নদী চেতনা বাড়াতে নদীপাড়ের মেলা আয়োজক কমিটির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেওয়া উচিত

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে শেখ হাসিনা ধরলা সেতুর পাড়ে দশহরা মেলা । ছবি- বাংলার ডাক ।

একথা বলতে ভাল লাগছে যে বিভিন্ন ভাবেই মানুষের মধ্যে নদী চেতনা বাড়ার নমুনা বা লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। নদীর কথা উঠে আসছে অনবরত সংবাদমাধ্যমে। সমগ্র পৃথিবীতেই নদীর কথা বলতে শুরু করেছেন নদীকর্মীরা। প্রশাসন কখনও কখনও বাধ্য হচ্ছে নদীকে কেন্দ্র করে উদ্যোগ গ্রহণ করতে। আবার এটাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে প্রশাসন নিজেরাও চেতনা বৃদ্ধির নমুনা প্রদর্শন করছে। কারণ কিছু ক্ষেত্রে নিজেরাই নদী সুরক্ষার কাজ করছে। নদীকে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হচ্ছে। এখানেই একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ উত্থাপন করতে চাই।তা হল নদীর পাড়গুলিতে বিখ্যাত সব মেলা হয়।এবং তা হয় বাংলাদেশ ও ভারতবর্ষের বিভিন্ন নদীকে ঘিরেই। তাহলে তারা কেন নদীর সুরক্ষার জন্য কর্মসূচি নেবেনা?

এই ভাবনাটি মাথায় এলো দক্ষিণ দিনাজপুরের প্রধান নদী আত্রেয়ী পাড়ের গুরুত্বপূর্ণ মেলা গঙ্গাসাগর মেলাতে গিয়ে। গঙ্গাসাগর অর্থাৎ দক্ষিন চব্বিশ পরগনার গঙ্গাসাগরে মকর সংক্রান্তির সময় যে মেলা হয় তারই আদলে আত্রেয়ী পাড়েও গঙ্গাসাগরের মেলা হয়। যদিও আমি এখানে শুধু ভারতবর্ষের অংশের নদীর কথাই বলবো।

ভারতবর্ষের গুরুত্বপূর্ণ নদী যমুনা। যে নদীর তীরে পৃথিবীর উল্লেখযোগ্য স্থাপনা তাজমহল অবস্থিত । গতবছর সেখানে আর্ট অব লিভিং-এর সুবিশাল এক মেলা হয়। নদীর ক্ষতি হবে এই মর্মে সুপ্রিম কোর্টে দাখিল হওয়া মামলাতে রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে উদ্যোক্তারা বাধ্য হয় ক্ষতি মেরামতে অর্থ প্রদান করতে।

কিছুদিন আগে গঙ্গার তীরে বিখ্যাত কুম্ভমেলা যাকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। অগনিত পূন্যার্থী সমবেত হয় গঙ্গার পাড়ে। মালদহ পশ্চিমবঙ্গের একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা। মহানন্দার পাড়ে অবস্থিত মালদহ। যে নদীর পাড়ে কিছুদিন আগেই বইমেলা হয়ে গেল। অথচ নদীকে নিয়ে কোন আলোচনার কথা সর্বসমমক্ষে আসেনি। মহানন্দা নদী দূষিত নদীগুলির অন্যতম। আবর্জনার ক্ষেত্রের পীঠস্থান হয়ে উঠেছে মালদহের মহানন্দা।নদী দখল হচ্ছে।নিদেনপক্ষে নদীকে কেন্দ্র করে সচেতনতার জন্য আলোচনাসভার আয়োজন করা যেতে পারতো। বইমেলাতে কত মানুষ আসে। অথচ তার কোন উদ্যোগ নজরে পড়লোনা। কোন ভাবনাও না। নদীকে কেন্দ্র করে বারুনী স্নান ও মেলা হয়। তাতেও উদ্যোগ নেওয়া উচিত। এই যে গঙ্গাসাগর মেলা হয়ে গেল সেখানে যাতে পরেরবার থেকে আত্রেয়ী নদীর জন্য কর্মসূচি গ্রহণ করে তার জন্য প্রস্তাব দেওয়া হলো। উদ্যোক্তারা সেটা মেনে নিয়ে চেষ্টা করবেন জানিয়েছেন ।

কি কি ভাবে নদীকেন্দ্রিক মেলাগুলি নদী চেতনা বৃদ্ধিতে আলোকপাত করতে পারে তার একটা ধারণা দেবার চেষ্টা করছি।

০১.  মেলাকে পরিবেশ বান্ধব ঘোষনা করতে যা যা করণীয় করতে হবে।

০২. প্রতীকী নদী সাফাই অভিযান করা যেতে পারে

০৩. অন্তত একদিন নদী ভিত্তিক আলোচনা থাকতে পারে যার মূখ্য বিষয় হবে ‘নদীরক্ষায় আমাদের করণীয়’।

০৪. নদী বাহিনী প্রস্তুত করা।যে নদী বাহিনী মেলার সময় ও মেলার পরেও নদীর সুরক্ষায় কাজ করবে।

০৫. মেলার মধ্যে নদী সচেতনতার লিফলেট বিলি করা যেতে পারে।

০৬. নদীর জন্য পঞ্চায়েত ও পৌরসভাকে নদী সমস্যার কথা জানিয়ে যৌথভাবে কর্মসূচি নেওয়া

০৭. মেলা প্রাঙ্গণে পর্যাপ্ত ডাস্টবিন রাখা, নদীর সমস্যা ভিত্তিক মাইকিং মেলা চলাকালীন নিয়মিত করা, শেষ হওয়ার পর দ্রুত মেলা প্রাঙ্গণ পরিষ্কার করা।

এছাড়াও অন্য কর্মসূচি নেওয়া যেতে পারে যা নদীকে ভালবাসার কথা বলবে। আমারা নদীমাতৃক সন্তানেরা মায়ের কথা না ভাবলে কে ভাববে? যে কোন ভাবেই নদীচেতনা বৃদ্ধি করার নতুন নতুন দৃষ্টিকোণ তৈরি করতে হবে।এছাড়া কোন উপায় নেই।

নোট: লেখায় ব্যবহৃত ছবিটি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে শেখ হাসিনা ধরলা সেতুর পাড়ে দশহরা মেলার । ছবি- বাংলার ডাক ।

রিভার বাংলা-তে  আরো পড়তে পারেন….

কারখানার বিষাক্ত গ্যাস শীতলক্ষ্যায়, মরে যাচ্ছে মাছসহ জলজ প্রাণী!

পুনর্ভবা-ব্রাহ্মনী নদী বাঁচাতেই হবে, এটাই সময়ের দাবী

আত্রেয়ী নদী সাফাই : ভিন্ন এক অভিজ্ঞতা

সংশ্লিষ্ট বিষয়