নাসার প্রতিবেদন : ৫১ বছরে পদ্মায় বিলীন ৬৬ হাজার হেক্টর জমি

রিভার বাংলা ডট কম >>

পদ্মা নদীর ভাঙনে ১৯৬৭ সাল থেকে ৬৬ হাজার হেক্টর (২৫৬ বর্গমাইল) জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম শহরগুলোর একটি শিকাগোর প্রায় সমান। গত আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র নাসা আর্থ অবজারভেটরি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে বলে খবর প্রকাশ করেছে ইউএনবি।

খবরে জানানো হয়, পদ্মার তীব্র ভাঙনের দুটি প্রধান কারণ রয়েছে। প্রথমত, এই নদী যেন মুক্তভাবে প্রবাহিত হতে পারে তা সুরক্ষার তেমন ব্যবস্থা নেই। দ্বিতীয়ত, নদীর তীরে একটি বড় বালুচর রয়েছে, যা দ্রুতই ভাঙতে পারে। বিজ্ঞানীরা স্যাটেলাইট ছবিতে পদ্মার প্রস্থ, গভীরতা, গঠন এবং সামগ্রিক আকারের পার্থক্য উল্লেখ করে গত ৬৭ বছরে নদীর এই ভাঙন পরিমাপ করেছেন।

নাসার ‘ভাঙনের আকৃতি’ শীর্ষক প্রতিবেদনে স্যাটেলাইট ছবিগুলোর সঙ্গে ১৯৮৮ সাল থেকে পদ্মার আকৃতি এবং প্রস্থের পরিবর্তনগুলো তুলনা করা হয়েছে। ছবিগুলো তোলা হয়েছে নাসার ল্যান্ডস্যাট স্যাটেলাইট থেকে শুস্ক মৌসুম অর্থাৎ জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বহু বছর ধরে গবেষকরা নদীর বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করেছেন। এক তত্ত্বমতে, নদীর নিচে পলি বিভিন্ন উৎস থেকে আসতে পারে। কিছু পলি ১৯৫০ সালে ভূমিকম্পের ফলে ভূমিধসের অবশিষ্টাংশ।

গবেষকরা মনে করেন, বালির মতো এসব ক্ষুদ্র উপাদান নদীর মধ্য দিয়ে অর্ধ শতাব্দী ধরে সৃষ্টি হয়েছে।

৫১ বছরে পদ্মায় বিলীন ৬৬ হাজার হেক্টর জমি

নাসার প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত তিন দশক ধরে পদ্মা তুলনামূলক সংকীর্ণ, সোজাসুজি অবস্থান পরিবর্তন করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে এই নদীর গতিপথ আঁকাবাঁকা হয়ে গেছে। স্যাটেলাইট ছবিতে সবচেয়ে লক্ষণীয় পরিবর্তন হয়েছে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলা অঞ্চলের নিকটবর্তী এলাকাতে, যেখানে সবচেয়ে বেশি ভাঙন হয়েছে।

এর আগে মাদারীপুরের শিবপুর উপজেলায় চর জানাজাতের কাছে বিস্তীর্ণ অঞ্চল পদ্মার ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১৯৯৫-৯৬ সাল থেকে নদীর রেখাচিত্র তীব্রভাবে বেঁকে যায়। বক্ররেখাটি ১৯৯২ সাল থেকে বিকশিত হতে শুরু করে। তবে ২০০২ সাল থেকে এই রেখার পতন শুরু হয় এবং এর পর থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়।

প্রতিবেদনে পদ্মা সেতু নির্মাণের কথা এবং নদীভাঙনের ফলে এ স্থাপনায় কীভাবে প্রভাব ফেলতে পারে, সেদিকটিও উঠে এসেছে। পদ্মা সেতু নির্মাণে নদীর ভাঙন কিছু অঞ্চলে হুমকি সৃষ্টি করতে পারে বলেও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। যদিও অনেক গবেষক ভিন্নমত দিয়েছেন। তারা বলছেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে জমি প্রকৃতপক্ষে স্থির হতে পারে এবং এটি শেষ হওয়ার পর নদীভাঙন হ্রাস পেতে পারে।

প্রতিবেদনের শেষে বলা হয়, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় পদ্মার ভাঙনের হার প্রকৃতপক্ষে হ্রাস পেয়েছে। নদী বক্ররেখার পরিবর্তে জমির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তার মানে এই নয় যে, এলাকাটি ভাঙন থেকে মুক্ত। সূত্র : সমকাল।

রিভার বাংলা ডট কমে আরো পড়ুন..

বিশ্ব নদী দিবস : বাংলাদেশ প্রতিপাদ্য ‘নদী থেকে নির্বিচারে বালু উত্তোলন বন্ধ করো’

ইছামতী নদী : জবরদখলে নদীটির অস্তিত্বই সংকটে পড়েছে

 

সংশ্লিষ্ট বিষয়