশি দিন টিকতে পারে? না। না…ইচ্ছামতির ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করলেই বিপদ। এক ইচ্ছার মৃত্যুই কি আর এক ইচ্ছের মৃত্যু ডেকে আনে না?