ড. মো. মনজুরুল কিবরীয়া ।। বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ- কথাটি কেবল আক্ষরিক অর্থেই নয়, সামগ্রিক অর্থেই সত্য। বাংলাদেশের মানচিত্র নদীর কল্যাণেই সৃষ্ট। ঐতিহাসিক কাল থেকেই বাংলা ভূখণ্ডের মাটি ও মানুষের সঙ্গে নদ-নদী ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত।
সবুজ শ্যামল সৌন্দর্যের চাবিকাঠির একমাত্র বাহক ও নিয়ন্ত্রক। বাংলাদেশে সভ্যতার ক্রমবিকাশ, যোগাযোগ- অর্থনীতির মূল ভিত্তি রচিত হয়েছে নদীকে কেন্দ্র করে তেমনি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যেরও মূল ভিত্তি নদী নির্ভর। সাহিত্য, গান, নাটক, চলচ্চিত্রে নানাভাবে উঠে এসেছে নদীর প্রসঙ্গ। অথচ আমরা নদীকে নিয়ে কতটুকু ভাবি বা জানি। যে দেশ নদীর কল্যাণে গড়ে উঠেছে সেদেশেই নদী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য্যরে লীলাভূমি চট্টগ্রাম। পাহাড়, সাগর ও নদীবেষ্টিত এ চট্টগ্রাম আরও সমৃদ্ধ হয়েছে হালদা নদীর অনন্য বৈশিষ্ট্যের গুণে। নদীমাতৃক বাংলাদেশে জালের মত ছড়িয়ে থাকা ছোট বড় প্রায় ৮০০ নদীর মধ্যে চট্টগ্রামের ছোট্ট একটি নদী হালদা। এটি পৃথিবীর একমাত্র জোয়ার-ভাটার নদী যেখান থেকে সরাসরি রুই জাতীয় মাছের নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করা হয়। পৃথিবীর আর কোন জোয়ার-ভাটার নদী থেকে সরাসরি ডিম আহরণের নজির আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। এ কারণে হালদা নদী বাংলাদেশের জন্য এক বৈশ্বিক হেরিটেজও বটে। সম্পদ, অর্থনৈতিক অবদানসহ বেশকিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের জন্য হালদা নদী আমাদের দেশের জাতীয় মৎস্য প্রজনন ঐতিহ্যের দাবিদার। প্রকৃত তথ্য ও প্রচারের অভাবে হালদা নদীর জাতীয় ঐতিহ্যের পরিচয় সবার দৃষ্টির আড়ালেই রয়ে গেছে এমনকি দেশের নদী সম্পর্কিত জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দলিল কিংবা ইতিহাসে এ নদীর নাম অনেকটা অনুচ্চারিত।
জাতীয় ঐতিহ্যের যৌক্তিকতা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় হালদার নিম্নোক্ত বিশেষত্বসমূহের কারণে এটিই দেশের একমাত্র নদী যা আমাদের জাতীয় ঐতিহ্য হিসাবে স্বীকৃতি পেতে পারে।
১. হালদা বাংলাদেশের নদী
হালদাকে কেন বাংলাদেশের জাতীয় ঐতিহ্য ঘোষণা করা উচিত? এই প্রশ্নের উত্তরে আমরা যদি দেশের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নদীগুলোর সাথে তুলনা করি যৌক্তিকভাবে হালদার নামটি উঠে আসে। কারণ হালদা একমাত্র নদী, যার উৎস ও শেষ আমাদের বাংলাদেশে। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার রামগড় উপজেলার ২নং পাতাছড়া ইউনিয়নের পাহাড়ি ক্রীক থেকে সৃষ্ট হালদা ছড়া থেকে দেশের মৎস্য খনিখ্যাত হালদা নদীর উৎপত্তি। হালদা ছড়া মানিকছড়ি উপজেলার বেলছড়া ও সালদাছড়া খালের সাথে মিলিত হয়ে হালদা খাল এবং ফটিকছড়ির ধুরং খালের সাথে মিলিত হয়ে হালদা নদীতে পরিণত হয়েছে। পরবর্তীতে এই নদী চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রায় ৯৮ কি.মি. পথ অতিক্রম করে চট্টগ্রাম শহরের চান্দগাঁও থানার কালুরঘাট নামক স্থানে কর্ণফুলী নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। চট্টগ্রামের এই নদীর উৎস ও বিস্তারসহ সার্বিক বিষয় বিবেচনা করলে হালদা একমাত্র নদী যাকে আমরা একান্ত আমাদের দেশের জাতীয় ঐতিহ্য হিসাবে দাবী করতে পারি।
২. প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র
চট্টগ্রামের গর্ব হালদা নদী কিছু বৈশিষ্ট্যের কারণে হালদা বাংলাদেশের অদ্বিতীয় নদী। এটি বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ রুই জাতীয় মাছের (রুই, কাতলা, মৃগেল এবং কালিগনি) প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র এবং এটিই দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র যেখান থেকে সরাসরি রুই জাতীয় মাছের নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করা হয়। যুগ যুগ ধরে স্থানীয় অধিবাসীরা বংশপরম্পরায় রুই জাতীয় মাছের ডিম সংগ্রহ করে নিজস্ব পদ্ধতিতে রেণু উৎপাদন করে দেশের মৎস্য খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে।
৩. প্রাকৃতিক জিন ব্যাংক
হালদা নদী বাংলাদেশের রুই জাতীয় মাছের একমাত্র বিশুদ্ধ প্রাকৃতিক জিন ব্যাংক। এই প্রাকৃতিক জিনপুল বাঁচিয়ে রাখার জন্য হালদা নদীর গুরুত্ব অপরিসীম। বর্তমানে কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্রগুলিতে ইনব্রিডিং-এর কারণে মাছের বৃদ্ধি মারাত্মক ব্যহত হচ্ছে এবং বামনত্ব, বিকলাঙ্গতাসহ বিভিন্ন ধরনের জিনগত সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে দ্রুত বর্ধনশীল বড় আকারের রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালিগনি মাছ এক সময় রূপকথার গল্পের মত মনে হবে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য হালদা নদীর প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণের বিকল্প নেই।
৪. বংশ-পরম্পরাগত রীতিনীতি
হালদা নদী থেকে ডিম আহরণ, আহরিত ডিম থেকে রেণু উৎপাদন এবং পরিচর্যা প্রযুক্তি স্থানীয়দের সম্পূর্ণ নিজস্ব। স্মরণাতীত কাল থেকে ধর্মীয় অনুভূতি ও প্রযুক্তিগত জ্ঞানের সংমিশ্রণের এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডিম আহরণ, আহরিত ডিম থেকে রেণু উৎপাদন করে আসছে। স্থানীয় জ্ঞানের মাধ্যমে তাদের এই নিজস্ব পদ্ধতিতে নদীর পাড়ে খননকৃত মাটির গর্তে (কুয়ায়) ডিম ফোটানো হয় এবং চারদিন লালন করে রেণু পোনা তৈরি করা হয়। বংশ পরম্পরায় ডিম সংগ্রহকারীরা এ প্রযুক্তি এখনো ব্যবহার করে আসছে।
৫. অর্থনৈতিক অবদান
হালদা নদীকে কেন্দ্র করে সারা বছরে আবর্তিত হয় এক শক্তিশালী অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞ। হালদা নদী থেকে প্রাপ্ত ডিম, উৎপাদিত রেণুর পরিমাণ এবং এখান থেকে উৎপাদিত মাছের হিসাব করলে দেখা যায়, এক বছরের চার ধাপে জাতীয় অর্থনীতিতে হালদার অবদান প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। এর সাথে কৃষিজ উৎপাদন, যোগাযোগ এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে যোগ করলে একক নদী হিসাবে আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে হালদা নদীর অবদান খুবই তাৎপর্যবহ।
৬. পরিবেশ
বাংলাদেশের অসংখ্য নদী থেকে হালদা নদীর বিশেষ পার্থক্য মূলত: পরিবেশগত। বর্ষা মৌসুমে নদীর পরিবেশগত কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্যের জন্য এখানে মাছ ডিম ছাড়তে আসে। এ বৈশিষ্ট্যগুলো ভৌতিক, রাসায়নিক এবং জৈবিক। আমাবস্যা বা পূর্ণিমা তিথিতে বজ্রসহ প্রচুর বৃষ্টিপাত, উজানের পাহাড়ি ঢল, তীব্র স্রোত, ফেনিল ঘোলা পানিসহ নদীর ভৌত-রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যগুলোর সমন্বিত ক্রিয়ায় হালদা নদীতে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে রুই জাতীয় মাছকে বর্ষাকালে ডিম ছাড়তে উদ্বুদ্ধ করে যে পরিবেশ বাংলাদেশের অন্যান্য নদ-নদী থেকে স্বতন্ত্র।
৭. প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য
ডিম সংগ্রহের মৌসুমে হালদা দু’পাড়ে সৃষ্টি হয় উৎসবমুখর পরিবেশ। স্মরণাতীত কাল থেকে হালদা নদীতে উৎসবমুখর এ কর্মযজ্ঞ চলে আসছে। স্থানীয় জেলে ও ডিম সংগ্রহকারীরা সারা বছর প্রতীক্ষায় থাকে এই মাহেন্দ্রক্ষণের জন্য। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারী থেকে শুরু হয় ডিম ধরার প্রস্তুতি, এসময় পুকুর তৈরি, কুয়া খনন, নৌকা মেরামত ও পার্টনার সংগ্রহের কাজ চলতে থাকে। মে-জুলাই মাসে ডিম সংগ্রহের পর রেণুর পরিস্ফূরণ, পরিচর্যা, পোনা বিক্রয় চলতে থাকে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর পর্যন্ত। স্থানীয় ডিম সংগ্রহকারীরা বছরের এই ৭/৮ মাস কর্মব্যস্ত দিন অতিবাহিত করে। তাই হালদা নদী আমাদের প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ঐতিহ্য।
চট্টগ্রাম অঞ্চলে সাম্পান ও সাম্পান মাঝিদের জীবন যাত্রা নিয়ে রচিত হয়েছে প্রচুর নাটক, সিনেমা, গান, পালা ইত্যাদি। হালদা নদীর সাম্পান মাঝিদের বিশেষ ধরনের গান প্রচলিত ছিল যা এখন প্রায় হারিয়ে যাচ্ছে, এ বিশেষ ধরনের গানকে বলে “হালদা পাডা” গান। তাই হালদা আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যেরও অংশ।
৮. পানি সম্পদ
হালদা নদী বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী ও বন্দর নগরী চট্টগ্রাম শহরের সুপেয় পানির প্রধান উৎস। এ নদীর পানিতে হেভি মেটালের পরিমাণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মান থেকে কম হওয়ায় বিশুদ্ধ ও সুপেয় পানির উৎস হিসাবে হালদা নদীর পানি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। পানির বিশেষ গুণগতমান ও পরিমাণের কথা বিবেচনা করে ১৯৮৭ সাল থেকে চট্টগ্রাম ওয়াসা মোহরা পানি শোধনাগারের মাধ্যমে প্রতিদিন প্রায় ৯ কোটি লিটার পানি উত্তোলন করে শহরের সুপেয় পানির চাহিদা পূরণ করে আসছে। ২০২০ সালের ২৬ জানুয়ারী হালদা নদীর তীরে মদুনাঘাটে নির্মিত চট্টগ্রাম ওয়াসার দ্বিতীয় প্রকল্প শেখ রাসেল পানি শোধনাগার উদ্বোধন করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ প্রকল্পের পানি উত্তোলন ক্ষমতাও দৈনিক ৯ কোটি লিটার। হালদা নদী থেকে চট্টগ্রাম ওয়াসা মোহরা উপরোক্ত দুই পানি শোধনাগারের মাধ্যমে প্রতিদিন ১৮ কোটি লিটার অপরিশোধিত পানি উত্তোলন করে চট্টগ্রামের সুপেয় পানির চাহিদা পুরণ করে আসছে।
৯. অতি বিপন্ন জলজ স্তন্যপায়ী প্রাণী শুশুক বা ডলফিনের আদর্শ ও নিরাপদ আবাস
শুশুক বা ডলফিন আই ইউ সি এন- এর রেড লিস্ট অনুযায়ী বিপন্ন তালিকার জলজ স্তন্যপায়ী প্রাণী। ইংরেজি নাম: Ganges River Dolphin বা South Asian River Dolphin, বৈজ্ঞানিক নাম: Platanista gangetica gangetica. এটি সুসুক, শুশুক, শিশু, শিশুক, শুশু, হুস্তুম মাছ, গাঙ্গেয় ডলফিন নামেও পরিচিত। এই শুশুক প্রজাতি প্রাথমিকভাবে গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র নদী ও বাংলাদেশ ও নেপালে প্রবাহিত তাদের শাখা নদীগুলোতে দেখা যায়। বাংলাদেশে বিশেষকরে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র নদীতে এদের বাস। ভারত সরকার গঙ্গা নদীর শুশুককে জাতীয় জলচর প্রাণী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ব্যাপক জনসংখ্যা বৃদ্ধি পরিবেশ দূষণ এবং অতিমাত্রায় মাছ শিকারের ফলে আশঙ্কাজনক ভাবে এই প্রাণীটার সংখ্যা কমে গেছে।
আমরা যদি এই শুশুক বা ডলফিনের নামকরণ, ইতিহাস ও বিস্তার পর্যালোচনা করি তবে ভারতের গঙ্গা ও এর শাখা নদীগুলোতে এদের বাসস্থান হওয়ার কথা। ভৌগলিকভাবে হালদা, কর্ণফুলি এবং সাঙ্গু নদীর অবস্থান অনুযায়ী গঙ্গা ও এর শাখা নদীগুলোর সাথে চট্টগ্রামের এই নদীগুলোর কোন সংযোগ নাই এমনকি অতীতেও সংযুক্ত থাকার কোন প্রমাণ এপর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তাই চট্টগ্রামের হালদা, কর্ণফুলী এবং সাঙ্গু নদীতে এই ডলফিনের আগমন, বিস্তৃতি এবং অবস্থান এখনো রহস্যাবৃত। আই ইউ সি এন- এর রেড লিস্ট ২০১২ অনুযায়ী এই নদীর ডলফিনগুলোকে আলাদাভাবে অতি বিপন্ন (Critically Endangered) তালিকাভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। আদৌ এই শুশুক বা ডলফিনগুলো Platanista gangetica প্রজাতির কিনা তাও গবেষণার দাবি রাখে। হালদা নদী এই গুরুত্বপূর্ণ জলজ স্তন্যপায়ী প্রাণী প্রজাতির এক আদর্শ আবাসস্থল। দূষণ এবং খাদ্যাভাবের ফলে হালদা থেকেও আশঙ্কাজনক ভাবে এদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। তাই বিশ্বের অতি বিপন্ন এই জলজ স্তন্যপায়ী প্রাণীর অস্তিত্ব ঠিকিয়ে রাখার জন্য হালদা নদীকে সংরক্ষণ এবং ডলফিনের অভয়াশ্রম ঘোষণা করা অত্যন্ত জরুরী।
১০. বিশ্ব প্রাকৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতির পথে হালদা
বিশ্ব প্রাকৃতিক ঐতিহ্য ঘোষণার জন্য ইউনেস্কোর শর্ত অনুযায়ী হালদা নদী বিশ্ব প্রাকৃতিক ঐতিহ্যেরও যোগ্যতা রাখে। ইউনেস্কোর নির্ধারিত চারটি শর্তের (৭-১০নং) মধ্যে যে কোন একটি শর্ত পুরণ করলে বিশ্ব প্রাকৃতিক ঐতিহ্যের জন্য যোগ্যতা অর্জন করে।
শর্ত চারটি হলো-
(৭) চূড়ান্ত প্রাকৃতিক ঘটনা বা ব্যতিক্রমী প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং নান্দনিক গুরুত্ব সম্পন্ন হতে হবে;
(৮) জীবন সৃষ্টির রেকর্ডসহ পৃথিবীর ইতিহাসের প্রধান পর্যায়গুলোর প্রতিনিধিত্বকারী অসামান্য উদাহরণ, ভূ-পৃষ্ঠ বিকাশের গুরুত্বপূর্ণ ভূ-তাত্ত্বিক প্রক্রিয়াগুলি, বা উল্লেখযোগ্য ভূতাত্ত্বিক বা ভূগাঠনিক বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন হবে;
(৯) স্থলজ, মিঠা পানি, উপকূলীয় এবং সামুদ্রিক বাস্তুসংস্থান এবং উদ্ভিদ এবং প্রাণীজ সম্প্রদায়ের বিকাশ এবং বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ চলমান পরিবেশ ও জৈবিক প্রক্রিয়াগুলির প্রতিনিধিত্বকারী অনন্য নিদর্শন হবে;
(১০) বৈজ্ঞানিক বা সংরক্ষণের দৃষ্টিকোণ থেকে অসামান্য সার্বজনীন মানের বিপন্ন প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত জীব বৈচিত্র্যের ইন-সিটু সংরক্ষণের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং উল্লেখযোগ্য প্রাকৃতিক আবাসস্থল হবে;
তবে শর্ত থাকে যে সংশ্লিষ্ট দেশ ইউনেস্কোর শর্ত পুরণকারী প্রাকৃতিক ঐতিহ্যকে প্রথমে তাদের জাতীয় ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা দিতে হবে। উপরোক্ত চারটি শর্তের মধ্যে হালদা নদী ৯ এবং ১০ নং শর্ত সম্পূর্ণ এবং ৭নং শর্ত আংশিক পূরণ করে। সুতরাং হালদা নদীকে বঙ্গবন্ধু ফিশারীজ হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা দিলে বিশ্ব প্রাকৃতিক ঐতিহ্যের পথে একধাপ এগিয়ে যাবে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য আইন ২০১৭ এর ৩২ নং ধারা অনুযায়ী জাতির পিতার নামে হালদা নদীকে ‘বঙ্গবন্ধু ফিশারীজ হেরিটেজ’ ঘোষণার সিদ্ধান্ত একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এই ঘোষণা বাংলাদেশের নদী রক্ষার ক্ষেত্রে হালদা নদী একটি অনন্য উদাহরণ। হালদা নদীকে ‘বঙ্গবন্ধু ফিশারীজ হেরিটেজ’ ঘোষণা করা হলে এটি নদী সুরক্ষা ও ব্যবস্থাপনায় একটি জাতীয় মডেল হয়ে উঠতে পারে। এর আদলে বাংলাদেশের মৃতপ্রায় অন্যান্য নদীগুলোর প্রাণ ফিরিয়ে দেওয়া যেতে পারে। ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা, তোমার আমার ঠিকানা’ যে শ্লোগানে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল সে সুজলা-সফলা, শস্য-শ্যামলা সোনার বাংলাদেশের নদীগুলো রক্ষার মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) ২০৩০, ভিশন ২০৪১ এবং ডেল্টা প্লান ২১০০ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।