চুনতি রক্ষায় সংশ্লিষ্ট এলাকার সাধারণ মানুষকে নিয়ে সংগঠিত সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে ঘোষণা করেন ধরা’র আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব শরীফ জামিল।
তিনি আজ ২৬ জানুয়ারি (২০২৪) শুক্রবার বিকালে চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া উপজেলার চুনতির হোটেল মিডওয়ে ইন এ অনুষ্ঠিত “চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের বর্তমান অবস্থা ও করণীয়” শীর্ষক আলোচনা সভায় এ ঘোষণা দেন। ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) এবং অরণ্য যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে।
আলোচনা সভার প্রধান আলোচক হিসেবে শরীফ জামিল আরও বলেন, চুনতি বনাঞ্চল পরিদর্শনকালে আমরা বন উজাড়, পাহাড় কাটা ও বনের জায়গার অবৈধ দখলদারিত্ব প্রত্যক্ষ করেছি। স্থানীয় মানুষের সাথে কথা বলে উপলব্ধি হয়েছে, বিভাগ ও প্রশাসনের ছত্রছায়ায় একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী নির্বিচারে দিনের পর দিন প্রকৃতি ধ্বংস অব্যাহত রেখেছে। একই সাথে পরিদর্শনকালে লক্ষ্য করেছি সরকারি প্রকল্পের নামে (চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণসহ নানান প্রকল্পে) বনের বৃক্ষ ও পাহাড় বিনাশের পাশাপাশি ধ্বংস করা হয়েছে বন্যপ্রাণীর বিচরণ ক্ষেত্র ও আবাসস্থল। চুনতি রক্ষায় সাধারণ মানুষের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসতে হবে”।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও ধরা’র উপদেষ্টা মন্ডলীর সভাপতি সুলতানা কামাল। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ব্রতী-এর প্রধান নির্বাহী ও ধরা’র আহ্বায়ক কমিটির সহ-আহ্বায়ক শারমীন মুরশিদ।
সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন চট্টগ্রাম বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম চৌধুরী, ‘ধরা’র আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ফজলুল কাদের চৌধুরী ও আব্দুল করিম চৌধুরী কিম। সম্পূর্ণ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ও স্বাগত বক্তব্য রাখেন ‘চুনতি রক্ষায় আমরা’র সমন্বয়ক ও ধরা’র সদস্য সানজিদা রহমান।
অন্যান্যের মধ্যে আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠন ‘অরণ্য’র সিনিয়র সহ-সভাপতি নিয়াজুর রহমান খান, চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আনোয়ার কামাল, লোহাগাড়া প্রেসক্লাবের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম, দৈনিক যুগান্তর-এর নাজিম উদ্দীন রানা, দৈনিক মানবকণ্ঠ-এর জাহেদুল ইসলাম, দেশ-রুপান্তর-এর অধাপক পুষ্পেন চৌধুরী, ‘অরণ্য’র সদস্য সচিব আব্দুল কাইয়ুম ও সাংগঠনিক সম্পাদক মুজিবুর রহমান, ‘কিশলয় চুনতি’র সভাপতি কাজী মোহাম্মদ জাওয়াদ, সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল ফাহাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ রাহিক বিন রুহুল আমিন প্রমুখ।
সভায় প্রধান অতিথি সুলতানা কামাল বলেন, আজকে চুনতি বন্যপ্রানী অভয়ারন্য রক্ষার লক্ষ্যে ‘চুনতি রক্ষায় আমরা’ কর্মসূচীর আওতায় চুনতি ভ্রমণে এসে উন্নয়নের নামে এবং ভূমিদস্যু বিশেষত পাহাড় এবং নদী দখলকারীদের কবলে পড়ে এই চুনতির পরিবেশের উপর যে ভয়াবহ হামলার চিত্র দেখলাম তাতে শিউরে উঠতে হয়। প্রকৃতি এবং বন্যপ্রানীর জীবন প্রবাহকে এমন ক্ষতবিক্ষত করার দৃষ্টান্ত এই নৈতিক অবক্ষয়ের দিনেও বিরল। এখনো সময় আছে আমরা সকলে মিলে চেষ্টা করলে হয়ত আমাদের এই অতি মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদকে রক্ষা করতে পারব।
সভাপতির বক্তব্যে শারমীন মুরশিদ বলেন, পরিবেশ ধ্বংসের উন্মাদনা দেখলাম। চুনতি বনাঞ্চল দেখলাম, যেখানে একদিন সমৃদ্ধ বন্যপ্রাণীর অভয়ারন্য ছিল আজ সেখানে মহাধ্বংসের কর্মযজ্ঞ। বনের ভেতর রেল লাইন, বসতি, ব্যবসা আর হাজার হাজার মা গাছের মৃত্যু। শত শত পাহাড় কর্তন দেখলাম। টিকে থাকা পাহাড়ে অবৈধ দখলদার দেখলাম। মৃতপ্রায় ছড়া ও ছড়ি দেখলাম। এ যেন অন্যরকমের এক মহামারি। এ যেন মাতৃভূমিতে অন্য এক মরন আঘাত।
অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) এর প্রতিনিধিগণ চুনতিতে বসবাসকারী এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাথে সেখানকার পরিবেশগত সমস্যা ও সমাধানের উপায় সম্পর্কে মতবিনিময় করেন এবং সাতগড় বন বিটের লাম্বাসিয়াতে ইটের ভাটা, চুনতি বন বিটের ফোর সিজনস রেস্টুরেন্ট ও রিসোর্টের পেছনের এলাকা, জাঙ্গালিয়া বন বিটে রেলওয়ে ক্রসিং ও বন্যপ্রাণী গবেষণা কেন্দ্র, সুফিনগরের লুতু মিয়ার ঘোনা সহ গুরুত্বপূর্ণ স্থান পরিদর্শন করেন।
আরও পড়ুন..
কক্সবাজারের পরিবেশগত সংকট নিয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
তুরাগ তীরে জেলেদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় হেলথ ক্যাম্প অনুষ্ঠিত