প্রসঙ্গ ফেনী নদী : রিভারাইন পিপলের মহাসচিব শেখ রোকনের ৬ দফা

প্রসঙ্গ

ফেনী নদী সমঝোতা নিয়ে আমার ছয় দফা অবস্থান: প্রথমত, অতি অবশ্যই ফেনীর আগে তিস্তা ইস্যুর সমাধান হওয়া উচিত ছিল। যেহেতু ওই নদী নিয়ে অনেক আগে থেকে আলোচনা চলছে এবং একটি খসড়া চুক্তি চূড়ান্ত হয়ে আছে। কিন্তু ফেনীর সমঝোতার কারণে অন্যান্য নদীর দরকষাকষিতে আমরা একধাপ এগিয়ে থাকলাম। স্মর্তব্য ১৯৯৬ সালে গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তির সময়ে ভারতে অভ্যন্তরীন বিরোধিতা প্রবল ছিল।

দ্বিতীয়ত, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনের ক্ষেত্রে বেস্ট ফর্মুলা দিয়েছে জাতিসংঘ পানিপ্রবাহ কনভেনশন ১৯৯৭। সেখানে নদীর পানির তিনটি পক্ষ ধরা হয়; উজানের দেশ, ভাটির দেশ ও নদী নিজে। সেই ফর্মুলায় ফেনী নদীর পানি বণ্টনে আমরা সুবিধাজনক অবস্থানে। কীভাবে? পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে শুকনো মৌসুমে নদীটিতে ৪৭-৪৮ কিউসেক পানি থাকে। যদি ৪৫ কিউসেকও ধরি, যদি সমান তিন ভাগেও ভাগ করি; তাহলে ভারতের ভাগে পড়ে ১৫ কিউসেক। বাংলাদেশের ভাগে ১৫ কিউসেক। নদীর ভাগের ১৫ কিউসেক স্বাভাবিকভাবেই গড়িয়ে মুহুরী নদী হয়ে বঙ্গোপসাগরে যাবে। অর্থ্যাৎ, বাংলাদেশে আসার কথা ৩০ কিউসেক। আলোচ্য সমঝোতায় ভারত ১ দশমিক ৮২ কিউসেক বা সর্বোচ্চ ২ কিউসেক উত্তোলন করবে। বাংলাদেশের ও নদীর থাকবে অন্তত ৪৩ কিউসেক।

তৃতীয়ত, ভারত আগে থেকেই ফেনী নদী থেকে একতরফা পানি উত্তোলন করতো। এই সমঝেতার মাধ্যমে সেটা ‘অফিসিয়াল’ হলো মাত্র। আগেও অন্যান্য নদী থেকে ভারত পানি প্রত্যাহার করেছে। গঙ্গা-তিস্তা ছাড়াও খোয়াই, মনু, উমিয়ামের মতো কিছু নদী। কিন্তু এই প্রথম তারা অন্তত ‘অফিসিয়ালি’ বাংলাদেশের সম্মতি নিচ্ছে। ফেনী নদীর উত্তোলিত পানি সাবরুম শহরে খাবার পানি হিসেবে ব্যবহৃত হবে। সেচ বা বিদ্যুৎ উৎপাদনে নয়। বিশ্বের কোনও দেশই প্রতিবেশীকে অভিন্ন নদী থেকে সুপেয় পানি নিতে বাধা দেবে না।

চতুর্থত, ৪৭-৪৮ কিউসেক প্রবাহের একটি নদীতে দুই কিউসেক উত্তোলন করা হলে জীববৈচিত্র্য ও প্রতিবেশ ব্যবস্থায় খুব বেশি প্রভাব পড়বে না। এই কথা আমি শুধু নই, বাংলাদেশের নদী-পানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন। মনে রাখতে হবে, নদীর পানি বন্টন মানেই কোনো না কোনো পক্ষ পানি প্রত্যাহার করবে। তা না হলে ‘বণ্টন’ কীসের?

পঞ্চমত, আমার বক্তব্য ও অবস্থান যেসব বন্ধু ও বড়ভাই বিকৃতভাবে উপস্থাপন করছেন, এদের বেশিরভাগকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। দুনিয়ায় ফেসবুক আসার আগে থেকে চিনি। একজনের ফেসবুক অ্যাকাউন্টটিও আমার খুলে দেওয়া। তারা তখন কোথায়, কাদের সঙ্গে ‘বিপ্লব’ করতেন, আমার জানা আছে।

ষষ্ঠত, ব্যক্তিগতভাবে আমার কাজের মূল জায়গা অভিন্ন বা আন্তঃসীমান্ত নদী। এ বিষয়ে গত দুই দশক কাজ করছি। বাংলাদেশের এমন কোনও আন্তঃসীমান্ত নদী নেই, যেটা আমি সশরীরে পরিদর্শন করিনি। অভিন্ন নদী যেহেতু ‘স্পর্শকাতর’ বিষয়, যা বলি নিজে বুঝে নিয়ে বলি। অন্যের মুখে তথ্য ও তত্ত্ব ধার করে বলি না।

আই স্ট্যান্ড অন মাই পজিশন। সবাইকে নদীময় শুভেচ্ছা।

আলোকচিত্র: ফেনী নদী, ২০১৬।

নোট: লেখাটি শেখ রোকনের ফেসবুক ওয়াল থেকে নেয়া।

আরো পড়তে পারেন….

সম্পূর্ণ মানবিক কারণে ভারতকে ফেনী নদীর পানি দিচ্ছে বাংলাদেশ

ফেনী নদীর পানি যাবে ভারতে

রিভার বাংলার কিশোরগঞ্জ অফিস উদ্বোধন

সংশ্লিষ্ট বিষয়