বিভূতিভূষণের ‘ইছামতী’ : মহাজীবনের মেটাফোর- সৈয়দ কামরুল হাসান

ইছামতি

১. ১৯৪৭ সালের ১৭ জুলাই ছোটভাই নুটুবিহারী বন্দোপাধ্যায়কে লেখা এক পত্রে  বিভূতিভূষণ ‘অভ্যূদয়’ নামে সাময়িকীতে তাঁর ‘ইছামতী’ উপন্যাস ধারাবাহিকভাবে প্রকাশের কথা জানিয়েছিলেন। নিজের গ্রাম বারাকপুর, তৎসন্নিহিত নদী এবং এর আশপাশ, ইংরেজ নীল চাষী, তাদের পরিত্যক্ত স্থাপনা ইত্যাদি নিয়ে একটি উপন্যাস লেখার আকাঙ্ক্ষা তিনি পোষণ করেছিলেন, যখন তিনি প্রথম উপন্যাস ‘পথের পাঁচালী’ লিখছিলেন তখন থেকেই । এ-ব্যাপারে ১৯২৮ সালে তাঁর ডায়রী ‘স্মৃতির রেখায়’ তিনি লিখে রেখেছিলেন তাঁর আগ্রহের কথা। তাঁর ভাষায়: “ঐ আমাদের গ্রামের ইছামতী নদী । আমি একটা ছবি বেশ মনে করতে পারি – ঐ রকম ধূ ধূ বালিয়াড়ী ,পাহাড়…

শেষ পর্যন্ত আত্রেয়ী আর তিস্তার দেখা হয় নি, কথাও না

আত্রেয়ী

এই লেখা আসলে শ্রদ্ধেয় কথাশিল্পী দেবেশ রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন।তাঁর সাথে আমার কোনদিন দেখাও হই নি, কথাও না। তবু আনত শ্রদ্ধা জানাই তাঁকে, নদীকে যিনি বুকে ধারণ করেছিলেন। ছোটবেলা থেকে সম্ভবত ১৯৬৮ সালে তিস্তা নদীর ভয়ংকর বন্যার কথা জেনে আসলেও তার সাথে আমার প্রথম দেখা হয় অনেক পরে।। নব্বই- এর দশকের শেষের দিকে। নদী যে তীব্র অভিঘাত তৈরি করে মনের ভিতর তখন সেটা করেনি। সেটা ছিল শুধু তাকানো। এখন বুঝি সেটা দেখা ছিল না। দেখার দৃষ্টি তো নয়ই। আর তিনি অর্থাৎ দেবেশ রায় তিস্তাকে গভীর ভাবে দেখেছেন না, তিনি শুধু…

আধুনিক ভারতীয় সভ্যতার বিষম ভয়ঙ্কর দিকগুলি তাঁহারা নিজেদের প্রাণ দিয়া দেখাইয়া গেলেন

জাহ্নবী-যোদ্ধা বাইশে জুন হইতে এগারো অক্টোবর— প্রায় চার মাসের যুদ্ধ তবে শেষ হইল। ছিয়াশি বৎসর বয়সে জি ডি অগ্রবাল, সন্ন্যাসগ্রহণের পর যাঁহার নাম হইয়াছিল স্বামী জ্ঞানস্বরূপ সানন্দ, চার মাস পূর্বে, বাইশে জুন গঙ্গাদূষণের নিরাময়কল্পে আমরণ অনশনের মাধ্যমে যে যুদ্ধটি শুরু করিয়াছিলেন, তাহা সমাপ্ত হইল। দীর্ঘ অনশনের ফলে তাঁহার দেহ জীর্ণ ও অসুস্থ হইয়া পড়িয়াছিল, কিন্তু নিজের সঙ্কল্প হইতে তাঁহাকে এক বিন্দু টলানো যায় নাই। এত বড় যুদ্ধ দিয়াও কোনও ভাবে তিনি তাঁহার কল্পনার পবিত্রপ্লাবিনীকে ফিরাইয়া আনিতে পারেন নাই। ফিরাইয়া আনা অসম্ভব ছিল। কেননা যে নদীকে তিনি ও তাঁহার মতো অসংখ্য…