নদ, না নদী- শেখ রোকন

নদ

নদ, না নদী- এ নিয়ে যারা বিতর্ক করে, তারা না বোঝে নদী, না জানে ভাষা। ‘নদী’ আসলে একটি ‘জেনেরিক’ শব্দ। যেমন ‘মানুষ’। এর মধ্যে মানব ও মানবী দুটোই আছে। এদের জন্য আরেকটি উদাহরণ যথার্থ- ‘গরু’ দিয়ে গাই ও বলদ দুটোই বোঝায়। যেমন ‘ছাগল’। এর মধ্যে বকরি ও পাঁঠা দুটোই আছে। নদীর ‘লিঙ্গ’ নিয়ে বিতর্ক কেবল অকর্মণ্য বাঙালির মধ্যেই দেখা যায়। দুনিয়ার আর কোথাও নেই। যার শাখা আছে, সেটা নদী, আর যার শাখা নাই সেটা নদ। এই ‘তত্ত্ব’ এরা দিয়ে থাকে। তাহলে ব্রহ্মপুত্র কীভাবে নদ? এর তো শাখা আছে অনেক; যেমন…

“দুই বাংলার নদীকথা”- নদীমাতৃক বাংলার বিশ্বকোষ

দুই বাংলার নদীকথা

।। জ্যোতিরিন্দ্রনারায়ণ লাহিড়ী ।।  “ দেওয়াল ঘড়ির পেন্ডুলামের মত নদী একটা নির্দিষ্ট ব্যপ্তির মধ্যে ক্রমাগত সঞ্চরণশীল থাকে। যে ব্যপ্তির মধ্যে নদী সতত গতিশীল থাকে তাকে বলে নদীর ‘মিয়েন্ডার বেল্ট’। নদীর ‘মিয়েন্ডার বেল্ট’কে তার খেলাঘর বলা যায়। যেখানে সে সক্রিয় থাকে। এই এলাকা কৃষি কাজে ব্যবহার করা গেলেও রেলপথ বা সড়কপথ নির্মাণের যোগ্য নয়। মানুষ না বুঝে নদীর খেলাঘরে ঢুকে পড়লেই বিপদ আসতে বাধ্য।”- সদ্য প্রকাশিত “দুই বাংলার নদীকথা” নামে বইতে বাংলার নদী নিয়ে তাঁর চার দশক ব্যাপী নিরলস গবেষণা ও চর্চার নির্যাসকে তুলে এনেছেন নদী বিজ্ঞানী কল্যাণ রুদ্র। নদী আমাদের…

শুভ জন্মদিন নদীবন্ধু মনির হোসেন

জন্মদিন

সুমন মজুমদার ।।  আজ নদীবন্ধু মুহাম্মদ মনির হোসেন এর জন্মদিন। ১৯৮৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর কুমিল্লায় এক সাধারণ পরিবারে জন্ম নেন তিনি। নদী যদি হয় এই বাংলা বদ্বীপের প্রাণ, তাহলে কোথাও না কোথাও তার প্রাণের মানুষ আছে নিশ্চই। যিনি নদী ও তার দুই পাশের জনপদকে ভালোবেসেছেন স্বজনের ভালোবাসায়। নদীর সুখ-দুঃখ, আনন্দ, বেদনার নানা গাঁথা যিনি তুলে ধরেছেন জনসমক্ষে। দূষণ দখলের এই দুঃসময়েও বলেছেন নদীর পূনরুজ্জীবনের কথা। এমনই এক নদী প্রেমি মানুষ মনির হোসেন। নদীর পরিবেশ, প্রতিবেশ ও তার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নিরলস কাজ করে যিনি পরিচিতদের কাছ থেকে খেতাব পেয়েছেন নদীযোদ্ধা হিসেবেও।…

আমার দাড়াইন ।। সুমনকুমার দাশ

দাড়াইন

ছোট্ট মফস্বল শহর ঘুঙ্গিয়ারগাঁওয়ের পাশ দিয়ে বহে গেছে যে নদ-তা দাড়াইন। আমাদের শৈশব-কৈশোরের খেলার সঙ্গী। যতক্ষণ চোখ লাল না হতো, ততক্ষণ দাড়াইনের তরল বুকে চলত দাপাদাপি। ফাল্গুন-চৈত্রের নিস্তরঙ্গ রূপ আর জৈষ্ঠ্যের যুবক দাড়াইনের কত ফারাক! আষাঢ়-শ্রাবণে ফুলে-ফেঁপে দাড়াইন মিশে যেত হাওরের বুকে। মাঝ নদীতে গেরাফি-ফেলা নৌকার মতোই পুরো জনপদের গ্রামগুলো যেন ভাসত হাওরজুড়ে! শুষ্ক আর বর্ষা-দুই সময়ে দুই রূপ দাড়াইনের। সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার শ্রীহাইল হোসেনপুর গ্রাম থেকে পাশ্ববর্তী দিরাই উপজেলার ধলবাজারের কাছাকাছি পর্যন্ত সাপের মতো এঁকেবেঁকে গেছে দাড়াইন নদ। বর্ষায় পানিতে থইথই করলেও শুষ্ক মৌসুমে কোথাও কোথাও হাঁটুসমান পানি থাকে।…

যে জলে জীবন জ্বলে ।। রেজাউল করিম

জীবন

ছেলেবেলা থেকেই নদী ও প্রকৃতির সাথে আমার জীবন জড়িয়ে আছে আষ্টেপৃষ্ঠে। নদী ও প্রকৃতির শান্ত-সৌম্য-স্নিগ্ধ রূপ মাধুর্য দেখে যেমন মুগ্ধ ও বিমোহিত হয়েছি তেমনি এর রুদ্র রূপ, ঝঞ্জা-বিক্ষুব্দ ভয়ংকর নিষ্ঠুরতা দেখে হয়েছি অস্থির, কখনোবা বেদনায় নীল। প্রবল ঢেউ ও ঝরো হাওয়ায় কখনো বা বিপন্নবোধ করেছি মেঘনা, পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার মাঝনদীতে। উত্তাল ঝড়ো হাওয়ায় ডুবে মরার হাত থেকেও দু’একবার প্রাণে বেঁচে ফিরেছি! আমার বেড়ে ওঠা খাল-বিল-নদী-নালা বিধৌত গ্রামীণ জনপদে। আশৈশব বিচরণ করেছি অনাবিল ও স্নিগ্ধ প্রকৃতির মাঝে। নানা ধরনের দেশীয় নৌকা, লঞ্চ, স্পীডবোট, স্টীমারসহ নানান ধরনের জলযানে চড়ে নদীপথে ভ্রমণ করেছি…

চাঁদপুরের নদী, প্রকৃতি ও ইলিশ ।। সৌম্য সালেক

ইলিশ

‘নদীমাতৃক একটি ভূগোল ঘুরতে ঘুরতে আমি ঘুরে এলাম উড়তে উড়তে আমি উড়ে এলাম না কোনো রহস্য ছিল না না কোন চমক ছিল না কেবল একঘেয়ে এক ক্লান্তি দেখতে দেখতে আমি হয়ে উঠি যুগলতা আমি দেখতে দেখতে খসিয়েছিলাম শরীরের তাবৎ ক্লান্তি ওম শান্তি, ওম শান্তি’ –কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা আমরা নদীমাতৃক ভূ-ভাগের অধিবাসী। নদীর প্রভাবে আমরা নানাভাবে প্রতীকায়িত হয়েছি। নদীর বাঁধাহীন ছুটে চলার সাথে মিল রয়েছে মানব জীবনের প্রবাহমানতার। নদীর ইতিহাসও মানুষের ইতিহাসের মতোই প্রাচীন এবং বৈচিত্রপূর্ণ। বাংলাদেশের পুরো ভূগোলজুড়ে জালের মতো ছড়িয়ে বিছিয়ে রয়েছে অনেক নদী। শাখা-প্রশাখাসহ প্রায় ৮০০ নদ-নদীর…

হালদা নদীকে বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ ঘোষণা: যৌক্তিকতা ও বিশ্লেষণ

বঙ্গবন্ধু

ড. মো. মনজুরুল কিবরীয়া ।। বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ- কথাটি কেবল আক্ষরিক অর্থেই নয়, সামগ্রিক অর্থেই সত্য। বাংলাদেশের মানচিত্র নদীর কল্যাণেই সৃষ্ট। ঐতিহাসিক কাল থেকেই বাংলা ভূখণ্ডের মাটি ও মানুষের সঙ্গে নদ-নদী ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত। সবুজ শ্যামল সৌন্দর্যের চাবিকাঠির একমাত্র বাহক ও নিয়ন্ত্রক। বাংলাদেশে সভ্যতার ক্রমবিকাশ, যোগাযোগ- অর্থনীতির মূল ভিত্তি রচিত হয়েছে নদীকে কেন্দ্র করে তেমনি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যেরও মূল ভিত্তি নদী নির্ভর। সাহিত্য, গান, নাটক, চলচ্চিত্রে নানাভাবে উঠে এসেছে নদীর প্রসঙ্গ। অথচ আমরা নদীকে নিয়ে কতটুকু ভাবি বা জানি। যে দেশ নদীর কল্যাণে গড়ে উঠেছে সেদেশেই নদী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত…

নদী একটাই ।। রাজেশ ধর

রাজেশ

‘নদী’…কলকল, কলকল… ঢেউতোলা এই শব্দটা প্রথম কবে শুনেছিলাম ? কবে প্রথম ‘নদী’র ডাকে  বুকের রক্ত ছলকে উঠেছিল? প্রথমবার কবে জেনেছিলাম নদী আসলে জলের ধারা…সে জল শীতল, মিষ্টি আবার কখনও নোনা পানি!  সেদিন কি জেগেছিলাম? নাকি ছিলাম ঘুমিয়ে…স্বপ্নের মধ্যে? দুই কুল…দুপারকে বেঁধে রাখতে রাখতে এক নিমেষেই নদী… সব গিলে খেয়ে নিতে পারে!  নির্বিচারে মুছে যেতে পারে– ডাঙা, ফসল, গাছপালা,… সাতমহলা কীর্তির অহংকার। নদী নাকি সে নিয়তি? তারই বা জ্ঞান হল কবে? জানি না…বলতে পারব না। দুই.  জন্ম থেকে প্রায় বছর তিরিশ পর্যন্ত এক বিশাল ঘিঞ্জি শহরে বাস আমার। সে শহরের পশ্চিম…

কালনির স্নিগ্ধতায় আমার ছেলেবেলা ।। আলম মাহবুব

কালনির

কালনি! এই কালনি নামের সাথে মিশে আছে হাজার বছরের ইতিকথা। আমি বলছিলাম কিশোরগঞ্জ জেলার হাওর বেষ্টিত অষ্টগ্রামের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া মেঘনার শাখা কালনি নদীর কথা। আবহমান গ্রামবাংলার নদীর আত্মপ্রকাশে চিরচেনা এই ভাটির জনপদের কালনি নদীর তীরেই গড়ে উঠেছে বহু জনপদ, আছে অনেক রত্নগল্প। যা আজ কিছুটা তুলে ধরতে চেষ্টা করছি। কিশোরগঞ্জের সীমান্ত ঘেঁষে থাকা এই নদীটি কোন একসময় খরস্রোতা নব যৌবনায় ভরপুর ছিলো। বিস্তীর্ণ হাওরের বুকের প্রশস্ত সবুজে কৃষকের ক্লান্তি, হতাশার একমাত্র অবলম্বন এই কালনি। যার উৎপত্তি কিশোরগঞ্জ জেলা ও বি- বাড়িয়া জেলার সীমান্ত নির্ধারণকারী মেঘনার শেষ ভাগ হতে…

দখল আর দুষণে সয়লাব নরসিংদীর নদ-নদী

দখল

নদী বেষ্টিত একটি জেলা নরসিংদী। এই নদ-নদীকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে নরসিংদীর শিল্পাঞ্চল। কিন্তু আজ দখল আর দূষণে সয়লাব হয়ে গেছে নরসিংদীর নদ-নদীগুলো। নরসিংদীর একদিকে শীতলক্ষ্যা অপরদিকে মেঘনা, এই দুটি বড় নদী জেলাটিকে ঘিরে রেখেছে। দেশের নদীগুলোর মধ্যে মেঘনা ও শীতলক্ষ্যা অন্যতম। এর শাখা নদী  ব্রহ্মপুত্র, আড়িয়াল খাঁ, হাড়িধোঁয়া, পাহারিয়া, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র। এই নদীগুলো নরসিংদী জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে বয়ে গেছে। নদীপথে সহজলভ্যতার কথা চিন্তা করে নদী তীরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ছোট বড় কারখানা। দখলদাররা নরসিংদীতে বয়ে যাওয়া নদীগুলোর দু-ধারে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে একদিকে নদীর জায়গা দখল করেছে, অপর দিকে এই…

বাঁচলে নদী বাঁচবে দেশ : ড. মীজানুর রহমান

কীর্তনখোলার ভাঙনকবলিত এলাকার মানুষ নদীতে মাছ ধরে জীবন যাপন করছে

অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান >>  নদীমাতৃক বাংলাদেশ কথাটির অর্থ, বাংলাদেশ নামক দেশটির মা বা জননী হচ্ছে নদী। গঙ্গার পানির সঙ্গে আসা পলি জমে জমে সৃষ্টি হয়েছিল এই ব-দ্বীপ। এ হচ্ছে বাংলাদেশের ভূ-তাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য যা মানুষের নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের মতো কাছাকাছি ধারণা। আর বাংলাদেশের রাজনৈতিক ঠিকানাও কিন্তু নদী। পাকিস্তানি আধা-ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তির লক্ষ্যে মধুমতির তীরে জন্ম নেওয়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে যে বাংলাদেশের জন্য আমরা দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম করেছিলাম তার ঠিকানাও ছিল আমাদের তিনটি প্রধান নদীর নামে। ‘তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা-মেঘনা-যমুনা’; এটাই ছিল আমাদের রাজনৈতিক ঠিকানা। বাংলার সমাজ-রাজনীতি-অর্থনীতি-শিল্প-সংস্কৃতি সবকিছুতেই…

নববর্ষের প্রত্যাশা : ভালো থাকবে আমার নদী সুতি

বৈশাখে নদী ভাবনা - আফজল হোসেন আজম

রিভার বাংলা’র বৈশাখী আয়োজনে কিশোরগঞ্জ জেলার তাড়াইল উপজেলাস্থ সুতি নদী নিয়ে লিখেছেন নদীকর্মী আফজল হোসেন আজম।- সম্পাদক আজ চৈত্রের শেষ দিন। কেমন জানি সাজ সাজ রবে মেতে উঠেছে আমার দুই পাড়ের বাঙালী। তাদের স্বত্বা নিয়ে লড়ছে বুঝি।আর্য আর অনার্যদের ঝাঁপি মাথায় নিয়ে একি আনন্দের নববর্ষ! ১লা বৈশাখ ১৪২৬ বংঙ্গাব্দ। শুভ নববর্ষ। বাঙালী স্বত্তার একটি দিন। সারাবিশ্বের বিস্ময়! বাঙ্গালী ওরা।আমি সূতী।ওদের স্বত্তার অংশীদার। পিতা নরসুন্দার বড় মেয়ে। আমার বুঝি নববর্ষ নেই। আমি তোমাদেরি মেয়ে। কেমন সুন্দর তুলতুলে নামটি রেখেছিল দাদা ব্রক্ষ্রপুত্র। যৌবনে লালপাঁড়ের শাড়ী পড়তাম। কোমল সূতার বুননের।বাঙ্গালী তাঁতীদের হাতের নিখুঁত…