নদী রক্ষায় হটলাইন চালু রাখতে হবে : সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

নদী রক্ষায় হটলাইন চালু রাখতে হবে : সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

বিশ্ব নদী দিবস-২০২৩ উপলক্ষে ২৩ সেপ্টেম্বর, শনিবার সকাল দশটায় ঢাকার আগারগাঁও-এ অবস্থিত পর্যটন ভবনে শৈলপ্রপাত অডিটরিয়ামে “নদীর অধিকার” বিষয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত বক্তারা নদীর অধিকার আদায়ে নদীর সামগ্রিক পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষার আহবান জানান।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা)’র উদ্যেগে ইউএসএআইডি’র সহায়তায় অনুষ্ঠানটির যৌথ আয়োজনে ছিলো বাংলাদেশ নাগরিক আন্দোলন, বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশন, রিভার এন্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টার (আরডিআরসি), বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দল, ন্যাচার কনজার্ভেশন ম্যানেজমেন্ট, নদী অধিকার মঞ্চ, রিভার বাংলা, পরিবেশ ও নদী রক্ষা উন্নয়ন ফাউন্ডেশন, সেন্টার ফর ট্যুরিজম স্টাডি, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন, হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরি ও নোঙর ট্রাস্ট।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা। সভাপতিত্ব ও সঞ্চালনা করেন বেলা’র নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

প্রধান অতিথি তাঁর আলোচনায় বলেন—  আমার নানুর বাড়ি রূপগঞ্জ শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে। সেখানে সাঁতার শিখতাম কিন্তু দূষণের কারণে নদী এখন হূমকির মুখে। নদী আবেগের জায়গা, শিরা-উপশিরার মতো। আদালতের রায় অনুযায়ী নদীকে প্রবাহমান করতে হবে। নৌবাহিনী হওয়ায় নদীর প্রতি আমার ভালোবাসা আছে। বর্তমানে শিপবিল্ডিং এর কারণে দূষণ হচ্ছে। দূষণের অন্যতম উৎস ভূমি। জাহাজ থেকে হয় ৫-৭%। দূষণ সীমিত রাখতে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। ঢাকায় ১৩০ টি দূষণের উৎসমুখ চিহ্নিত হয়েছে।

তিনি আরও বলেন—  শিল্পকারখানা গুলো আইন মেনে বর্জ্য নিরসণ করতে হবে। পরিবেশ আন্দোলনকারী সবাইকে সমন্বয় করতে হবে। বিআইডব্লিউটিএ আইনের সহায়তা নিয়ে কাজ করে। বালু উত্তোলনের জায়গাগুলো পরিদর্শন করতে হবে, কতটুকু বালু তুলবে , কোথা থেকে তুলতে নির্দিষ্ট করতে হবে।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা ও সভাপতি বেলা’র নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

সভার সভাপতি সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন—  বাংলাদেশের নদীগুলো অবাদে দখল-দূষণ হচ্ছে। কিন্তু সকল খবর মিডিয়ায় প্রকাশিত হয় না। তাই নদী রক্ষায় হটলাইন রাখা খুবই জরুরি। নদী একটি প্রবাহমান ধারা, বন্যা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। নদী অধিকার মনুষ্য কেন্দ্রিক। নদী এখন দুষনকারী আর দখলদার আর বালুখেকোদের সম্পত্তি হয়ে গেছে। নদী রক্ষা কমিশনকে নদীর তালিকা সংশো্ধন করতে হবে। নদী রক্ষায় হেল্থ কার্ড গঠন করতে হবে যাতে দূষণের অবস্থা পরিলক্ষণ করা যায়। পরিবেশ মন্ত্রণালয় , বিআইডব্লিউটিআই এক সাথে কাজ করে জাহাজে বা পর্যটন এলাকায় প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করতে হবে। বিআইডব্লিউটিএ নাব্যতা, বালুউত্তোলন, প্লাস্টিক দূষণ, ও নদীর স্বাস্থ্য রক্ষায় হেল্থ কার্ড নিয়ে কাজ করার অনুরোধ জানাই।

আরডিআরসি’র চেয়ারম্যান ও নদী গবেষক মোহাম্মদ এজাজ অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন— নদীর মূল মালিক হচ্ছে নদী পাড়ের মানুষ যারা নদীর উপর ‍নির্ভর হয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। নদীর উন্নয়ন ও অধিকারের সাথে নদীপাড়ের জনগোষ্ঠীর অধিকার বিবেচনায় নিতে হবে। বর্তমানে নদী দূষণ বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়েছে। প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের কারণে নদী তার অস্তিত্ব হারাতে বসেছে, নদীর প্রাণবৈচিত্র্য আজ হুমকির সম্মুখীন। বিআইডব্লিউটিএ বর্তমানে নদী রক্ষায় কাজ প্রশংসনীয়। ভবিষ্যতে আরো কাজের প্রত্যাশা করছি।

অনুষ্ঠানের উদ্ভোধনী বক্তব্যে বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়াম্যান মোহাম্মদ মনির হোসেন বলেন- বাংলাদেশের নদীমাতৃক দেশ হলেও নদীর সাথে আমাদের দূরত্ব হয়ে গেছে। নদীকে জানতে হয়ে নদীতে যেতে হবে, ঘুরতে হবে, নদীর সাথে সম্পর্ক তৈরি করতে হতে।

রিভার বাংলার সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ বলেন- নদী সুরক্ষার জন্য ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন করতে হবে। বিরামহীনভাবে লড়াই করতে হবে। আমাদের একসাথ হয়ে কাজ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন— আমার জেলা কিশোরগঞ্জ। নরসুন্দা নদীর তীরে আমাদের বাড়ি। চোখের সামনে নদীটিকে মরতে দেখছি। বর্তমান সরকারের আমলে নদীকে ঘিরে একটি প্রকল্প নেয়া হলো। প্রকল্পের নাম নরসুন্দা লেক সিটি প্রকল্প। কিন্তু এটির নাম কেন নরসুন্দা রিভার সিটি প্রকল্প হলো না?

অনুষ্ঠানে দেশের বর্তমানে সবচেয়ে দূষিত নদী তুরাগ, লবনদহ, হাড়িধোয়া, সোমেশ্বরী ও সুতাং এর উপর আলোকচিত্র প্রদর্শন করেন বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মনির হোসেন।

আরও পড়ুন..  নরসুন্দা নদী তীরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান

সংশ্লিষ্ট বিষয়