আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস উপলক্ষে বুধবার, ১৩ মার্চ, সকাল ১১ টায় ঢাকার গাবতলীর ল্যান্ডিং স্টেশন ঘাটে অনুষ্ঠিত হয় মানববন্ধন, প্রতীকী পরিচ্ছন্নতা, মাঝিদের মাঝে ঝুড়ি বিতরণ ও মূকাভিনয় প্রদর্শনী।
ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা), বুড়িগঙ্গা রিভারকিপার, আমিন বাজার ঘাট শ্রমিক ইউনিয়ন, বনলতা নারী উন্নয়ন সংস্থা, এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভস, গ্লোবাল ল’ থিংকার্স সোসাইটি, নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন, অর্গানাইজেশন ফর ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল কনজারভেশন, সপ্নের সিড়ি সমাজ কল্যাণ সংস্থা, সচেতন নাগরিক সমাজ, সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য, তৃণমূল উন্নয়ন সংস্থা, ভয়েজ অফ দ্যা ওল্ড ব্রহ্মপুত্র রিভার, রিভার বাংলা ও ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ যৌথভাবে দেশের নদীর দূষণ-দখল রোধে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে সারা বিশ্বের পাশাপাশি বাংলাদেশে এই দিবসটি পালন করেছে।
এই কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার। ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) এর সদস্য সচিব শরীফ জামিলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ইবনুল সাঈদ রানা।
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন রিভার বাংলা সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ। অতিথি ও আয়োজক সংগঠনদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব সোলায়মান সুখন, শের-এ-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী, ইআরডিএ এর পক্ষ থেকে মনির হোসেন চৌধুরী, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ এর ইকবাল ফারুক, তৃণমূল উন্নয়ন সংস্থার চেয়ারম্যান খন্দকার ফারুক আহমেদ,
স্বপ্নের সিড়ি সমাজ কল্যাণ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক উম্মে সালমা, জিএলটিএস এর সভাপতি রাওমান স্মিতা, বনলতা উন্নয়ন সংস্থার পক্ষ থেকে ইসরাত জাহান লতা, আমিনবাজার ঘাট শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লাল মোহাম্মদ, বুড়িগঙ্গা রিভারকিপারের সৈয়দ তাপস, তুরাগ রক্ষা আন্দোলনের নেতা নিত্য রাজবংশী, আমিনবাজার ঘাট শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি, আমজাদ আলী লাল প্রমূখ। অনুষ্ঠানে অর্গানাইজেশন ফর ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল কনজারভেশন এর পক্ষ থেকে মূকাভিনয় প্রদর্শন করেন পরিবেশকর্মী আবু সাদাত মোঃ সায়েম।
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বিধাতা এই পৃথিবী সৃষ্টি করে অসংখ্য জলাধার দিয়েছেন যেগুলো এই পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্বের জন্য অপরিহার্য। কিন্তু আমরা এই জলাধারগুলো বিভিন্নভাবে নষ্ট করে ফেলছি। আমাদের আগামী প্রজন্মের জন্য সুন্দর একটা পৃথিবী রেখে যাওয়ার প্রতিজ্ঞা করতে হবে। কিন্তু, নদী দখল-দূষনকারীদের নামের তালিকা থাকা সত্ত্বেও তাদেরকে উচ্ছেদ করা বা শাস্তি প্রদানের আওতায় আনা যাচ্ছে না। তাই, যারা আগামী দিনে ভোট চাইতে আসবে তাদেরকে সরাসারি জিজ্ঞেস করবেন তাঁরা তুরাগ-বুড়িগঙ্গার জন্য কী করবেন।
সভাপতির বক্তব্যে ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) এর সদস্য সচিব শরীফ জামিল বলেন, ঢাকার নদীগুলোকে সংরক্ষণের নামে আমরা দূষিত নর্দমায় পরিণত করেছি। তুরাগ অববাহিকায় নদীর দখল মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এককালের কহর দরিয়ার এখন কোথাও কোথাও দুটি নৌকা একসাথে চলতে পারে না। বর্তমানে নদীগুলোর পানি কুচকুচে কালো ও দূর্ঘন্ধময় । তিনি নদী সংশ্লিষ্ট সবাইকে শুধু আজকের দিন নয় বরং নদী রক্ষার জন্য প্রতিদিন-ই নদীর প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ করার আহ্বান জানান।
রিভার বাংলা সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ বলেন, নদী পাড়ের মানুষকেই নদী সুরক্ষার জন্য সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে। তারা সচেতন ও দায়িত্বশীল হলেই নদীর দখল-দূষণ রুখে দেওয়া সম্ভব।
মিডিয়া ব্যক্তিত্ব সোলায়মান সুখন বলেন, যারা নদী ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করে তারাই প্রকৃত মানুষ। নদী ও পরিবেশ রক্ষার এই কর্মসূচীতে উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানান তিনি। পরবর্তীতে তিনি এই পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনে আরও বেশি কাজ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
শের-এ বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকুয়াকালচার বিভাগের চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, আমি আজকের এই কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করছি। দখল-দূষণ যা হয়েছে তা কমিয়ে নদীর প্রাকৃতিক প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। একইসাথে, ভবিষ্যতে যেন নদী দখল-দূষণ মুক্ত থাকতে পারে সে ব্যাপারে আমাদের সোচ্চার থাকতে হবে।
জিএলটিএস লিডারশিপ প্লাটফর্ম এর সভাপতি রাওমান স্মিতা বলেন, আমরা সমস্যা জানি, সমাধানও জানি, কিন্তু সমস্যা সমাধানে স্বদিচ্ছার অভাব রয়েছে। জ্যেষ্ঠ প্রজন্ম একটা টেকসই বাংলাদেশ দিতে ব্যর্থ হয়েছে! তাই নিজেদের জীবন বাঁচাতেই নদী রক্ষায় তরুণ প্রজন্ম এগিয়ে আসা ছাড়া উপায় নাই। তবে তরুণরা শুধু আলোচনা সভা, দিবস পালন করার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা যাবে না। তাদেরকে নেতৃত্ব নিতে হবে, নদী ও দেশ রক্ষার দায়িত্ব নিতে হবে।
আরও পড়ুন..
পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর প্রকল্পে বীমা নিরাপত্তা নিরুৎসাহিত করতে সমাবেশ ও সাইকেল র্যালি