ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) ও ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ এর যৌথ আয়োজনে ২৫ জানুয়ারি, ২০২৪ (বৃহস্পতিবার) বেলা ২টায় কক্সবাজার সদরের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সেমিনার হলে “কক্সবাজারের পরিবেশগত সংকট ও নাগরিক ভাবনা” শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও ধরা’র উপদেষ্টা মন্ডলীর সভাপতি সুলতানা কামাল। সভাপতিত্ব করেন ব্রতী’র প্রধান নির্বাহী ও ধরা’র আহ্বায়ক কমিটির সহ-আহ্বায়ক শারমীন মুরশিদ।
এতে প্রধান আলোচক হিসেবে ছিলেন ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক ও ধরা’র আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব শরীফ জামিল। আলোচক হিসেবে ছিলেন সুরমা রিভার ওয়াটারকিপার ও ধরা’র আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আব্দুল করিম চৌধুরী কিম, বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল কাদের চৌধুরী, এজেএম গিয়াসউদ্দিন চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আকতার উজ জামান চৌধুরী সহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সুলতানা কামাল বলেন, “পরিবেশ ও ধরিত্রীর সুরক্ষায় রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজন। কাজেই আমাদের সাংগঠনিক সক্ষমতা এমন পর্যায়ে পৌছাতে হবে যাতে রাজনৈতিক শক্তি যথাযথ ভুমিকা পালনে জবাবদিহি করতে বাধ্য হন”।
সভাপতির বক্তব্যে শারমীন মুরশিদ বলেন, “পরিবেশ রক্ষার প্রচেষ্টায় তরুণদেরকে আরো বেশি যুক্ত করতে হবে। পরিবেশ ও ধরিত্রী রক্ষার আন্দোলনকে স্কুল পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে হবে”। তিনি এই প্রচেষ্টায় সৎ ও নিষ্ঠাবান ব্যক্তিবর্গ ও নারীদেরকে যুক্ত করার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেন।
প্রধান আলোচক শরীফ জামিল ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ পরিচালিত “Assessment of the state of the environment and ecology for Cox’s Bazar and its surrounding areas” শীর্ষক গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে কক্সবাজার ও আশেপাশের পরিবেশ, পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণ ও করনীয় বিসয়সমুহ তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, কক্সবাজারের পরিবেশ-প্রতিবেশ আজ ধ্বংসের মুখে। নদী, বন, পাহাড়, জীববৈচিত্র্য, সাগরতীর ধ্বংস করে চলছে উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ। অতিরিক্ত ইট-পাথরের ভবনের ভারে সেন্টমার্টিন যেমন ডুবন্ত প্রায় তেমনি দখল-দূষণে হারিয়ে যেতে বসেছে বাঁকখালী, ঈদগাঁও-এর ফুলেশ্বরী, চকরিয়ার মাতামুহুরী ও মহেশখালীর কোহেলিয়া সহ অসংখ্য নদী। উন্নয়নের চাপ থেকে রক্ষা পাচ্ছে না ভার্জিন দ্বীপ সোনাদিয়াও। হোটেলের পয়ঃবর্জ্যে সাগরের পানি দূষিত হচ্ছে। এখনই উদ্যোগ না নিলে নৈসর্গিক কক্সবাজারকে বাঁচানো কঠিন হবে। কক্সবাজারের ভবিষ্যতের উপর জাতির ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে, তাই এটি শুধু কক্সবাজারের সমস্যা নয়, এটি এখন জাতীয় সমস্যা।
তিনি আরও বলেন, পরিবেশ ধ্বংসকারীরা যত শক্তিশালীই হোক না কেন তাদেরকে চিহ্নিত করে সমন্বিতভাবে উদ্যোগ নিয়ে কক্সবাজারকে বাঁচাতে হবে। নয়তো আমরা যতই আন্দোলন, লেখালেখি বা মামলা-মোকদ্দমা করি না কেন, সেগুলো কোন কাজে আসবে না। পর্যটন নগরীর পরিবেশের লাগাম এখনই টেনে ধরতে হবে। সরকারের উচিত আগে পরিবেশ রক্ষা, এরপর উন্নয়ন করা। এ মুহূর্তে ধরা-র মতো পরিবেশবাদী সংগঠনের মাধ্যমে সাংবাদিক, পরিবেশ ও মানবাধিকার কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকা দরকার।
জানা যায়, আলোচনা সভায় উপস্থাপিত গবেষণাটি কক্সবাজার জেলার সবকটি (৯) উপজেলায় (কক্সবাজার সদর, চকরিয়া, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, উখিয়া, টেখনাফ, পেকুয়া, ঈদগাও ও রামু) পরিচালিত হয়। গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা যায় ৬টি উপজেলা বন নিধন, ৭টি উপজেলা পাহাড় কর্তন ও ৯টি উপজেলা বালু উত্তোলনের ফলে ঝুঁকিতে রয়েছে। ৪টি উপজেলার জলাভূমি ময়লা ফেলা এবং ৬টি উপজেলার জলাভূমি দখল, পলি জমা, ড্রেজিং, পাহাড় কর্তনসহ বিভিন্ন কারণে ঝুঁকিতে রয়েছে। উপরোল্লিখিত ৯টি উপজেলাই অবৈধ দখলের কারণে ঝুঁকিতে রয়েছে। এদের ৭টি তেই চলছে অবৈধ ইটের ভাটা। সাধারণ জমি লবন ও চিংড়ি চাষের জন্য রুপান্তরিত করার ফলে ঝুঁকিতে রয়েছে কুতুবদিয়া ও মহেশখালী উপজেলা। পানীয় জলের সংকটের ঝুঁকিতে রয়েছে প্রায় সবকটি উপজেলা। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণকালে ৬২টি বিপন্ন এশিয়ান হাতির মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। মহেশখালী-মাতারবাড়ী সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ১৭,৭৯৪ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে কিন্তু এখনো অনেকে যথাযত ক্ষতিপূরণ পায়নি। রোহিঙ্গাদের পূনর্বাসন এর জন্য অতিরিক্ত ৬,১৬৪ একর বন নিধন করা হয়েছে এবং প্রতিদিন ৬,৮০০ টন কাঠ জ্বালানী রোহিঙ্গাদের রান্নার কাজে ব্যবহৃত হয়।
আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) এর কার্যক্রম কক্সবাজারে শুরু করার জন্য ফজলুল কাদের চৌধুরীকে আহ্বায়ক এবং জাহাঙ্গীর আলমকে সদস্য সচিব করে একটি আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটির পূর্ণাঙ্গ সদস্য তালিকা কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষে পরবর্তীতে জানানো হবে। (প্রেস বিজ্ঞপ্তি)
আরও পড়ুন..
তুরাগ তীরে জেলেদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় হেলথ ক্যাম্প অনুষ্ঠিত
টেকসই উন্নয়নে পরিবেশ রক্ষার গুরুত্ব শীর্ষক তিনদিন ব্যাপী কর্মশালা অনুষ্ঠিত